মানবতাবিরোধী অপরাধ

পিরোজপুরের ছয় জনের বিরুদ্ধে চার অভিযোগ

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ২১:০৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ছয় আসামির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মোট চারটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ মামলার আসামি সাত জন হলেও ফজলুল হক হাওলাদার কারাগারে আটক অবস্থায় গত ৩০ অক্টোবর মারা যাওয়ায় তাকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা চার জন হলেন- আব্দুল মান্নান হাওলাদার ওরফে আব্দুল মান্নান ডিলার ওরফে মান্নান, আজাহার আলী হাওলাদার ওরফে আজু মুন্সী, আশ্রাব আলী ওরফে আশরাফ আলী হাওলাদার ও মহারাজ হাওলাদার ওরফে হাতকাটা মহারাজ। বাকি দুই আসামি পলাতক থাকায় তাদের নাম প্রকাশ করেননি তদন্ত সংস্থা।

এসব আসামি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কনভেনশন মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। বর্তমানে তারা জামায়াতের সমর্থক।

মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম এ হান্নান খান বিস্তারিত তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে হান্নান খান জানান,মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ওই সাত আসামির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল তদন্ত শুরু করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা বদরুল আলম ।

মামলায় ৩৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো হলো-

প্রথম অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ৪ জুন পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া থানার ধাওয়া ইউনিয়নের পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আসামিরা হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র মুকুন্দ বিহারি মল্লিক ওরফে ধুলাইড্যা, চিত্তরঞ্জন ব্যাপারী, সতিশ চন্দ্র ব্যাপারী, শরৎ চন্দ্র মাঝি, রসিক ঘরামী, উপেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি ও অনন্ত চাষিকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণপূর্বক গুলি চালিয়ে হত্যা করেন। এ সময় আনুমানিক ৪০/৪৫টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার লক্ষ্যে চরখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে অমূল্য রতন হাওলাদারের বাড়ি থেকে স্বর্ণ, গহনা ও মূল্যবান মালামাল লুট করেন আসামিরা। একইসঙ্গে রতন হাওলাদারকে আটক করে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও সুরেন হাওলাদারের বাড়িতে লুটপাট ও তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন আসামিরা।

তৃতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের চরখালী গ্রামের মনোরঞ্জন মিস্ত্রির বাড়িতে হামলা চালান আসামিরা। তাকে ও তার বড় ভাই চন্দ্রকান্ত মিস্ত্রিকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও অপহরণপূর্বক হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার সময় ২০০ টাকার বিনিময়ে আসামিদের কাছ থেকে মুক্তি পান।

চতুর্থ অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর সশস্ত্র রাজাকারসহ পিরোজপুর সদরের সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত তৎকালীন পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে স্থানীয় হিন্দুদের ধ্বংস করার লক্ষ্যে হিন্দু প্রধান এলাকা ভাণ্ডারিয়া থানার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সত্যরঞ্জন হালদারসহ ১৭ জনকে অবৈধভাবে আটক, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করেন আসামিরা। এর মধ্যে গুনমনি মিস্ত্রি নামে একজনকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে হত্যা করেন। আসামিদের গুলিতে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হয়। পরে দুইজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

(ঢাকাটাইমস/০৬নভেম্বর/এমএবি/এআর)