শাপলালয়

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৩৮

এসএমআর মাহফুজ

লাল শাপলার বিল এখন শুধু বিল নয়, লাল শাপলার বিল এখন মৌসুমী পর্যটন কেন্দ্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে আসা অগনিত পর্যটক যাতে সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সময় কাটানোর একটি উপযুক্ত পর্যটন স্পট পায়- সে উদ্দেশ্যেই মূলত শাপলালয়ের সৃষ্টি।

শনিবার গোপালগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক শাপলালয়-এর উদ্বোধন করেন। শাপলালয় শুধু পর্যটন কেন্দ্র নয়, শাপলালয় কিছু মানুষের স্বপ্নপূরণ, কিছু মানুষের রুটি-রুজি।

শাপলালয় আগত পর্যটকদের আন্তরিকতায় ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ করতে সদা সচেষ্ট। কান্দি ইউনিয়নভুক্ত শেখ হাসিনা আদর্শ মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন লাল শাপলার বিল পর্যটকদের জন্য যে যে সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে শাপলালয় হলো-

১) বিলপাড়ে স্থাপন করা হয়েছে বসনী, যাতে বসে পর্যটকরা লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।

২) বিলপথে ঘুরে ঘুরে লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বা লাল শাপলা ছুঁয়ে দেখার জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নৌকাগুলোতে এমনভাবে ছাউনি দেয়া হয়েছে যাতে রোদ বা বৃষ্টিতে পর্যটকদের অসুবিধা না হয়, আবার ছাউনি এমন উচ্চতায় দেয়া হয়েছে যাতে পর্যটকদের নৌকায় বসে বা দাড়িয়ে সৌন্দর্য উপভোগ বাধাগ্রস্ত না হয়।

৩) বিলের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হল ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌকা না পাওয়া এবং পেলেও তা অতিমাত্রায় ছোট হওয়ায় পর্যটকদের নৌকায় চড়তে ভয় কাজ করা। এ সমস্যা নিরসনে পর্যটকদের জন্য সার্বক্ষণিক নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং যা আকারে এত বড় যে ২০-২৫ জন এক নৌকায় উঠলেও কোন অসুবিধা হবে না কিংবা মহিলা বা শিশু কারোরই উঠতে ভয়ও কাজ করবে না।

৪) নৌকায় উঠার জন্য ঘাটলা স্থাপন করা হয়েছে যাতে পর্যটকরা অতি স্বাচ্ছ্যন্দে নৌকায় চড়তে বা নামতে পারে।

৫) বিলের আগাছা পরিষ্কার করে বিলকে শাপলাময় রূপ দেয়া হয়েছে যেখানে শুধু শাপলা আর শাপলা দেখা যায়। মনে হয় যেন প্রকৃতি প্রকৃত অর্থেই লাল শাপলা বিছিয়ে রেখেছে। কাছাকাছি অনেক বিলেই যদিও লাল শাপলা পাওয়া যায়, তবুও মূলত এ উদ্যোগটিই শাপলালয়কে অন্য বিলগুলো থেকে সম্পূর্ন আলাদা করেছে।

৬) শাপলালয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো শাপলা মাচাং। ১০০০ বর্গফুটের এ মাচাং পর্যটকদের এক অমূল্য অনুভূতির যোগান দেবে। মাচাং-এর সামনের অংশ উন্মুক্ত এবং পেছনের অংশ গোলপাতার ছাউনি দিয়ে ঢাকা। শাপলার বিল ভ্রমণে সকালে পছন্দনীয় হলেও এ মাচাংএর গোলপাতার ছাউনি সকাল/দুপুর/সন্ধ্যা যে কোন সময়ের জন্য এ বিলকে উপভোগযোগ্য করেছে। আর গোলপাতার নিচে বসে প্রকৃতির নির্মল মৃদু বাতাস পর্যটকের মনকে আন্দোলিত করবে নিসন্দেহে। পড়ন্ত বিকালে মাচাং-এর সামনের ফাঁকা অংশে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে গান-বাজনার সাথে গোধূলী পর্যটককে করবে বিমোহিত এবং অভিভূত।

