২১০০ টাকা কিস্তির চাপে গৃহবধূর ‘আত্মহত্যা’

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৩৯ | প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর ২০১৮, ২১:২৮

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ক্ষুদ্রঋণের কিস্তির টাকার চাপ সহ্য করতে না পেরে চার সন্তানের জননী গৃহবধূর আত্মহত্যার তথ্য পাওয়া গেছে। তার নাম ফিরোজা বেগম। গৃহঋণ হিসেবে নেয়া তিন কিস্তির ২১০০ টাকা বকেয়া ছিল তার। টাকা নিতে আসা এনজিওর কর্মীদের টাকা দিতে না পেরে বাড়ি থেকে অদূরে গিয়ে প্রাণ দেন তিনি।

স্থানীয় প্রভাবশালী ও প্রশাসনকে হাত করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্ত্রীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্বামী আর মা হারিয়ে চারটি সন্তান অথৈ সাগরে পড়েছে।

ফিরোজার স্বজনরা জানান, ব্র্যাক থেকে গৃহনির্মাণ ঋণ হিসেবে চলতি বছরের ১২ মার্চ ২৫ হাজার টাকা নেন ফিরোজা খাতুন। ৪৫ কিস্তিতে ৭৫ টাকা সঞ্চয় ও ৬২৫ টাকা ঋণের কিস্তিসহ সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার ৭০০ টাকা হারে কিস্তি পরিশোধের শর্তে ওই ঋণ দেয়া হয়।

নদীতে পাথর পরিবহনের কাজ না থাকায় কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলেন না ফিরোজা। কিন্তু একজন এনজিও কর্মকর্তা গত ২৫ অক্টোবর ফিরোজার বাড়ি গিয়ে একসঙ্গে তিন সপ্তাহের কিস্তি পরিশোধ করতে চারদিনের সময় বেঁধে দেয়। ব্যর্থ হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

বেঁেধ দেওয়া সময় অনুযায়ী গত ২৯ অক্টোবর বিকালে ওই এনজিওর সুনামগঞ্জ অঞ্চলের বিশ্বম্ভরপুর ও বাদাঘাট শাখার কর্মকর্তারা ফিরোজার বাড়িতে যান। কিন্তু টাকা সংগ্রহ করতে না পেয়ে ভয়ে বাড়ি ছেড়ে ফিরোজা অন্যত্র চলে যান।

মঙ্গলবার সকালে পার্শ্ববর্তী বাদাঘাট ইউনিয়নের বড়টেক এলাকায় একটি ঘরের ধর্ণায় গলায় রশিতে ঝুলন্ত অবস্থায় ফিরোজার মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ৩০ অক্টোবর সকালে তাহিরপুর থানার উপপরিদর্শক মুহিত ফিরোজার মরদেহ উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠান।

ফিরোজার স্বামী আবুল কাসেম বলেন, ‘কিস্তি টাকা দিতে না পারলে ফিল্ড অর্গানাইজার আমার স্ত্রীকে হুমকিসহ নানান ভাবে অপমান করেছেন। এ কারণেই ভয়ে ও অপমানে আমার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে।’

তবে কিস্তি আদায়ের চাপ প্রয়োগ, হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে ব্র্যাকের বাদাঘাট শাখার ফিল্ড অর্গানাইজার গাজিউর রহমান বলেন, ‘বেশ কয়েকটি কিস্তি বকেয়া থাকায় এরিয়া ম্যানেজারের চাপে ফিরোজাকে কিস্তি পরিশোধে সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু ওই ঐ দিন তাকে বাড়িতে পাইনি।’

ওই এনজিওর শাখা ব্যবস্থাপক বিষ্ণু কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘কিস্তি আদায়ের জন্য আমি ও অপর দুই ফিল্ড অর্গানাইজারকে সঙ্গে নিয়ে ফিরোজার বাড়ি গিয়েছিলাম। তাকে পাইনি। পরে আমরা ফিরে আসি।’

কিস্তি আদায়ে চাপ ও হুমকির বিষয়ে বিষ্ণু বলেন, ‘আপনি একটি ফোন নাম্বার দিচ্ছি সুনামগঞ্জের এই নাম্বারে কথা বলেন।’ বলেই মোবাইলের নাইন কেটে দেন তিনি।

বড়দল (উত্তর) ইউনিয়নের স্থানীয় সদস্য নোয়াজ আলী বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে ব্র্যাকের লোকজন সমাধান করার জন্য সময় আমাকে বলেছে। তারা কয়েক দিন সময় নিয়েছে। কিন্তু পাঁচ দিন পার হয়ে যাচ্ছে। এখনও তারা কিছুই বলছে না।’

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, ‘ঘটনাটি খুবেই দুঃখজনক। কিস্তির চাপ সহ্য করতে না পেরে চার সন্তানের জননী ফিরোজা বেগমের আতœহত্যার কথা এলাকার লোকজন আমাকে জানিয়েছে। এই পর্যন্ত কোন পক্ষই এখনও আমার কাছে আসেনি। এই বিষযটি সুষ্ঠু সমাধান হওয়া প্রয়োজন।’

তাহিরপুর থানার ওসি শ্রী নন্দন কান্তি ধর বলেন, ‘থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পরে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ঢাকাটাইমস/০২নভেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :