‘রওশন আরার দুই কিডনি জন্মগতভাবেই জোড়া লাগানো’

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:৪৮ | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:৫২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

চলচিত্র নির্মাতা রফিক শিকদারের মা রওশন আরা বেগমের বাম কিডনির অপারেশন করতে গিয়ে ডান কিডনিটাও চলে গেছে। কারণ, জন্মগতভাবে তার দুটি কিডনিই জোড়া লাগানো ছিল। যা আলট্রসনোগ্রাম ও সিটি স্ক্যানে ধরা পড়েনি।

গতকাল দুপুর একটার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
হাসপাতালটির  ইউরোলজি বিভাগের রোগী রওশন আরা বেগমের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রশাসন অধ্যাপক ডা. রফিকুল আলম। বলেন, ‘আমরা কখনোই এই বিষয়টি নিয়ে হেলাফেলা করিনি। ঘটনার  পরপরই উচ্চমানের দুইটি  তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।’

‘ডান পাশের কিডনির অপারেশন করতে গিয়ে বাম পাশের কিডনি ফেলে দেওয়া হয়েছে।  রোগী রওশন আরার জন্মগতভাবে দুইটি কিডনি জোড়া লাগানো ছিল। দুর্ঘটনাবশত এটা হয়েছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন উপাচার্যের কাছে জমা দিয়েছি।’  

কিডনি জটিলতার কারণে গত ৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মা রওশন আরার অস্ত্রোপচার করেন কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমান দুলাল। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর রোগীর দেহে জটিলতার সৃষ্টি হলে রফিক শিকদার নিশ্চিত হন, তার মায়ের দুটি কিডনি ফেলে দেওয়া হয়েছে। গত ৩১ অক্টোবর রওশন আরা মারা যান।  

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. রফিকুল আলম বলেন, ‘ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল রোগীর স্বজনদের চেক দিয়েছেন কিংবা তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন- এমন বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবহিত নয়। এটা দেশের একটি বড় মাপের প্রতিষ্ঠান এখানে যদি রোগীদের সমস্যার সমাধান দেওয়া না যায় তাহলে কীভাবে হবে?’

চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলালের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের দশমতলার অপারেশন থিয়েটারে মায়ের অপারেশন সম্পন্ন হয়। রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার আমাকে বলেন, অপারেশনের পর থেকে আপনার মায়ের ডান পাশের কিডনিটি কাজ করছে না। দ্রুত তাকে আইসিইউতে নিতে হবে। তিনি এটাও বলেন, আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই। কোনো বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’

‘একদিন পর ইনসাফ আল-বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডা. হুমায়ুন রশিদ কবীর সেলিম মায়ের কিডনির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে সিটিস্ক্যান করতে বলেন। পরে ল্যাবএইড হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করার পর রিপোর্ট মারফত মায়ের পেটে কিডনির অস্তিত্ব নেই বলে জানতে পারি। অবস্থা বেগতিক দেখে বিআরবি হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার এম এ সামাদের দ্বারস্থ হই। মেডিকেল রিপোর্ট দেখার পর পর্যালোচনা করে এবং ফের আলট্রাসনোগ্রাম করে মায়ের পেটে কোনো কিডনির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।’

ডা. রফিকুল আলম বলেন,  ‘রোগীর কিডনিটি প্রকৃতিগতভাবেই জোড়া লাগানো ছিল। যে কারণে নষ্ট কিডনিটি ফেলতে গিয়ে অপারেশনের স্থানে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়, যা পরে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে রোগীর ডান দিকের সুস্থ কিডনিটিও ফেলে দিতে হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন এবং গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, সদস্য হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম খুরশিদ আলম ও সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আমিনুর রসূল।

(ঢাকাটাইমস/০৫নভেম্বর/এএ/এআর)