৭) শাপলালয়ে থাকছে ভাসমান ডাবের দোকান, পিঠার দোকান। বিলের মাঝখানে গোলপাতার ঘরে বসে গরম গরম পিঠা-পুলি পর্যটকদের দিবে এক অন্য মাত্রার তৃপ্তি।

৮) শাপলা মাচাং শাপলাকালীন সময় ছাড়াও অন্য সকল ঋতুতেও উপভোগ্য। কিছুদিন পরে যখন বিলজুড়ে ধানের চাষ হবে তখন শাপলা মাচাংএ যাবার জন্য আইল রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে স্থানীয় জমির মালিকগণ। ফলে মৌসুমী পর্যটনের উদ্দেশ্যে নির্মিত হলেও শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সকল ঋতুতেই এ শাপলা মাচাং দর্শনীয় ও উপভোগ্য।

৯) শাপললায়ের সবচেয়ে বড় সফলতা যে এ উদ্যোগ খেঁটে খাওয়া ১২ জন মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। উপজেলা প্রশাসন অনুমোদিত কার্ডধারী ৬ জন মাঝি, ৪ জন পিঠা প্রস্তুতকারী, ২ জন ডাব বিক্রেতা পর্যটকদের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত। ১২ জন লোকের কর্মসংস্থান এ উদ্যোগকে করেছে ধন্য। পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আরো বেশি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে এ শাপলালয়। জাতির পিতার সমাধিতে আগত দর্শনার্থীরা মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কোটালীপাড়াস্থ শাপলালয় এবং সুকান্তের পৈতৃক ভিটা উপভোগ করবেন যা কোটালীপাড়াকেও পর্যটন এলাকার মর্যাদা এনে দিবে- এ আমার বিশ্বাস।

যেভাবে এলো শাপলালয়:

উদ্যোগটা চিন্তা করেছিলাম বেশ আগে। কিন্তু নানাবিধ অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে বারবার হোচট খেয়েছি। তবুও শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক সরকার মোখলেসুর রহমানের অনুপ্রেরণায় নিজস্ব ডিজাইন ও পরিকল্পনায় নির্মাণ কাজ শুরু হলো। কান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের অদম্য ইচ্ছা ও অক্লান্ত পরিশ্রম, শেখ হাসিনা আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীর অপরিমেয় আন্তরিক সহযোগিতা এবং সর্বোপরি কান্দি ইউনিয়নের আপামর জনসাধারণের ভালবাসা ও শ্রমে এগিয়ে চললো শাপলালয়।

নেপথ্যের উৎসাহক যারা:

মহাপরিচালক(প্রশাসন)প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মো. খলিলুর রহমান স্যার যার উদ্যোগ, তৎপরতা, আন্তরিকতা কোটালীপাড়াবাসীকে লাল শাপলার বিলের সাথে সম্পৃক্ত করেছে। অসীম কৃতজ্ঞতা স্যারের প্রতি।

তানজিয়া সালাম স্যার, জেলা প্রশাসক, ফরিদপুর যার উৎসাহ ও অনুপ্রেরনা লাল শাপলার বিলকে ঘিরে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আমাকে উৎসাহিত করেছে। অসীম কৃতজ্ঞতা স্যারের প্রতি।

ঘুমিয়ে নয়, যে স্বপ্ন জেগে দেখি:

লাল শাপলার বিলকে শাপলালয়ে রূপান্তরের পর এখন সুকান্তের পৈতৃক ভিটাকে পর্যটকবান্ধব করার স্বপ্নে আছি। সকলের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় সে স্বপ্ন পূরণ করতে পারলে পর্যটনের বিকাশ ঘটবে কোটালীপাড়ায় যা কোটালীপাড়ায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে এবং কোটালাপাড়াবাসীর জীবনমান উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখবে। জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত টুঙ্গিপাড়া কোটালীপাড়া একদিন বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটন স্পট হবে। একদিনেই হয়ত হবে না তবে একদিন হবেই নিসন্দেহে।

লেখক: উপজেলা নির্বাহী অফিসার

কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