ভুল তথ্য দিলে মিডিয়ার লাইসেন্স বাতিল

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২৪ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ২১:১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বেতার, টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ভুল তথ্য দিলে এবং সরকারি নির্দেশ অমান্য ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো কাজ করলে লাইসেন্স বাতিলের বিধান রেখে সম্প্রচার আইন-২০১৮ খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এছাড়া ‘গণমাধ্যম কর্মী চাকরির শর্তাবলী আইন-২০১৮’ খসড়ারও নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সোমবার সকালে সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই আইন দুটির খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রস্তাবিত আইনে সাত সদস্যের একটি সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে, যার সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হবে সার্চ কমিটির মাধ্যমে। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ দেবেন।

দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন আইনটি করা হচ্ছে। সম্প্রচার আইনে নতুন লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব থাকবে কমিশনের। আইনে ২৪টি কাজকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে।’

সচিব বলেন, ‘এই আইনে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশনের কাজের মধ্যে রয়েছে, সম্প্রচার মাধ্যমকে শক্তিশালী ও গতিশীল করা এবং সম্প্রচার মাধ্যমের মানোন্নয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা, সম্প্রচার মাধ্যমে মতপ্রকাশ ও সম্প্রচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি ও মানদণ্ড অনুসরণ, সম্প্রচারের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রতিযোগিতা, নতুন লাইসেন্স বা নিবন্ধন প্রদানের জন্য নির্দেশনা প্রদান।’

সচিব আরও বলেন, ‘ভুল তথ্য দিলে এবং সরকারি নির্দেশ অমান্য ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো কাজ করলে বাতিল করা হতে পারে লাইসেন্স। পাশাপাশি তিন বছরের দণ্ডেরও বিধান রাখা হয়েছে সম্প্রচার আইনে।’

খসড়া আইনে সম্প্রচার কমিশন গঠনের পাশাপাশি কমিশনারদের নিয়োগ, যোগ্যতা-অযোগ্যতা, মেয়াদ, পদত্যাগ, অপসারণ, পদপর্যাদা, পারিশ্রমিক ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া আছে উল্লেখ করে শফিউল আলম বলেন, ‘এ আইনে অনেকগুলো সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অনলাইন গণমাধ্যম, কমিশনের সংজ্ঞা এবং সম্প্রচার বলতে কী বোঝায় তা ধারা ২ এর ১৭ তে বলা হয়েছে। কমিশন গঠনের প্রস্তাবটি এ আইনের ৬ ধারায় দেওয়া আছে। কমিশন হবে সাত সদস্যের। আইনের ৭ ধারায় কমিশন গঠনের জন্য একটি সার্চ কমিটির প্রস্তাব করা হয়েছে। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এ সার্চ কমিটি কমিশনের সদস্য কারা হবে তা লিখিত আকারে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্র্রপতি তাদের মধ্যে থেকে একজন চেয়ারম্যানসহ সাত সদস্যের একটি কমিশন তৈরি করে দেবেন। তাদের মধ্যে একজন নারী কমিশনার থাকবেন।’

তিনি জানান, আইনের ৮ ধারায় কমিশনের সদস্যদের যোগ্যতার বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। তাদের যোগ্যতার মধ্যে রয়েছে, প্রথমত তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। কোনো প্রকার জনপ্রতিনিধি এ কমিশনের সদস্য হবেন না। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণখেলাপী ঘোষিত হলে তিনি এ কমিশনের সদস্য হবেন না। দেউলিয়া বা স্খলনজনিত কোনো দায়ে দায়ী হলে তিনি এ কমিশনের সদস্য হবে না। আদালত কর্তৃক দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে কেউ এ কমিশনের সদস্য হতে পারবে না। প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে থাকেন তাহলে তিনিও এ কমিশনের সদস্য হবেন না। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যবসা বা কোন প্রকার সম্প্রচার সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িত থাকেন তাহলে তিনি এ কমিশনের সদস্য হতে পারবেন না। 

তিনি জানান, কমিশনের সদস্য হবার ক্ষেত্রে যোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। চেয়ারম্যান যিনি হবেন তিনিও একই যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে। পদের মেয়াদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে তাদের নিয়োগের তারিখ হতে পাঁচ বছর বা তার নিজের ৭০ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন।

শফিউল আলম জানান, এ আইনের ১০ ধারায় কমিশনারদের অপসারণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তাদের শারীরিক বা মানসিকভাবে দায়িত্ব পালনে অসামর্থ্য যদি হন, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো কাজে লিপ্ত থাকেন তাহলে তাকে কমিশনার পদ থেকে অপসারণ করা যাবে। কমিশনের সভার ক্ষেত্রে তিনজন উপস্থিত হলে কোরাম হবে।

অনলাইন গণমাধ্যম বলতে বাংলাদেশের ভূখন্ণ্ড হইতে হোস্টিংকৃত বাংলা, ইংরেজি বা অন্য কোনও ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেটভিত্তিক রেডিও বা টেলিভিশন সংবাদপত্র বা ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যম সম্প্রচারের উদ্যেশে স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি ও লেকা বা মাল্টিমিডিয়ার অন্যকোনো রূপে উপস্থাপিত তথ্য উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী বাংলাদেশি নাগরিক বা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। 

আইনে বলা হয়েছে বিদ্যমান যেসব গণমাধ্যম চালু রয়েছে তারা এ আইনের আওতায় পড়বে না।

ঢাকাটাইমস/১৫অক্টোবর/এমএম/ডিএম