সীতাকোট বৌদ্ধবিহার হতে পারে পর্যটনকেন্দ্র

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
| আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:০৩ | প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:৪৪

নজরদারির অভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে প্রায় দেড় হাজার বছরের ঐতিহাসিক সীতাকোট বৌদ্ধবিহারের জমি ও সম্পদ। চুরি হচ্ছে এর ইটসহ মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নানা নির্দশনও।

এলাকাবাসী বলছেন, বিহারটির সংস্কার করে দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে। হতে পারে পর্যটনকেন্দ্র ও পিকনিক কর্নার, যা থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ও আসবে।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার সীতাকোট ঘিরে রামের স্ত্রী সীতাকে নিয়ে কল্পকাহিনি থাকলেও এটি মূলত প্রাচীন বৌদ্ধবিহার। অনেকের বিশ্বাস, সীতাকে পঞ্চবটীর বনের গভীরে বনবাস দিয়ে তার থাকার জন্য কুিটর হিসেবে এটি তৈরি করে দেয়া হয়েছিল। অনেকে তাই এটিকে ‘সীতার কোট’ নামেও চেনেন।

তবে ১৯৬৮ ও ১৯৭২ সালে দুই দফা আংশিক খননের পর দেখা গেছে, এটি একটি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার ছিল। প্রতœতত্ত্ব অনুসন্ধানকারী দলও জানান, সীতার সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে তার রাজ্যে ৮৪ হাজার স্ত’প স্তম্ভ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ওই সময় থেকে শুরু করে ষষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে বৌদ্ধধর্মের বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়, যার একটি আলোচিত এই সীতাকোট বৌদ্ধবিহার।

নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে পশ্চিম দিকে বিরামপুরগামী রাস্তার উত্তর পাশে গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের ফতেপুর মাড়াষ মৌজার প্রায় ১ একর জমিতে স্থাপিত এই বিহার।

সমগ্র ইমারতের গাঁথুনি লম্বা মধ্যম ও ছোট ইট এবং চুন সুড়কির দ্বারা নির্মাণশৈলী দেখে গবেষকরা অনুমান করেন, এ বিহার পঞ্চম শতাব্দী বা এর কিছু আগে নির্মিত হয়। বিহার খননের পরে বা আগে পাওয়া নিদর্শনের মধ্যে আছে- নানা ধরনের হীরার ধারালো অস্ত্র (বাইশ), মাটির পাত্রের ভাঙা অংশ, মাটির দোয়াত, লোহার পেরেক, নকশা করা মাটির তৈরি মাছ, মাটির পুতুল, নকশা করা ইট, লোকেশ্বর পাদ্যুপানি এবং মজুশ্রী রোজ নির্মিত দুটি মূর্তিসহ লোহার রিং ও রড।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিহারের পশ্চিম পাশে মাদ্রাসা গড়ে তোলা হয়েছে। বিহারের পূর্ব দিকের বিশাল দীঘিটি শালদীঘি নামে পরিচিত। সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে দীঘিটি একজন সরকারি কর্মচারীর আওতায় লিজ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম দিকে পুকুর ছিল, এখন তা নেই। উত্তর দিকে জঙ্গলের ওপারে ছোট নিচু জমিটি সম্ভবত পুকুর বা জলাশয় ছিল। বিহারের ভেতরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকের কূপটিও ভরাট হয়ে গেছে।

ঐতিহাসিক বিহারটি খুঁজে পাওয়ার কাহিনিও বেশ মজাদার। উত্তর দিকে মাড়াষ গ্রামের মহিরউদ্দিনের ছেলে তালেব আলী বিহারের পাশের জমি চাষ করতে গিয়ে একটি জরাজীর্ণ ধারালো অস্ত্র (বাইশ) পান। বাড়িতে নিয়ে ধার দিয়ে তা গৃহস্থালির কাজে লাগান তিনি। এ ধারালো অস্ত্র দিয়ে ২/১ কোপে বনের বড় বড় শাল গাছ কাটা যেত। বন বিভাগের কেউ টের পাওয়ার আগেই এ কাজ করে চলেছিলেন তালেব। একদিন ধরা পড়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাকে ওই ধারালো অস্ত্রটি দেখান।

বন বিভাগ অস্ত্রটি নিয়ে পরীক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। পরে জানা যায় অস্ত্রটি ছিল হীরার তৈরি। বিষয়টি জানাজানি হলে আরও মূল্যবান প্প্রত্নবস্তু মেলার সম্ভাবনায় দিনাজপুর জেলা পরিষদ নিজস্ব অর্থে বিহার এলাকা খনন শুরু করে। তালেব আলীকেই বিহার পাহারার চাকরি দেয়া হয়। কয়েক বছর আগে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন তালেব আলী।

এলাকার লোকজন জানান, এখনো বিহারের ইট চুরি হচ্ছে। বিহারের জায়গা অনেকে জবরদখল করে রেখেছেন। বিহারের ইমারতের জায়গা ছাড়া কিছু জায়গা চাষাবাদের জন্য পত্তনি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ কেউ সেগুলোতে বসতবাড়ি গড়ে নিজের জমি বলে দাবি করছেন। বিহারের দুই পাশে দুইটি সাইনবোর্ড ছিল, সেগুলোও চুরি হয়ে গেছে। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ নতুন একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :