এই সময়ের জীবন ও শৈলী

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:৪৫

তায়েব মিল্লাত হোসেন

কেন বলো হৈমন্তিকা, নিজেরে কুণ্ঠিত করে রাখা,
মুখের গুণ্ঠন কেন হিমের ধূমলবর্ণে আঁকা।
―রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নটরাজ, হেমন্ত

প্রকৃতিতে এখন হেমন্ত। বাতাসে হিম হিম ভাব। এর প্রভাব পড়ছে দেহমনে। বদল এসেছে পোশাকে-আশাকে। আলাদা করে ত্বকের যত্ন নিতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও থাকছে বাড়তি নজর।

দুই.
ছয়-ছয়টি ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। তারই মাঝে কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মিলে হেমন্ত। আমাদের যাপিত জীবনে গরম ও শীত বলে যে কাল, তার সন্ধিক্ষণ এনে দেয় এই ঋতু। কার্তিকের ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি দিয়ে গরমের হয় অবসান। হালকা হালকা উত্তুরে বাতাসে হিম হিম ভাবের সূচনা পর্ব এসে যায়। শরীরের নাম মহাশয় যাহা সহাবেন তাহাই সয়। তাই বলে সঙ্গে সঙ্গে সইয়ে নিবে? তা হতে পারে না। কিছুটা সময় দিতে হবে শরীরকে। গরম থেকে শীতের দিকে যাচ্ছে আবহাওয়া। তাইতো কার্তিকে, অগ্রহায়ণে সর্দি, গর্মি আর জ্বর জ্বর ভাব অনেকেরই। আগুয়ান শীত মানিয়ে নেওয়ার আগাম প্রস্তুতি এটা। তবু সতর্ক থাকতে হবে, প্রয়োজনে ছুটতে হবে ডাক্তারবাড়ি।

শরীর নামের যে কারখানা তার ভেতরের সব দাবি মেটাতে হবেই। আবার নজর দিতে হবে ত্বকের দিকেও। চামড়ার সংকোচন কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। নতুন কলেবরে পেট্রোলিয়াম জেলি, লিপজেল আর লোশনের বাজারি প্রচারণা থেকেই যে তা শুধু আঁচ করা যাচ্ছে, তা নয়। আপন আপন ত্বকই বরং বেশি জানান দিচ্ছে। ঠোঁট চরচর করছে। ত্বক রুক্ষ লাগছে। পায়ে ফাটল শুরু হচ্ছে। হেমন্তের এসব লক্ষণ শীতের পদধ্বনি জানিয়ে দেয় আমাদের।

গরম তো আর নেই। বেশি ফিনফিনে পোশাক কিন্তু আর পরা যাবে না। আবার বেশি মোটা বস্ত্র গায়ে চাপানোর কালও চলে আসেনি। সময় আসলে এখন মধ্যপন্থার মানে মাঝামাঝি ধরনের পোশাকের। না পাতলা, না ভারী।

এতক্ষণ যা হলো তা যাপিত জীবনের কথা। ঘর-গেরস্থালির কথা। হেমন্তের স্নিগ্ধতার দিকে চোখ বুলাই এবার। ভোরের সূর্য আর সবুজ ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দুর যে সম্মিলন, তার রূপ তো এখনি মিলবে। গাছের নরম-কচি পাতাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে মিষ্টি রোদ আর সুনীল আকাশ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। হেমন্তের রাতে মেঘমুক্ত আকাশে ফালি ফালি জোছনার আলো অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশিই ঠিকরে পড়ে।

তায়েব মিল্লাত হোসেন: সাংবাদিক