কদর বেড়েছে লেপ-তোষকের, বেড়েছে কারিগরদের ব্যস্ততা

প্রকাশ | ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ২২:৫২

মফিজুর রহমান শিপন, ফরিদপুর

আবহমান বাংলার রূপ বড়ই বৈচিত্র্যময়। এই ছয় ঋতুর বাংলাদেশে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এ দুই মাস হেমন্তকাল। হেমন্ত মানেই শীতের পূর্বাভাস। রাত শেষে ঠাণ্ডা শীত শীত হিমেল বাতাস, আর ভোরে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু। এই শিশিরবিন্দুই বলে দেয় শীত আসছে।

দেশের মধ্যাঞ্চল ফরিদপুরের শীতের আগমনীবার্তা আসার সঙ্গে সঙ্গে ধুনারীদের তুলা ছাঁটাই ও লেপ তৈরির কাজে কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে।

সপ্তাহ দুয়েক সময় ধরে এ জেলায় শীত ও কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। ভোরবেলায় কুয়াশায় ঢেকে যায় সবুজ মাঠ। সামনে পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল। তাই পদ্মা ও মধুমতির চরাঞ্চল এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষ আগে ভাগেই লেপ, তোষক বানাতে শুরু করেছে।

এছাড়াও মেয়ে-জামাই এর বাড়িতে বালিশ, লেপ, তোষক দেওয়াটাও একটি ঐতিহ্য রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের।

তাই লেপ, তোষক কারিগরদের এখন দম ফেলার সময় নেই। বিরামহীনভাবে কাজ করছেন তারা। কেউ কেউ পুরনো লেপ ভেঙে নতুন করে বানিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ নতুন তুলা দিয়ে তৈরি করে নিচ্ছে লেপ, তোষক ও বালিশ।

ফরিদপুর শহরের চকবাজারের লেপ তোষকের কারিগর মালেক মিয়া, হাফিজ মাতুব্বর, রহমান শেখ জানান, তারা বছরে প্রায় ৬ মাস অন্য কাজ করেন। শীত আসছে এমনটি টের পাওয়ার সাথে সাথে তাদের কদর বেড়ে যায়। তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন লেপ-তোষকের দোকানে গিয়ে তারা প্রতি দিন ৬শ থেকে ৭শ টাকায়, আবার কেউ কেউ লেপপ্রতি ২শ থেকে ৩০০ টাকা হিসেবে লেপ, তোষক তৈরি করে থাকেন।

শহরের জনতা ব্যাংক মোড়ের লেপ-তোষকের দোকান মালিক জাকির হোসেন জানান, শীত এখনো জেঁকে না বসলেও অনেকে আগেভাগেই লেপ ও তোষক বানাতে আসছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতার সংখ্যা অনেকটাই বেশি। সারা বছরের চেয়ে শীতের এ তিন মাস বেচাকেনা একটু বেশিই হয়।

তাই ক্রেতাদের কথা ভেবে কাজের গুণগতমান বজায় রেখে অর্ডারি কাজের পাশাপাশি রেডিমেড জিনিসও তৈরি করে বিক্রি করছেন এই লেপ-তোষকের দোকান মালিক।

আলীপুর থেকে লেপ তৈরি করতে আসা কবির মোল্লা জানান, এখনো শীতের দেখা না মিললেও আগেভাগেই শীতের জন্য একটি লেপ বানিয়ে নিচ্ছি।

চকবাজারে আসা জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক গৃহীনি জানান, কিছুদিন আগে তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাই মেয়ের জন্য লেপ, তোষক বানাতে এসেছেন তিনি।

এদিকে শহর ও গ্রামে লেপ-তোষকের ফেরিওয়ালার হাঁক-ডাক বেড়েছে অনেক। এ ডাক মৌসুমী ফেরিওয়ালাদের, যারা শীত এলে রিকশা-ভ্যানে লেপ-তোষক বিক্রিতে নেমে পড়েন।

মহাজনদের কাছ কমিশনে কিনে বিক্রি করেন গ্রামের বাড়ি বাড়ি আর শহরের পাড়ায় পাড়ায়। এসব ফেরিওয়ালা নগদ টাকা ছাড়াও কিস্তিতেও লেপ-তোষক বেচেন। শীত মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই কিস্তির সে টাকা পরিশোধ করেন পুরুষ ও গৃহবধূ ক্রেতারা।

শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় লেপ বিক্রয় করতে আসা এক ফেরিওয়ালা বলেন, ‘কাপড়, নরমাল তুলা, মজুরি মিলে হাজার থেকে ১২শ টাকা খরচ পড়ছে, আমরা এটা বিক্রয় করি ১৫শ থেকে ১৭শ টাকায়’।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এবার লেপ-তোষক তৈরির মূল উপাদান কার্পাস তুলা ১২০-১৪০ টাকা, বোমা তুলা ১০০-১১০ টাকা, চাদর তুলা ৮০-৯০ টাকা এবং গার্মেন্টস তুলা ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ফরিদপুর আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র ওয়েদার পর্যবেক্ষক সুশীল কুমার জানান, ফরিদপুর অঞ্চলে শীত আসা শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন হলো। তবে আকাশে মেঘলা থাকায় এখন কিছুটা কম, মেঘ কেটে গেলে শীতের আগমন বেশি ঘটবে।

তিনি জানান, এবছর বর্ষা কম হওয়ায় মাটির আদ্রতা কমে গেছে, তাপ ধারণ ক্ষমতাও কম। এ কারণে শীতের বার্তা আগে থেকে অনুভব করা যাচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)