তাড়াহুড়ো করবে না বিএনপি

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ১০:২৮

বোরহান উদ্দিন
বৈঠকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে নির্বাচন বা তফসিল পেছানো- কোনো দাবি আদায় হয়নি। ফুঁসছে রাজনৈতিক মাঠে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। ঘোষণা আছে আন্দোলনে যাওয়ার। তবে সতর্ক দলের নেতারা। তাড়াহুড়ো করলে ভুল হতে পারে- অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছে দলটি। তাই চলছে বৈঠকের পর বৈঠক।

বুধবার দ্বিতীয় দফা সংলাপ ব্যর্থ হওয়ার পর দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বসেন কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য নেতাদের সঙ্গে। সেখানে দাবি এসেছে আন্দোলন কর্মসূচির। তবে সিদ্ধান্ত জানাননি কেন্দ্রীয় নেতারা।

এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আসেনি সেখান থেকেও।

আবার কেবল ২০ দলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে না বিএনপি। তাদের নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও হবে আলোচনা। আবার ওই বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে নারাজ নেতারা। তারা জানান, কারাগারে থাকা চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং যুক্তরাজ্যে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের মতও জেনে নিতে হবে।

বিএনপি নেতারা জানান, আজ রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ থেকে এক ধরনের বার্তা দেয়া হবে। তবে সেখানেও চূড়ান্ত কোনো ঘোষণা আসবে- এমন নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তফসিল হয়ে গেলেও এখনই চট করে মনে হয় কর্মসূচি হয়তো দেয়া হচ্ছে না। তবে সবার মতামত নেয়ার পর দ্রুতই হয়তো দলের সিদ্ধান্ত জানা যাবে।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সামনে কী করতে হবে তা জানতে আমরা মতামত নিচ্ছি। দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তাদের ভাবনা বলেছেন। শরিকদের মতামত নেয়া হচ্ছে। আবার ঐক্যফ্রন্ট আছে। সবকিছুর পরেই তো সিদ্ধান্ত আসবে।’

সিদ্ধান্ত জানাতে কত দিন লাগতে পারে- এমন প্রশ্নে বিএনপির নেতা বলেন, ‘দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্যই তাদের কাছ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।’

দশম সংসদ নির্বাচনের আগের মতো এবারও বিএনপির প্রধান দাবি সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোট দিতে হবে। এ জন্য তাদের নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসে ১ ও ৭ নভেম্বর। কিন্তু নাকচ হয়েছে তাদের দাবি।

আর দ্বিতীয় দফা সংলাপে বসার আগের দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, ‘দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন’।

এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসে তফসিল পেছানোর দাবিও জানিয়ে এসেছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। সেটিও রাখা হয়নি। ২৩ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ দিয়ে গতকাল মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময়ও জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

তফসিল দেয়ার পর শুরু হয় শরিকদের সঙ্গে বৈঠক। আগের রাতে বিভিন্ন পর্যায়ের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বসেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। সেখানে আসা মতামত লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সেগুলো চেয়ারপারসনের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে, লন্ডনে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছেও পাঠানো হবে।

ওই বৈঠকে বিএনপির নেতারা বলেন, আইনিভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। অন্যদিকে আশ্বাস দিলেও আটকে নেই গ্রেপ্তার অভিযান। এই অবস্থায় রাজপথে শক্তি প্রদর্শন ছাড়া দাবি পূরণ সম্ভব নয়।

ওই বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা সিদ্ধান্ত না জানালেও নেতাদের যেকোনো নির্দেশের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। তবে যা-ই করুক তারা, গ্রেপ্তার এড়িয়ে কৌশলী অবস্থান নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তবে দু-এক জন নেতা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনের যাওয়ার পক্ষেও মত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

আন্দোলনে গেলে সহিংসতা যেন না হয়, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন নেতারা। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে বিএনপির আন্দোলনের সময় ব্যাপক নাশকতার পর হাজারো মামলায় বিএনপির নেতারা এখনো ভুগছেন। আবার সহিংসতার কথা বলে সরকারও কঠোর হয়েছে। এবার যেন সরকার সে সুযোগ না পায় সেটির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।