নিষেধাজ্ঞার সময়েই রাজশাহীর পদ্মায় ইলিশ ধরার হিড়িক

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:১১

রাজশাহী ব্যুরো

সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজশাহীর পদ্মায় অবাধে চলছে ইলিশ শিকার। ইলিশ শিকার বন্ধে দিনের বেলায় অভিযান চলায় সন্ধ্যা থেকে নদীতে নামছেন জেলেরা। রাত থেকে ভোর অবধি চলছে ইলিশ শিকার। আবার অভিযান শেষের পরপরই নদীতে নামছেন জেলেরা। ইলিশের বিচরণক্ষেত্র জেলার পবা, গোদাগাড়ী, চারঘাট ও বাঘার বহু জেলা নদীতে নামছেন ইলিশ শিকারে। মাঝে মধ্যে অভিযানে দু-একটি দলকে প্রশাসন ধরলেও বাকিরা থেকে যাচ্ছেন আড়ালেই।

মৎস দপ্তর জেলেদের ইলিশ শিকার থেকে বিরত রেখেছেন বলে  দাবি করলেও থেমে নেই ইলিশ শিকার। আবার জেলেদের একটি অংশকে সরকারি চাল সহায়তা দেয়া হলেও কেউ কেউ পাননি বলে জানা গেছে। যারা পেয়েছেন তাও চাহিদার তুলেনায় কম বলে জানা গেছে।

গত সোমবার দিনভর জেলার পবা, বাঘা ও চারঘাটে অভিযান চালানো হয়েছে। এর মধ্যে পবার হরিপুর এলাকার পদ্মা থেকে ইলিশ শিকারের সময় ১০ জেলেকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৪ হাজার মিটার কারেন্ট জাল। অভিযানে ইলিশ পাওয়া যায় ১৫ কেজি।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুল ইসলাম এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে প্রত্যেক জেলেকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

আদালতের নির্দেশে পুড়িয়ে ফেলা হয় জব্দকৃত কারেন্ট জাল। চারঘাট থেকেও ১৪ হাজার মিটার জাল জব্দ করে পোড়ানো হয়।

জেলা মৎস দপ্তর জানিয়েছে, ইলিশের বিচরণক্ষেত্র রাজশাহীর এই চার উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৭ হাজার ৫৪৮ জন। এরমধ্যে পবায় ২ হাজার ৬৫৮ জন, গোদাগাড়ীতে ২ হাজার ৪৩৪ জন, চারঘাটে এক হাজার ১৪৯ জন এবং বাঘায় এক হাজার ৩৬০জন।

এদের মধ্যে পবায় ৬৩১ জন, গোদাগাড়ীতে ৫৭৯ জন, চারঘাটে ২৭৯ জন এবং বাঘায় ৩১১ জন ২০ কেজি করে সরকারের চাল সহায়তা পেয়েছেন। জেলেরা ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে নদীতে নামবেন না বলে অঙ্গিকার করলেও তা মানেনি।

জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন মাছ ধরা থেকে জেলেদের বিরত রাখতে প্রত্যেককে চাল সহায়তার আওতায় নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিলো। কিন্তু বরাদ্দ মিলেছে সামান্যই। তারপরও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জেলেদের ইলিশ আহরণ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ৭ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত এই ৯ দিনে ব্যাপক তৎরপতা চালিয়েছে মৎস দপ্তর। এর মধ্যে ৯৯ অভিযানসহ সাতটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। নিয়মিত মামলা হয়েছে একটি। এসময় এক জেলেকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে ৫ হাজার ১৭০ মিটার জাল।

এ কয়েকদিনে ১৪ বার মৎস অবতরণ কেন্দ্রে, ৬২ বার মাছ ঘাটে, ৫০১ বার মাছের আড়তে এবং ৪০৫ বার হাটে-বাজারে গেছে মৎস দপ্তরের নজরদারিতে থাকা দল।

এ সময় জেলার বাঘায় ২৭ কেজি এবং গোদাগাড়ীতে ৫ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়। পরে সেগুলো নিকটস্থ এতিমখানায় দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পুরো সময় ধরেই এই অভিযান চালবে বলে জানিয়েছে মৎস অধিদপ্তর।

স্থানীয়রা জানায়, এখন ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ ধরা পড়ছে রাজশাহীর পবা, গোদাগাড়ী, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার পদ্মায়। লুকিয়ে এসব ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। দিনের বেলায় ছোট ছোট দলে পদ্মায় নামছেন তারা। তবে সন্ধ্যার পর থেকেই দলবলে নেমে পড়ছেন। ইলিশ শিকার চলছে রাতভর। ভোররাতে মা ইলিশ চলে আসছে তীরে। এরপর বাড়ি থেকে ব্যবসায়ীদের ডেকে পানির দামে বিক্রি করছেন জেলেরা।

জেলেরা জানান, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশী ইলিশ ধরা পড়ছে গোদাগাড়ীর বিভিন্ন এলাকায়। এই উপজেলার সুলতানগঞ্জ, সারাংপুর, ভগবন্তপুর, হাটপাড়া, কুঠিপাড়া, বারুইপাড়া, রেলবাজার, মাটিকাটা, মাদারপুর, হরিশংকরপুর, ভাটোপাড়া, পিরিজপুর, বিদিরপুর, প্রেমতলী ও খরচাকা এলাকায় ধরা পড়ছে প্রচুর মা ইলিশ।

এসব ইলিশ ভোরে রেলবাজার এলাকার আড়তে বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যেই। আকার ভেদে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়। ক্রেতাদের একটি বড় অংশ স্থানীয় বাসিন্দা।

বিষয়টি স্বীকার করে জনবল সংকটে সবখানে নজরদারি চালানো যাচ্ছে না বলে জানান গোদাগাড়ীর সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল করিম। অবাধে মা ইলিশ শিকার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদেরও। তিনি বলেন, গত বছর ব্যাপক অভিযান ছিলো। এতে এবার কৌশল বদলে ফেলেছেন জেলেরা। তবে শিগগিরই বড় ধরণের অভিযান শুরু করবে জেলা প্রশাসন।

জেলা মৎস কর্মকর্তা শামশুল আলম শাহ বলেন, মৎস দপ্তরের দল নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও অভিযানে অংশ নিচ্ছে বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব।

আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/আরআর/ওআর)