জেলহত্যার আলোচনা রেখে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৌমন্ত্রী!

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ২০:২৩

জেলাহত্যা দিবসে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের শোকসভায় অংশ নেননি নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি একই দিনে মাদারীপুরে একটি কলেজের অভিষেক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

এতে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে নৌমন্ত্রীর দাবি, তাকে অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়নি। আর কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিলেন না।

শনিবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতা-কর্মীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রীর সমালোচনা করেন।

মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা জানান, ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরসেনানী ও জাতীয় চার নেতাকে। দিবসটি পালনের জন্যে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি হাতে নেয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৭টায় দলীয় কার্যালয়ে নিহত নেতাদের স্মরণে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও সকাল ৯টায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজাদ মুন্সি, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

তবে মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। তিনি পূর্বনির্ধারিত রাজৈর উপজেলার কবিরাপুর ছইফউদ্দিন মহাবিদ্যালয়ের অনার্স কলেজে উন্নীত হওয়ায় অভিষেক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। বর্তমান সরকারের দায়িত্বরত মন্ত্রীর এমন কার্যকলাপে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। শহরের শকুনী লেগপাড় একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে নেতারা মন্ত্রীর নানা সমালোচনা করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা বলেন, ‘মন্ত্রী একজন সিনিয়র মানুষ হিসেবে আজকের মতো দিনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিলেন। তিনি কি ভুলে গেলেন, আজ জেলহত্যা দিবস। মানুষ ক্ষমতায় থাকলে বিভোর হয়ে যায়, আমি মনে করি তিনি সেই পন্থাই অবলম্বন করেছেন। এটা আমাদের জন্যে খুবই দুঃখজনক। তার কাছ থেকে আমরা এটা প্রত্যাশা করিনি। কারণ তিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী।’

মতবিনিময়কালে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজাদ মুন্সি, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, ‘মন্ত্রী এর আগেও জয়বাংলা নামে একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতাদের অবজ্ঞা করেছেন। এখনো তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, তিনি মনে প্রাণে শতভাগ আওয়ামী লীগকে গুরুত্ব দেন না।’

এ ব্যাপারে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাকে জেলা আওয়ামী লীগের জেলহত্যা অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয়নি। ফলে সেখানে অংশ নিইনি। আর রাজৈরের ওই অনুষ্ঠানে আমি নবীনদের বরণ করে বক্তব্য দিয়ে চলে গিয়েছি। ওখানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমি থাকিনি। যারা আমাকে নিয়ে এসব মন্তব্য করে, তারা তো প্রকাশ্যেই আমার উন্নয়নের বিরুদ্ধে কথা বলে। এটা নিয়ে আর কিই বলার আছে।’

জেলহত্যা দিবসে এমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে কবিরাপুর ছইফউদ্দিন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মৃণাল গাইনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি পূর্বনির্ধারিত ছিল। নৌপরিবহন মন্ত্রীসহ অন্যান্য অতিথিরা আলোচনাসভায় অংশ নেন। পরে আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীরা নাচ-গানের অনুষ্ঠান করেছে।’

(ঢাকাটাইমস/০৩নভেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :