বি. চৌধুরী বিভ্রান্তিতে: মান্না

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:১৪ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতকে রাখা না রাখা নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার রাজনৈতিক দল বিকল্পধারা বিভ্রান্তিতে রয়েছেন দাবি করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘আমরা তো জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করছি না’।

বিকল্পধারা না এলেও তাদের ঐক্য প্রক্রিয়া সফল বলেও দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক যুক্তফ্রন্টের এই নেতার।

রবিবার রাতে বেসরকারি চ্যানেল ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের টকশো’তে এসব কথা বলেন তিনি। টকশো’তে আরও অংশ নেন জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন।

'পূর্বনির্ধারিত বৈঠকের স্থান থাকলেও কামাল হোসেনের বাসায় বি. চৌধুরী গিয়েও তাকে পেলেন না। কামালের অফিসে আপনারা বৈঠক করলেন, এরপর ঘোষণাপত্রও পাঠ করলেন। অন্যদিকে মাহি বি. চৌধুরীর সঙ্গে আপনার ফোনালাপে আপনি ভুল বোঝাবুঝির কথা বললেন। ঘোষণাপত্রে বললেন, সফল হয়েছে ঐক্য প্রক্রিয়া আর মাহি বি. চৌধুরীর কাছে বললেন, আরও ভালো করে ভাবা উচিৎ ছিল। একই সাথে বিকল্পধারাকে ইচ্ছে করে বাইরে রাখা হলো কিনা?- উপস্থাপকের এমন কথার উত্তরে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বিকল্পধারাকে ইচ্ছে করে বাইরে রাখার কোনো বিষয় নয়। বিষয়টা হলো যে কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরীর বৈঠকটা কিন্তু নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। আর সেটা হয়নি বলে বি. চৌধুরী খুবই কষ্ট পেয়েছেন। তার কথার মধ্যে এটাই উঠে এসেছে। আমি ওই কথাটাই তুলে ধরে বলেছি যে, নিশ্চয়ই বড় কোনো ভুল কোথাও হয়েছে। এবং যদি আগে থেকে সতর্ক থাকা যেতো, তাহলে এই ভুলটাকে সংশোধন করা যেতো।’

‘আর সফল তো হয়েছেই বলবো। কেননা, যাত্রাটা শুরু হয়েছে। বি. চৌধুরী আমাদের এই ঐক্য প্রক্রিয়ার বাইরেই চলে যাবেন, তাতো কোনো কথা নয়। তিনি যে দুইটি শর্ত দিয়েছেন, তার মধ্যে একটা তো যেমন ক্ষমতার ভারসাম্য আনা। এটা আমাদের লক্ষ্যের মধ্যে ইনক্লুড করেছি।’

মান্না বলেন, ‘আর জামায়াত সম্পর্কে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, আমি বলেছি, তিনি এক ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। কারণ, আমরা তো জামায়াতের সাথে ঐক্য করছি না। আমরা বারে বারে বলছি যে, আমাদের ঐক্য কোনো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সাথে করবো না। যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, তখন তো বিএনপির জন্মই নেয়নি। তারা মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করার প্রশ্নই আসে না। তাদের মধ্যেও যথেষ্ট সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা আছেন।’

বিএনপি কি জাতীয় ঐক্যকে এমন কোনো কথা দিয়েছে যে, তাদের নির্বাচনে জামায়াতকে রাখবে না- উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এই ঐক্যটা আসলে আন্দোলনের জন্য। আমরা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। আমরা যে পাঁচটি দাবি দিয়েছি, সে দাবিগুলোর জন্য যারা লড়াই করবেন, শুধু কথা থাকে, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো শক্তি এখানে থাকবে না। এরপরে যদি নির্বাচনে প্রশ্ন আসে, তখনই এই প্রশ্নটা আসে এবং তখনই আমরা এই কথাটাই বলছি যে, জামায়াতকে নিয়ে আমরা কোনো নির্বাচন করবো না।’

‘এক্ষেত্রে প্রশ্নটা তোলা কোনো রাজনৈতিকভাবে ফলপ্রসু নয়। কারণ, জামায়াতের তো কোনো রাজনৈতিক নিবন্ধনই নেই। তাদের প্রতীক নিয়ে তো তারা নির্বাচন করছে না। প্রতীক ছাড়া তারা আ.লীগ, বিএনপি বা যেকোনো দলের হয়ে বা স্বতন্ত্র নির্বাচনও করতে পারে। আর এটাকে একটা ইস্যু করে সবচেয়ে বড় কাজ স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার বৃহত্তর ঐক্য গঠনকে বাধাগ্রস্ত করবো কেন?’

