দরজা বন্ধ করে রাজউকের গণশুনানি!

প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:৩২ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে নিয়মিত পরিচালিত কার্যক্রম ‘গণশুনানি’ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। জনসমক্ষে না করে ‘গণশুনানি’ অনুষ্ঠানে কঠোর গোপনীয়তার নজির স্থাপন করেছে সংস্থাটি। অভিযোগকারী গ্রাহক ও অভিযুক্তদের নিয়ে জনসমক্ষে শুনানির কথা থাকলেও তা না করে এ কার্যক্রমকে অত্যন্ত সংরক্ষিত করে ফেলেছে। অভিযোগ উঠেছে, রাজউক নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে এরকম আচরণ করছে।

সূত্রমতে, গ্রাহকদের অভিযোগ শুনতে রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে সপ্তাহে একদিন গণশুনানির আয়োজন করে আসছে রাজউক। প্রত্যেক বুধবার রাজউক ভবনে সংস্থার চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে আসা নানা অভিযোগগুলো তুলে ধরা হয়। এসময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগকারী গ্রাহকদের মুখোমুখি করা হয়।

‘গণশুনানি’ অনুষ্ঠানে গোপনীয়তা রক্ষা রাজউকে নতুন নয় জানিয়ে সংস্থার একটি সূত্র বলছে, সচরাচরই এমনটাই হয়ে আসছে। আজও নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে রাজউক ভবনে গণশুনানির দিন ধার্য ছিল। এদিনও ‘গণশুনানি’ অনুষ্ঠানে গোপনীয়তা রক্ষা করেছে রাজউক।

সূত্রটি বলছে, বুধবার দুপুরে চেয়ারম্যানের সভাকক্ষে দরজা বন্ধ করে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে তালিকা ধরে চেয়ারম্যানের সভাকক্ষে একে একে অভিযোগকারীদের ঢোকানো হয়। একইসঙ্গে সংস্থার চেয়ারম্যান আবদুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঢোকেন সভাকক্ষে। আর কাউকে ঢুকতে না দিয়ে এরপর সভাকক্ষের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শুনানিকালীন সভাকক্ষে অনেকে ঢুকতে চাইলেও দরজা আটকে রাখা নিরাপত্তারক্ষীরা প্রবেশে বাধা দেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জনগণের জন্য এবং জনগণকে নিয়েই ‘গণশুনানি’। সেখানে গোপনীয়তার কোনো অবকাশ নেই। জনগণের সামনেই এটা করতে হবে। দরজা বন্ধ করে বা প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করার কোনো সুযোগ এক্ষেত্রে নেই বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক উপকমিশনার নাসির উদ্দিন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতার অনেকগুলো কৌশলের মধ্যে গণশুনানিও একটি। গণশুনানি জনগণকে নিয়ে। সেটা দরজা বন্ধ করে করলেতো আর ‘গণ’ হবে না।’

গণশুনানির নামে রাজউকের এমন আচরণ প্রসঙ্গে নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবিব ঢাকা টাইমসকে বলেন ‘এটা গণশুনানি না। সত্যিকার অর্থে গণশুনানি না করে এই প্রহসনের কোনো প্রয়োজন নেই। এতে করে এত বড় দায়িত্বশীল সংস্থাটির অধঃপতনের চিত্র স্পষ্ট হয়। জনগণের সামনে আসার সৎ সাহস রাখতে হবে।’

‘গণশুনানি’ নিয়ে গোপনীয়তা প্রসঙ্গে মোবাইলফোনে রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের প্রতিক্রিয়া জানতে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) আবুল কালাম আজাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বুধবার অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে আমি ছিলাম না।’ গণশুনানিতে কারা কারা থাকবে-সে বিষয়ে ঠিকভাবে জানেন না জানিয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে জেনে নেব।’

(ঢাকাটাইমস/০৭নভেম্বর/আরকে/জেবি)