মেয়র লোকমান হত্যার আসামি মোবারক রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক, নরসিংদী
 | প্রকাশিত : ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৪৪

নরসিংদী পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন হত্যার আসামি গ্রেপ্তার মোবারক হোসেন মোবাকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বুধবার বিকাল সাড়ে চারটায় নরসিংদীর অতিরিক্ত প্রধান বিচারিক হাকিম শামীমা আক্তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে ১০দিনের রিমান্ড চেয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ। আদালত চলাকালে বাইরে শত শত নারী পুরুষ তার শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তারা মোবাকে পচা ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. জাকারিয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ মোবারককে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর ডিওএইচএস এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. জাকারিয়া জানান, ‘মোবারক হোসেন মোবা নরসিংদীর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যা মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। সে ওই মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল। গত ২৫ অক্টোবর সে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছে। এতদিন সে পলাতক ছিল। নরসিংদীতে তার একটি জমি বিক্রি করতেই সে দেশে আসে।’

তিনি জানান, ‘গোপন সংবাদে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর ডিওএইচএসের একটি বাসা থেকে মোবাকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় রেহানুল ইসলাম ভূইয়া লেলিন নামে আরেকজনকেও আটক করা হয়। সেও বিভিন্ন মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মোবারক হোসেন মোবা মেয়র লোকমান হোসেন হত্যার এক সপ্তাহ আগে দেশ ত্যাগ করে এতদিন মালয়েশিয়ায় পলাতক ছিল।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও লোকমান হোসেনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১ নভেম্বর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। ওই ঘটনায় নিহতের ভাই কামরুজ্জামান কামরুল বাদী হয়ে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ (রাজু)’র ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে নরসিংদীর প্রধান বিচারিক হাকিম আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলার আসামি মোবারক হোসেন মোবা বিদেশে পলাতক ছিলেন। বাকি ১৩ জনের সবাই গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে যান। পুলিশ প্রায় আট মাস তদন্ত করে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাউদ্দিনসহ এজাহারভুক্ত ১১ আসামিকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। তাতে মামলার এজহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন মোবা, এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল মতিন সরকার, তার ছোট ভাই শহর যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সরকারসহ অন্য ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী কামরুজ্জামান কামরুল। আদালত ২৫ জুলাই নারাজি আবেদন খারিজ করে অভিযোগপত্র বহাল রাখেন। পরবর্তীতে ২৮ আগস্ট নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। আদালত ২ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ফের নারাজি আবেদন খারিজ করেন। এরপর উচ্চ আদালতে যান বাদী। তিনি ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মাধ্যমে আবার তদন্তের দাবি জানিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত রাখতে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। আদালত বাদির আবেদনটি আমলে নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত করে দেন।

প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের ছোট ভাই নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নরসিংদী পৌর মেয়র কামরুজ্জামান বলেন, আমরা জানতে পেরেছি প্রয়াত মেয়র আমার বড় ভাই লোকমান হোসেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মোবারক হোসেন মোবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি নরসিংদীবাসীর জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক তা বলে বুঝানো যাবে না। তাও আবার লোকমান ভাইয়ের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীর আগের দিন। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমার পরিবারসহ নরসিংদীবাসী কৃতজ্ঞ।

এদিকে হত্যার পরিকল্পনাকারী মোবা গ্রেপ্তার হওয়ায় শহরের বিভিন্ন স্থানে তার শাস্তির দাবিতে মিছিল হয়েছে। অপরদিকে লোকমান হোসেনের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জেলা আওয়ামী লীগ, শহর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের উদ্যোগে মিলাদ-মাহফিল, দোয়া ও গণভোজের আয়োজন করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১অক্টোবর/বিএবি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :