চলনবিলে অবাধে চলছে অতিথি পাখি শিকার

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৪৪ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৫০

নাটোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

মৎস্য ও শস্য ভাণ্ডার খ্যাত চলনবিলে নিজেদের আহার যোগাতে এসে প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে শিকারিদের হাতে ধরা পড়ছে অতিথি পাখিসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি। এতে করে একদিকে যেমন বিলের সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে, অন্য দিকে হুমকির মুখে পড়ছে চলনবিলের জীব-বৈচিত্র্য। শিকারিরা প্রতিদিন পাখি শিকার করে বিলাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম্য বাজারে প্রকাশ্যে তা বিক্রয় করছেন। আর যারা পাখি শিকার করছেন, তারা পাখি শিকার যে “আইনত দণ্ডনীয়” তা জেনেও পাখির মাংসের স্বাদ ও টাকার লোভে এই পাখি শিকার করছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানায়।

চলনবিলের কলম ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক হারুন-অর রশিদ জানান, বর্ষার শেষ ভাগে বিলে পানি কমতে শুরু করার কারণে ক্ষেতের জমি জেগে ওঠে। আর জমিতে অল্প পরিমাণে পানি থাকায় দু-একটি মাছও থাকে। আর এই মাছ খাওয়ার লোভে অতিথি ও দেশীয় প্রজাতির পাখিরা বিলে ভিড় জমায়। এই সুযোগেই কিছু লোভী শিকারিরা জাল, দানাদারসহ বিভিন্ন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে। তাছাড়াও বিলের এক শ্রেণির মৎস্যজীবীরা মাছের পাশাপাশি ভোর রাতে কারেন্ট ও তরেজাল দিয়ে বক ও বালিহাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকার করে বিল এলাকায় স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা বাজারে সূর্য ওঠার আগেই বিক্রয় করে থাকে। তবে কিছু পরিবেশবাদী সংগঠনের তৎপরতার কারণে অনেকেই আবার পাখি জবাই করে ব্যাগে অথবা বস্তায় ভরে এসব অতিথি পাখি এলাকার আত্মীয়-স্বজন ও নেতাদের বাসা বাড়িতে পাঠিয়ে বাহবা নেয়। আর এই পাখির মাংসর স্বাদ পেতে অনেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গোপন স্থানে পাখি কেনাবেচা করে থাকে বলে জানান তিনি।

এসব প্রতিটি পাখির জোড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, গত দু’সপ্তাহ ধরে চলনবিলের দুর্গম পল্লী নুরপুর, বিজয়নগর, কৃষ্ণনগর, ডাহিয়া, বিয়াস, বারইহাটি এলাকায় অতিথি পাখি শিকার করে বিক্রয় করতে দেখা গেছে। আর এসব এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সদস্যরা পাখি শিকার বন্ধে প্রচারণা চালালেও দুর্গম এলাকার বিল পাড়ের মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাবে পাখি শিকার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাখি শিকারিরা জানান, তারা কোন পেশাদার পাখি শিকারি না। কেউ শখের বসে আবার কেউ অতিথি পাখির মাংসের স্বাদ ও টাকার লোভে এই পাখি শিকার করে থাকে। পাখি শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ আর এই অতিথি পাখি যে বিলের সৌন্দর্য্য এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, অনেকেই তো পাখি শিকার করে। আমরা করলে দোষের কি?

সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের স্থানীয় মেম্বার জহুরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিন ধরে বিলে ফাঁদ পেতে রাতে পাখি শিকার করে গোপনে বিক্রয় করছে শিকারিরা। তবে শুক্রবার (১২ অক্টোবর) নুরপুর এলাকা থেকে কিছু বক পাখি শিকারিদের কাছ থেকে উদ্ধারও করা হয়েছে। তবে এলাকায় আরো সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান জানান, কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন চলনবিলের পাখি শিকার বন্ধে কাজ করলেও এই ক্ষেত্রে প্রশাসনের তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায় না। আর ২০১২ সালে এই বিষয়ে আইন পাস হলেও পাখি শিকার বন্ধে আইনের প্রয়োগ নেই। নেই সরকারি কোন পদক্ষেপ। তবে সকল জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সমন্বিত পরিকল্পনায় পাখি শিকার বন্ধ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, এই বিষয়ে প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে উপস্থাপন করা দরকার।

সিংড়া উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, চলনবিল তিনটি জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত একটি বৃহৎ এলাকা হওয়ায় পাখি শিকার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

রাজশাহী বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগী বন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, চলনবিলে পাখি শিকারের বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। অবিলম্বে চলনবিলে পাখি শিকার বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১২অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)