যার জনপ্রিয়তা ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি কাঁটাতারের বেড়া

বিনোদন ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০০:১৩ | প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৩৮

সবাইকে কাঁদিয়ে ওপারে পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত ব্রান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু। তার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি অঙ্গনে। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন ব্লগার, সঙ্গীতশিল্পী ও ভারতের সংস্কৃতি কর্মী

শবনম সুরিতা। বর্তমানে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণএশীয় সংস্কৃতি ও রাজনীতি বিষয়ক গবেষক হিসেবে কাজ করছেন শবনম। ডয়চে ভেলে থেকে তার ব্লগটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

চলে গেলেন বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যান্ডশিল্পী ও গিটারবাদক আইয়ুব বাচ্চু৷ ঘুম ভেঙেই প্রিয় সংগীত শিল্পীর মৃত্যুসংবাদ অনেক পুরোনো স্মৃতি উসকে দিলো৷

সালটা ছিল ২০১৩৷ আমরা তখন সবে থার্ড ইয়ারে উঠেছি৷ ডানা গজিয়েছে সদ্য সদ্য৷ পড়াশোনা ফেলে দিন-রাত গলা ছেড়ে গান গাওয়াই তখন আমাদের কাজ৷ এমন সময় আমাদের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেস্টে এলো বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যান্ড ‘এলআরবি’৷ ততদিনে ‘এলআরবি’ নামটার সাথে আমাদের রোজকারের ওঠাবসা৷ নতুন প্রেমে ধাক্কা খেলে সারা বিশ্ববিদ্যালয় যেন একসাথে গেয়ে ওঠে, ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’৷ সবার কল্পনায় প্রেমে পড়লে ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজে টুটুল ভাইয়ের কী-বোর্ড, সাথে আইয়ুব বাচ্চুর জাদুকরী ‘রুপালি গিটার’৷

শুধু শহুরে কলেজ-ক্যাম্পাসে নয়, ভারতীয় বাংলাভাষী মফস্বলের শ্রোতার কাছেও সহজ কথায় বাঁধা তাঁর গানের, বাজনার গ্রহণযোগ্যতা ছিল তারই সমসাময়িক অনেক ভারতীয় শিল্পীর ঈর্ষার কারণ৷ ‘এলআরবি’র কন্ঠ ও গিটারশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয়তা ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি কাঁটাতারের বেড়া৷

আসামের ছোট্ট শহর, শিলচরে বেড়ে ওঠার কারণে কলকাতার জনপ্রিয় গান আমাদের কাছে খানিক দেরিতেই এসে পৌঁছত৷ ওপার বাংলার কিছু হাতে গোনা লোকশিল্পী ছাড়া সেভাবে বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতকে বড় হওয়ার সময় কাছে পাইনি৷ পরে কলকাতায় গিয়ে সেই বাধাটুকু আর ছিল না৷ আস্তে আস্তে গানের জগতের সাথে সখ্য আরো গভীর হয়ে উঠলে কাছ থেকে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে অনুভব করার, বিভিন্ন শিল্পীদের সাথে পরিচয় করার সুযোগ পাই৷

ছাত্রজীবনে স্বচক্ষে দেখেছি কীভাবে আইয়ুব বাচ্চু ‘ভিনদেশী’ শিল্পী হয়েও কত সহজে আপন করে নিতেন এপার বাংলার ব্যান্ডের সদস্যদের৷ তাদের অনেকের কাছেই তিনি তাই বড় শ্রদ্ধার, ভালোবাসার ‘বাচ্চু ভাই’৷

‘এই রুপালি গিটার ফেলে একদিন চলে যাব দূরে বহুদূরে, সেদিন চোখে অশ্রু তুমি রেখো গোপন করে’ তাঁর এই গানটি যেন আজ এপিটাফ৷ সেই আইয়ুব বাচ্চু’র মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই শোকস্তব্ধ গোটা বাংলাদেশের সাথে ভারতেরও বাংলা সংগীত জগৎ৷ সোশ্যাল মিডিয়াতে তাকে স্মরণ করছেন পুরোনো থেকে নতুন, সব প্রজন্মের শিল্পীরা৷

জনপ্রিয় ব্যান্ড ফসিলসের শিল্পী রূপম ইসলাম ফেসবুকে দিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চুর সাথে তার কাটানো সময়ের একটি ভিডিও৷ দুঃখের সাথে জানিয়েছেন দুজনের সাংগীতিক পরিকল্পনার কথা, যা রয়ে গেলো অপূর্ণই৷

দুই বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী, সাহানা বাজপেয়ী লিখেছেন, ‘আমাদের দিনগুলি রঙিন করে তোলার জন্য ধন্যবাদ, বাচ্চু ভাই!’ ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়িকা ইমন চক্রবর্তীও এই কিংবদন্তি শিল্পীকে তার শ্রদ্ধা জানিয়েছেন৷

এ বছরই কয়েক মাস আগে কলকাতায় এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু৷ শহরের বিখ্যাত পাব ‘সামপ্লেস এল্স’ এ তাঁকে হঠাৎ দেখা যায়৷ এই শহরেরই আরেক তরুণ গিটার বাদক সানি ভট্টাচার্য তখন মঞ্চে৷ মঞ্চে উঠে তার কাঁধে হাত রাখলেন সানির আজীবনের অনুপ্রেরণা আইয়ুব বাচ্চু৷

আজ শোকের এই দিনে সেদিনে ফিরে গিয়ে সানি বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে যার গান শুনেছি, বাজিয়েছি, সেই মানুষটা সেদিন আমার পাশে৷ অন্য অনুভূতি! আমার আইয়ুব বাচ্চুর সাথে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ‘সেই তুমি’ বাজানোর স্বপ্ন সেদিন পূরণ হয়েছিল৷’’

আরেক তরুণ কন্ঠশিল্পী তিমির জানালেন, ‘বাচ্চু ভাই আমাদের প্রজন্মকে অসম্ভব স্নেহ করতেন৷ দেশ-কাল-রাষ্ট্রের উপরে থাকা এই মানুষটি চলে যাওয়ায় আমাদের দায়িত্ব কয়েকগুণ বেড়ে গেল৷ তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত মানুষ৷’

শিল্পীমহলে ইতিমধ্যেই শোনা যাচ্ছে খবর৷ অতি প্রিয় ‘বাচ্চু ভাই’ এর স্মৃতিতে কলকাতার বিখ্যাত ম্যাডক্স স্কোয়ারে শীঘ্রই বসতে চলেছে বাংলা গানের আসর৷ চিরবিনয়ী এই মানুষটির চলে যাওয়া আসলে একটি যুগের, প্রতিষ্ঠানের অবসান৷ দেখনদারী ও প্রতিযোগিতায় ঘেরা বর্তমান সংগীত জগতে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী উদাহরণ৷ দেশে হোক বা বিদেশে, নতুন শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর মতো একজন অভিভাবক হারালো আজ দুই বাংলার সংগীত জগত৷

ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :