বাগেরহাট - ১

আ.লীগের ‘দুর্ভেদ্য ঘাঁটিতে’ আবার শেখ হেলাল

প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৮

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও চিতলমারী উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন বাগেরহাট-১ কে আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি বললে অত্যুক্তি হয় না। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা এখানে জিতেছেন বার বার।

চারবারের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন আবার প্রার্থী হচ্ছেন, এটা অনেকটাই নিশ্চিত। তার তিনি আশাবাদী, ভোটাররা এবারও তাকে ফেরাবেন না। আর গত ১০ বছর কী কী করেছেন, তার ফিরিস্তি নিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

তবে এবার আসনটিকে ঘিরে তোড়জোড় আছে বিএনপিতে। সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান এবার আগাম গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় নির্বাচনে অন্য দুটি আসনের পাশাপাশি এই আসন থেকেও জিতেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে জেতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন। এরপর ২০০১, ২০০৮ এবং সবশেষ ২০১৪ সালেও তিনি এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারও তিনিই এই আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের এম এ খায়ের নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির সৈয়দ মোজাহিদুর রহমান নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের এম এ খায়ের দ্বিতীয় বার সংসদ সদস্য হন। ১৯৯১ সালে জেতেন আওয়ামী লীগের মোজাম্মেল হোসেন।

এরশাদ সরকারের পতনের পর বিএনপি একবারই জিততে পেরেছে এখানে। সেটি হলো ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন। সেবার দলটির প্রার্থী শেখ মুজিবুর রহমান জিতে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায়।

তবে একই বছরের ১২ জুন সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। পরে তার ছেড়ে দেয়া আসন দেয়া হয় ফুফাত ভাই হেলালকে।

২০০৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারির নবম সংসদ নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটে। প্রথমে শেখ হাসিনা এবং পরে উপনির্বাচনে হেলাল জেতেন বিপুল ভোটে। দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

আসনটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ভোটের পার্থক্য এনে দেয় চিতলমারী উপজেলার সংখ্যালঘু ভোট। চিতলমারীকে বলা হয় ‘আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক’। এই আসনের বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় এই দুই দলের ভোটের ব্যবধান থাকে প্রায় সমান-সমান। ফলে বরাবরই জয়ের নিয়ামক হয়ে ওঠেন চিতলমারীর ভোটাররা। আর এখানকার সিংহভাগ ভোটই যায় নৌকায়।
তাই বিরোধীদের এবারের বিশেষ মনোযোগ যে চিতলমারী উপজেলার ভোটারদের দিকেই থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

শেখ হেলাল উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘২০০১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আমার নির্বাচনী জনসভায় জামায়াত-বিএনপির জঙ্গিরা বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। আমি প্রাণে বেঁচে গেলেও আমার দলের নয়জন নেতাকর্মী নিহত হন এবং অসংখ্য সমর্থক আহত হন। গত ১০ বছরে অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাটসহ নানা উন্নয়ন কাজ করেছি। আওয়ামী লীগ ছাড়া এই আসনে কোনো উন্নয়ন কাজ হয় না। আমার এলাকার জনগণ তা জানে। এই এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে তাই নৌকায় ভোট দেয়। আগামী নির্বাচনে তারা আবার আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে আমি বিশ^াস করি।’

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও প্রকৌশলী (নৌ) মাসুদ রানা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, রাজধানীর ধানম-ি থানা বিএনপির সভাপতি শেখ রবিউল ইসলাম, কেন্দ্রীয় জাসাস নেতা মঞ্জুর মোর্শেদ স্বপন ও মহিলা দলনেত্রী রুনা গাজী।

বিএনপি নেতা মাসুদ রানা এই এলাকায় দলীয় কর্মসূচি ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দলীয় মনোনয়ন ও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
বড় এই দুই দলের বাইরে এই আসনে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বা বাম জোটের কোনো প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা নেই বললেই চলে।

ঢাকাটাইমস/৮নভেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি