যুক্তফ্রন্ট কি তবে ভেঙে গেল?

প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:১০ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:১৫

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস

চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে যুক্তফ্রন্টের দু্ই শরিক জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য যোগ দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তৃতীয় শক্তি হওয়ার বাসনায় গঠন করা যুক্তফ্রন্টের ভবিষ্যত তবে কি, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এরই মধ্যে।

তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণা দিয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এবং আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ মিলে গঠন করা হয় যুক্তফ্রন্ট।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়, দুই দলের বাইরে তৃতীয় শক্তি হবে তারা। অবশ্য এই জোটে থাকার কথা ছিল ড. কামাল হোসেনেরও। তবে তিনি না আসায় জোট ছেড়ে দেন কাদের সিদ্দিকী।

তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই তৃতীয় শক্তি হওয়ার স্বপ্ন ভুলে বিএনপির সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে যুক্তফ্রন্টের, বিশেষ করে মান্নার।

এর মধ্যে অবশ্য শর্ত হিসেবে উঠে আসে জামায়াত প্রসঙ্গ। জামায়াত থাকলে ঐক্য নয়- এটি যুক্তফ্রন্টের পক্ষে থেকে জানানো হয়।

কিন্তু তৃতীয় শক্তি হতে চাওয়া এই ফ্রন্টের মধ্যেও যে বিভেদ ছিল, সেটি স্পষ্ট হয়ে গেছে ১৩ অক্টোবর। চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে জোটে গেছে জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য।

অন্যদিকে বদরুদ্দোজা চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, এই ঐক্য পরোক্ষভাবে হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীর সঙ্গে। আর এটা হয়েছে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে। তারা যে শর্ত দিয়েছিল, তা পূরণ হয়নি, ফলে ভবিষ্যতেও এই ঐক্যের আলোচনায় থাকবেন না তারা। 

তবে কি এক ঐক্য গড়তে গিয়ে তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণা দেয়া যুক্তফ্রন্টই ভেঙে গেল?

বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরী অবশ্য বলছেন ভাঙেনি। যুক্তি হিসেবে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যদি ২০ দলে জামায়াতকে রেখে, ঐক্যফ্রন্টে আসতে পারে, তাহলে ঐক্যফ্রন্টে জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য রেখে যুক্তফ্রন্ট থাকতে পারবে না কেন?’

কিন্তু চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে দুই শরিক যদি অন্য কোথাও চলে যায়, সেটা তো জোট ভাঙাই হলো- এমন মন্তব্যের জবাবে মাহী বলেন, ‘আমরা মনে  করছি না, ভেঙে যায়নি। আমরা মনে করি তারা ফিরে আসবে। দেখা যাক, এখনও তো সময় বাকি আছে।’

এ নিয়ে কি তাদের সঙ্গে (যু্ক্তফ্রন্টের দুই শরিক) কথা হচ্ছে?- এমন প্রশ্নে মাহী বলেন, ‘কথাহচ্ছে, কথা হবে। ওনারা আসবেন, কথা বলবেন। রাজনীতি এত সহজ বিষয় না।’

আপনারা তৃতীয় শক্তিই যদি হতে চাইবেন, তাহলে দুই দলের একটি বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গড়তে যাওয়াই তো যুক্তফ্রন্টের নীতির বিরোধী- এমন মন্তব্য ছিল মাহীর প্রতি। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি যদি ক্ষমতার ভারসাম্যে তারা রাজি হয়, আমরা বলেছি তারা যদি জামায়াত ছাড়তে রাজি হয়, তবে বিএনপি আমাদের সঙ্গে আসতে পারে। এতে আমাদের তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না।’

যুক্তফ্রন্ট থাকা না থাকার প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের যুক্তফ্রন্ট ভাঙেনি, এখনো আছে। আলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আপাতত এর বেশি বলা যাবে না।’

মাহী ও মান্না যুক্তফ্রন্ট রয়ে যাওয়ার দাবি করলেও তা মনে করেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গোবিন্দ চক্রবর্তী। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘দুই শরিক চলে গেলে তো আর যুক্তফ্রন্ট থাকে না। এখন সেখানে অনলি বিকল্প ধারা আছে।’

এই শিক্ষক এও মনে করেন কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেয়া হলেও এখনও পুরোপুরি ঐক্য হয়েছে বলে আমি মনে করি না। আমি মনে করি, সরকার চায় সবাই নির্বাচনে আসুক। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হোক। কিন্তু যারা স্বাধীনতাবিরোধী তারা বাদ দিয়ে আসুক। এখন বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট আছে আর সেই বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের ঘোষণা এসেছে। কাজেই এগুলো নিয়ে সামনে আরও নানা ঘটনা ঘটবে।’

ঢাকাটাইমস/১৪অক্টোবর/জিএম/ডব্লিউবি