‘গুণী’ মইনুলকে একহাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:২৭ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮, ২১:৪৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি: মইনুল হোসেন

নারী সাংবাদিককে টেলিভিশন লাইভে ‘চরিত্রহীন’ বলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মইনুল হোসেনকে এক হাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় ঐক্যের এই নেতার অতীতের নানা নেতিবাচক ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন তিনি আরও ঘটনা জানেন, সময় মতো প্রকাশ করবেন।

তিন দিনের সৌদি আরব সফর নিয়ে সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে মইনুল প্রসঙ্গও। গত ১৬ অক্টোবর একাত্তর টিভির এক অনুষ্ঠানে লাইভে এসে নারী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির এক প্রশ্ন শুনে ক্ষেপে গিয়ে মইনুল বলেন, ‘আপনাকে আমি চরিত্রহীন হিসেবে দেখতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। কটূক্তির কথা তুলে তিনি মইনুলের বাচনভঙ্গী নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ‘তার অ্যাটিচিউডিই ছিল খারাপ। কার কাছ থেকে কী আশা করবেন?’

প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের দালালি করে বেড়াতেন মইনুল হোসেন। ইত্তেফাক থেকে সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনকে তুলে নেয়ার পেছনেও মইনুলের দায় ছিল বলে জানান তিনি।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে দলে যোগ দেন মইনুল হোসেন। এরপর তিনি নিজেও খুনি বজলুল হুদা, আজিজ পাশা এবং সুলতান শাহরিয়ার খানকে নিয়ে দল করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার কাছ থেকে ভালো ভদ্র ব্যবহার আর কী পাবেন?’

দুই ভাই মইনুল হোসেন এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মধ্যে ইত্তেফাকের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে খুনের ঘটনাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘নিজে মার্ডার করে ভাইকে ফাঁসানোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। কাকরাইলের বাড়ি নিয়েও ঝামেলা আছে। সেখানেও স্টেট ভার্সাস মামলার রায় আছে, আপনারা সাংবাদিকরা আছেন, বের করে দেখেন।’

‘ওনার গুণের কোনো শেষ নাই। ওনার গুণ এত বেশি, আপনারা জানেন না।’

মইনুলের বাবা তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আর এই সুবাদে ওই বাড়ির নানা তথ্য জানেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। আর মইনুলের ব্যারিস্টারি পড়ে দেশে ফেরার পর তার বাংলাদেশি খাবার খেতে না পারার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

‘ওনি এসেছেন সাহেব হয়ে, বাংলাদেশি খাবার আর খেতে পারেন না। সাহেবি খাবার খেতে হবে। স্বাভাবিকভাবে চাচি (মইনুলের মা) এসে মায়ের কাছে আফসোস করে বলে আমি এখন কী করি? আমার ছেলে এখন ইংরেজি খাবার খায়। এখন ইংরেজি খাবার রান্নার জন্য আলাদা বাবুর্চি রাখতে হলো।’

‘ওনি (মইনুল) হলো কাক, ময়ূর পুচ্ছ লাগিয়ে যে চলে, মানে ময়ূর হওয়ার চেষ্টা করে। বিদেশে ব্যারিস্টারি পড়তে গিয়ে ওনি ইংরেজ হয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন।’

‘শিখেছিলেন খাওয়াটা ঠিকই, কিন্তু ইংরেজের ভদ্রতাটা শিখে আসেন নাই, অ্যাটিচিউট শিখে আসেন নাই। কথা বলাটা শিখে আসেন নাই’- আক্ষেপ করে বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘এ কথা তো সবার জানার কথা না, আরও জানি পরে বলব।’

জামায়াত প্রমাণ করতে হয় কেন?

মাসুদা ভাট্টি যেমন মইনুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তেমনি মইনুল হোসেনের পক্ষ থেকেও আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, তাকে জামায়াত বলে সম্মানহানির চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রমাণ না দিতে না পারলে মামলা করার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, এই মামলা হতে পারে না। তারপরও বিচারকরা যদি মামলা নেন তাহলে কিছু বলার নেই।  

মইনুলের জামায়াত সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে হয় কেন?- এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিবিরের অনুষ্ঠানে গিয়ে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন সেটা খুঁজে বার করেন। প্রমাণ তো আছেই, ভিডিও তো আছেই। ইত্তেফাকেই ছাপা হয়েছে। সেটা বের করে প্রমাণ করে দিয়ে দেন। তিনি যে শিবিরের মিটিংয়ে গিয়ে বক্তৃতা দিলেন, তাতে জামায়াত সমর্থন সে করে না, সেটা সে কী করে বলবে।’

‘তাদেরকে (শিবির) আপন জন বলেছে, কাছের লোক বলেছে, এটাই তো প্রমাণিত সত্য। এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী লাগে যে সে জামায়াত?-বলেন প্রধানমন্ত্রী।’

আরেক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বলতে চাই, আপনারা যারা নারী সাংবাদিক, তারাইবা কী করছেন। নারী সাংবাদিকরা আপনারা প্রতিবাদ করেন। আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী যা করার করবে। আপনারা মামলা করেন। আমরা যা করার করব।’ 

ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/ডব্লিউবি