বাহরাইনে নিহত: চাঁদপুরে দুইজনের বাড়িতে মাতম

চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর ২০১৮, ২১:৩৯

চলতি মাসের মঙ্গলবার (৯ অক্টোরব) বাহরাইনের মানামা সিটিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ শেষে ধসে পড়া ভবনের দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হান্নান ও হাজীগঞ্জের জাকির প্রধানিয়ার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

শুক্রবার (১২ অক্টোবর) সকালে হাজীগঞ্জের কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের জাকিরের বাড়িতে দেখা যায়, শুন-শান নীরবতা। মাঝে মাঝে কানে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। একই অবস্থা বিরাজ করছে কচুয়ার পরানপুরের জাকির হোসেন প্রধানীয়ার বাড়িতেও।

নিহত জাকির হাজীগঞ্জের কালোচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের বকাউল বাড়ির আব্দুল রশিদ বকাউলের ছেলে। আর হান্নান কচুয়া উপজেলার কড়াইয়া ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামের দক্ষিণ প্রধানিয়া বাড়ির ফজলুল হক প্রধানিয়ার ছেলে।

এদিকে জাকির কিংবা হান্নানের লাশ ঠিক কবে কিভাবে দেশে আনা হবে এ বিষয়ে উভয় পরিবারের কেউ কিছু বলতে পারছে না। তবে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে যদি নিহতের লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়, তাহলে পরিবারগুলো সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে জানান নিহতদের স্বজনরা।

নিহতের স্বজনরা জানান, গত ৯ অক্টোবর বাহরাইনের মানামা সিটির কুমিল্লা হোটেলের বিপরীতে একটি ভবনে থাকতেন কয়েকশ বাংলাদেশি। এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিলেন হাজীগঞ্জের জাকির আর কচুয়ার হান্নান। অন্য সকল নিহত বাংলাদেশির মতো এ দুজনকে ভাগ্য নিয়ে গেছে মৃত্যুর কাছে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জাকির ও তার অপর ভাই জুলহাস থাকতো একই রুমে। ওই দিন সন্ধ্যা রাতে জাকিরকে রুমে রেখে বড় ভাই জুলহাস যায় বাজার করতে আর হান্নানের রুমমেটরা পাশের হোটেলে চা খেতে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব করলে হান্নানের শরীর খারাপ বলে রুমেই থেকে যায়। এর কিছুপরেই ঘটে ওই দুর্ঘটনা।

জাকির প্রায় তিন বছর পূর্বে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন খাটরা বিলওয়াই গ্রামের আবদুল মালেকের মেয়ে লিপিকে বিয়ে করে। তাদের ঘরে কোন সন্তান আসেনি। ৫ নভেম্বর মাসের জাকির দেশে আসার কথা ছিল।

হাজীগঞ্জের জাকিরের বাড়িতে দেখা যায় পরিবারের ছোট ছেলেকে হারিয়ে শোকের মাতম চলছে পুরো পরিবারে। জাকিরের স্ত্রী লিপিকে এখনো পর্যন্ত জানানো হয়নি জাকির মারা গেছে। পরিবার স্ত্রীকে জানিয়েছে জাকির সামান্য আহত হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি আছে।

অপর দিকে কচুয়ার নিহত হান্নান প্রধানিয়ার গ্রামের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবুল হাসেম জানান, ফজলুল হক প্রধানীয়া দুই বিয়ে করেছিল। প্রথম ঘরে চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে হান্নান দ্বিতীয়। তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। খুবই নিরীহ ও গরিব মানুষ। তার তিন ছেলে। বড় ছেলে মাসুম ইসলাম হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের ছাত্র। দ্বিতীয় ছেলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। ছোট ছেলে ৯ম শ্রেণিতে পড়ে।

ওই ইউপ সদস্য আরো জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হান্নান। হান্নানকে হারিয়ে পুরো পরিবারটি পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

হান্নানের বড় ছেলে মাসুম ইসলাম জানান, আমাদের বাবাকে বাংলাদেশে আনতে আমরা একেবারে অক্ষম যদি সরকার একটু সহযোগিতা করে তাহলে আমরা আমাদের বাবার লাশটি দেখতে পারব। তিনি আরো বলেন, আমার বাবার সাথে আমাদের এলাকার তাজুল ইসলাম নামে আমার এক নানা থাকে তার মাধ্যমে আমরা নিহতের খবর জানতে পেরেছি। আমার বাবা বছরখানেক পূর্বে দেশে এসেছিল। সে ৫ বছর যাবত বাহরাইনে আছে।

হাজীগঞ্জের জাকিরের বাবা বয়োবৃদ্ধ আব্দুল বাসার জানান, ৬ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট জাকির। প্রায় ১০ বছর হতে চললো ছেলে বিদেশ করছে। প্রায় ৮ বছর পূর্বে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ধেররা গ্রামের আঃ মালেকের মেয়ে লিপির সাথে বিয়ে হয়। এর মধ্যে বছর তিনেক পূর্বে সে দেশে এসেছে। আসছে নভেম্বরে সে দেশে আশার কথা ছিল।

এদিকে ছেলের মৃত্যুর খবর বউকে জানানো হয়নি। আমার আরেক ছেলে জুলহাস জাকিরের সাথে একই রুমে ছিল। জুলহাস বাজার করতে যাওয়ার পরেই এই ঘটনা ঘটে। জুলহাস ইতিমধ্যে জাকিরের কাজগপত্র দূতাবাসে জমা দিয়েছে। কিন্তু লাশ আমরা কবে পাব বা আদৌ পাব কিনা তার কিছুই আমরা বলতে পারছি না।

হাজীগঞ্জ উপজেলার কালোচোঁ দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষে লাশ দেশে আনার কোন সুযোগই নেই। সরকার লাশ আনার ব্যবস্থা করলে পরিবারটি অন্তত সন্তানের লাশ দেখতে পারত, আর তার লাশটি বাংলাদেশের মাটিতে তথা নিহতের এলাকায় দাফন করা সম্ভব হতো।

(ঢাকাটাইমস/১২অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :