খুরা রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার বাংলাদেশি গবেষকদের

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ০০:২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গবাদিপশুর খুরা রোগ প্রতিরোধের জন্য দেশে সঞ্চরণশীল ভাইরাসের একটি কার্যকরী টিকা উদ্ভাবন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একদল গবেষক।

মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সংবাদ সম্মেলনে গবেষক দলের প্রধান আনোয়ার হোসেন টিকা উদ্ভাবন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

এ উদ্ভাবনের পেটেন্টের জন্য ইতিমধ্যে আবেদন করা হয়েছে।

ক্ষুরা রোগ গবাদিপ্রাণির একটি অন্যতম প্রধান সংক্রামক রোগ যা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, শুকর সহ অন্যান্য প্রাণিকে আক্রমন করে। রোগটি Picornavirdae পরিবারভুক্ত Aphthovirus গণের ক্ষুরা রোগ ভাইরাস (FMD Virus) দ্বারা সংঘঠিত হয়। ক্ষুরা রোগ বাংলাদেশে দেশব্যাপী বিরাজমান এবং ক্ষুরা রোগের ভাইরাসের ৭টি সেরোটাইপের মধ্যে ৩টি সেরোটাইপ যথা O, A এবং Asia1 এ দেশে সঞ্চরণশীল আছে। ক্ষুরা রোগের কারণে বাংলাদেশে বাৎসরিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে সঞ্চরণশীল ভাইরাস দিয়ে টিকা উদ্ভাবন প্রাণিসম্পদ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক বলে উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, এ গবেষণার জন্য অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগকে দুটি উপপ্রকল্পের আওতায় মোট ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১৭ জন গবেষক এই উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, খুরা রোগ বাংলাদেশে গবাদি প্রাণীর একটি অন্যতম প্রধান সংক্রামক ব্যাধি। এই রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত টিকা প্রধানত আমদানি করা হয়। এসব টিকা উৎপাদনে যে ভাইরাস ব্যবহৃত হয়, তা এ দেশে বিদ্যমান ভাইরাস থেকে ভিন্ন কিংবা টিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ এন্টিজেন থাকে না। এর ফলে প্রায়ই এগুলো কাজ করে না। উদ্ভাবিত নতুন টিকা বাংলাদেশে বিদ্যমান খুরা রোগের তিন ধরনের ভাইরাসের সব ধরনের সংক্রমণ থেকে গবাদিপশুকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে। এর দাম বাজারে প্রচলিত ভ্যাকসিনের চেয়েও অনেক কম হবে। খামারি পর্যায়ে প্রতিটি টিকা ৬০-৭০ টাকার মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, গিনিপিগে উদ্ভাবিত টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা যায় এ টিকা প্রাণীতে প্রটেক্টিভ লেভেলের চেয়েও তাৎপর্যপূণভাবে বেশী এন্টিবডি উৎপাদনে ও ভাইরাসের আক্রমণ অত্যন্ত সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম। তাছাড়া ‘ভাইরাস নিউট্রালাইজেশন’ পরীক্ষার ফলাফলে প্রতীয়মান হয় নতুন উদ্ভাবিত টিকা বাংলাদেশে সমসাময়িক সঞ্চরণশীল সকল ক্ষুরা রোগের ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে।

নিষ্ক্রিয় ট্রাইভ্যালেন্ট ক্ষুরা রোগের টিকার পাশাপাশি রিভার্স জেনেটিকস এর মাধ্যমে একটি অনন্য পেপটাইড টিকা উদ্ভাবন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে আছে যা ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশে সঞ্চরণশীল ভাইরাসের বিস্তারিত বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমাদের উদ্ভাবিত টিকা ক্ষুরা রোগের টেকসই প্রতিরোধের মাধ্যমে দেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে গবেষকরা আশা করছেন।

ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/ইএস