স্বাগত রবিউল আউয়াল

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ১২:০৭

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ খান

চন্দ্রবর্ষের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল। রহমত, বরকত ও অফুরন্ত নেয়ামতে ভরপুর এই মাস প্রতিটি মুমিন বান্দার হৃদয়ে এক মহাসম্মানের জায়গা দখল করে আছে। মুসলিম উম্মাহর জন্য এ মাস যেমন আনন্দের, ঠিক তেমনই বেদনার। কারণ এ মাসেই আল্লাহর প্রিয় হাবিব, সাইয়িদুল মুরসালিন, রহমাতুল্লিল আলামিন, বিশ্ব মানবতার কল্যাণকামী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এই পৃথিবীতে আগমন করেন। আবার এ মাসেই তিনি ইন্তেকাল করেন। যদিও তার জন্ম-মৃত্যুর তারিখের ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে।

তবে সহিহ বর্ণনামতে তার জন্ম এবং মৃত্যুর দিন ছিল সোমবার। আর এটা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই রাসুলের (সা.) জন্মের কারণে বছরের প্রতিটি সোমবার মুসলমানদের কাছে অতি মূল্যবান। সপ্তাহের এ দিনে নফল রোজা রাখার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুল (সা.) কে সোমবারের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এ দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত দান করা হয়েছে।’ (মুসলিম) সুতরাং এ দিনে রোজা রাখা প্রকৃত নবীপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ।

প্রিয়নবীর শুভাগমনে ধন্য বিশ্বজগৎ, আলোকিত মক্কার মরুপ্রান্তর, যার কারণে চিরভাস্বর মদিনাতুল মুনাওয়ারাহ। কারণ, তিনি আইয়ামের জাহেলিয়্যাতের যুগে আগমন করে অজ্ঞানতা, মূর্খতা, কুসংস্কার, মারামারি, হানাহানি, দুর্নীতি ও পাপাচারে লিপ্ত আরবের বর্বর মানুষগুলোকে শুধু সোনার মানুষেই রূপান্তর করে যাননি, বরং আল্লাহর প্রিয় দীন তথা ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে শিখিয়ে গেছেন কীভাবে অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হয়, কীভাবে সমাজে সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হয়। তাই এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, তিনি হলেন উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য রহমতস্বরূপ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-‘সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আপনাকে রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৭ )

রাসুল (সা.) যে বিশ্ব মানবতার জন্য রহমত ও কল্যাণকামী তা উল্লিখিত পবিত্র কোরআনের শাশ্বত আয়াত থেকে অনুমেয়। এছাড়া রাসুল (সা.)-এর পবিত্র জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে রহমতের বারিধারা, যা আমরা তার পবিত্র সিরাতে দেখতে পাই। এ কারণেই বিশ্ব মুসলিমের কাছে এই মাসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সুতরাং আমাদের প্রতি যার অবদান এত অধিক, তাকে ভালোবাসা, তাকে মহব্বত করা শুধু আমাদের কতর্ব্যই নয়, বরং আমাদের ইমানি দায়িত্বও। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের বক্তব্য হলো- ‘(হে নবি! আপনি) বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন, আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)

হজরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত (পরিপূর্ণ) মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমার প্রতি তার ভালোবাসা স্বীয় পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষের চেয়ে অধিক হবে।’ (ইবনে হিব্বান)

প্রশ্ন হতে পারে, রাসুলকে ভালোবাসার নিদর্শন কী? কীভাবে তাকে ভালোবাসতে হবে? সে প্রসঙ্গে হজরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসবে সে যেন আমাকেই ভালোবাসল, আর যে আমাকে ভালোবাসল সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে।’ (তিরমিজি)

সুতরাং রাসুল (সা.)কে ভালোবাসতে হলে তার মহান আদর্শ ও সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরতে হবে। শুধু রবিউল আউয়াল মাসে সিরাতুননবি আর মিলাদ মাহফিল করলে চলবে না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুলের আদর্শকে জীবনের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। কারণ তার আদর্শই সর্বশ্রেষ্ঠ ও উন্নত। এ সম্পর্কে কোরআনে কারিমে বর্ণিত হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম, আয়াত: ৪)

এ ছাড়া রাসুল (সা.) নিজেই ইরশাদ করেন- ‘আমি উন্নত চরিত্র পূর্ণতাকল্পে প্রেরিত হয়েছি।’ (আহমাদ) নিঃসন্দেহে রাসুলের আদর্শই সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ। সুতরাং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার আদর্শ ও সুন্নাত মেনে চলাই হবে রাসুলের প্রতি আমাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

লেখক: প্রবন্ধকার ও অনুবাদক