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর রাজনৈতিক দল বিকল্পধারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে শুরু থেকে থাকলেও আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের দিন দলটিকে বাদ দিয়েই জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠে। জাতীয় ঐক্য থেকে বিকল্পধারা বাদ পড়াতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোনোভাবে লাভবান হয়েছে কিনা- উপস্থাপক এমন প্রশ্ন রাখেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপের কাছে। জবাবে আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘আসলে কে থাকল, কে আসলো এ নিয়ে আমাদের কোনো গাত্রদাহ নেই। যারা থাকতে চেয়েছিল থাকতে পারেনি এবং তারা রাখেনি। বি. চৌধুরী ও তার ছেলে মাহি বি. চৌধুরীর যে বক্তব্য এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার সাথে টেলিফোনের যে আলোচনা, তাতে মনে হচ্ছিল, হয়তো কেউ থাকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু টেকনিক্যাল কারণে থাকতে পারেননি। আবার হয়েতো তারা থাকবেন। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা নেই।’

আপনাদের কোনো ইশারা ছিল কিনা- উপস্থাপক এমন প্রশ্ন রাখলে ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘এখানে আমাদের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। কারণ, আমরা এমন একটি রাজনৈতিক দল, যেখানে ভাঙা-গড়ার খেলায় কাউকে সাহায্য করি না আর কাউকে ভাঙা-গড়ার খেলা খেলতেও সহায়তা দেই না।’

বি. চৌধুরী না থাকায় ক্ষমতাসীন দল খুশি হয়েছে রাজনৈতিকভাবে এমন খবর চাউর হয়েছে। এর জবাবে চিফ হুইপ বলেন, বি. চৌধুরী স্ট্যান্ড নিয়েছেন যে, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বাইরে তিনি যাবেন না। এবং তিনি বারবার বলেছেন যে, জামায়াত যেহেতু স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী তাদের সাথে বিএনপির যখন ঐক্য, সেই ঐক্যের সাথে আর যাই হোক আমি থাকবো না। তবে এর আগেও তিনি এদের সহায়তা নিয়েছেন, যখন বিএনপিতে তিনি ছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জামায়াতকে কিন্তু পুনর্বাসিত করা হয়েছে রাজনীতিতে। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এ ক্ষেত্রে তখনকার প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট হয়তো একটু ভিন্ন। আর হয়তো সে কারণেই তিনি এমন অবস্থান নিয়েছেন। রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকেই চাওয়া হচ্ছিল যে, বি. চৌধুরীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাইরে রাখা হোক। রাজনীতিতে চাউর হওয়া এমন তথ্যের সত্যতা কতটুকু- উপস্থাপক এমনটি জানতে চান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম, তিনি বাইরে থাকুক- এমনটা আমি শুনিনি, আপনার কাছ থেকে এখন শুনলাম। আমরা সব সময় চেয়েছি যে, বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া হোক। নিরপেক্ষ নির্বাচনে যারা বিশ্বাসী, তারা সবাই ওই ঐক্যে অংশগ্রহণ করুক- এটাও আমরা চেয়েছি। যারা মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেন, আমরা এ সমস্ত লোকদের নিয়েইতো ঐক্য আগে থেকেই চেয়েছিলাম। আমরা তাকে বাইরে রাখার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে স্বাধীনতাবিরোধী দলকে বাইরে রাখার শর্তে অটল ছিল বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা। কিন্তু এ শর্তও না মেনে জাতীয় ঐক্যে উল্টো বিকল্পধারাকেই বাইরে রেখে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়।

বিকল্পধারা যে শর্তটি দিয়েছিল, সে শর্তটি কি আসলে পালন করা বা মেনে খুব কঠিন ছিল? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই প্রতিনিধি বলেন, এই শর্তটা তিনি কোথা থেকে কিভাবে দিলেন, এটা মাহমুদুর রহমান মান্না বলতে পারবেন। বি. চৌধুরী তো এক সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন, বিএনপির সাথে ছিলেন। তখনও তো এই জামায়াত ছিল। তখন তো তিনি এটা নিয়ে কোনো কথা বলেন নি।’

এ নিয়ে তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। উপস্থাপকের এমন মন্তব্যের জবাবে জয়নাল আ‌‌‌বেদীন বলেন, ‘জাতির কাছে যদি ক্ষমাই চাইতেন, তাহলে তো তার রাজনীতিই ছেড়ে দেয়া উচিত। যে আমি আর রাজনীতি করবো না, ক্ষমা চেয়ে রাজনীতি থেকে বিদায় নিলাম। এটা তো কথা হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াত তো এই ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে নেই। জামায়াত বিএনপির সাথে একটি ঐক্য করেছিল। এখন তো বিএনপি সেই জামায়াতকে নিয়ে এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসেনি। বিএনপি তার নিজস্ব সত্ত্বা নিয়ে এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় এসেছে। সেজন্য এখানে জামায়াত থাকলো কি থাকলো না- এটা তো বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, দেশের এই ক্রান্তিকালে কারা এই গণতন্ত্রের উত্তরণ করতে চায়, কারা নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় এবং কারা চায় যে, এখানে সুষ্ঠু ভোট হোক।’

(ঢাকাটাইমস/১৫অক্টোবর/এএকে/এআর)