খালেদাকে ভোটে আনতে কৌশল খুঁজছে বিএনপি

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:৪০

মোসাদ্দেক বশির, ঢাকাটাইমস

আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আনতে না পারলে দণ্ডিত ব্যক্তিরা প্রার্থী হতে পারবেন না-রিটার্নিং কর্মকর্তাদেরকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশনায় আশা দেখছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, এই নির্দেশনার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, দণ্ড স্থগিত করাতে পারলে ভোটে আনা যাবে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে।

বিএনপির নেত্রীর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ায় আপিলের প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়া যাবে। আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়া না গেলেও দণ্ড স্থগিতের আবেদন করার সুযোগ আছে।

সংবিধান অনুযায়ী দুর্নীতি বা নৈতিক স্খলনের কারণে কারও দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে দণ্ড ভোগের পাঁচ বছর পার না করা পর্যন্ত ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। তবে বিচারিক আদালতে দণ্ড হওয়ার পরও একাধিক নেতা নানা সময় ভোটে দাঁড়িয়েছেন উচ্চ আদালতে আপিল করে। ফলে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনের সাত বছরের কারাদণ্ড তার নির্বাচনের পথে বাধা হবে না বলেই মনে করছেন তার আইনজীবীরা।

তবে এখানে বিএনপির দুশ্চিন্তা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় উচ্চ আদালতের রায়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পর ৩০ অক্টোবর সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে হাইকোর্ট। এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনো প্রকাশিত হয়নি।

বিএনপির নেত্রীর আইনজীবীরা ঢাকা টাইমসকে জানান, দুটি মামলাতেই আগামী সপ্তাহে আপিলের পাশাপাশি দণ্ড স্থগিতের আবেদন করা হবে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী এহসানুর রহমান বলেন, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি আমরা হাতে পেয়েছি। আগামী সপ্তাহে এ মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে আশা করি।’

গত ২৯ অক্টোবর দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি আইনজীবীরা হাতে পান গত বুধবার। আর আইন অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে আপিলের সুযোগ আছে। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয় যেহেতু আছে, তাই যতটা সম্ভব বিলম্ব কমানোর চেষ্টা চলছে। রায়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ে কোন কোন ধারায় আপিল করা হবে, সেটি বের করতে কাজ করছেন একদল আইনজীবী।

অবশ্য আপিল গ্রহণ মানেই যে দণ্ড স্থগিত, তা নয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আপিল গ্রহণের পর ২ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা স্থগিত হলেও কারাদণ্ড স্থগিত হয়নি।

অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কী হবে?

কিন্তু প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিষয়ে কী হবে। পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশিত হয়নি, সেটি কবে আসবে সেই তারিখ জানারও সুযোগ নেই। অথচ ভোটে আসতে হলে প্রার্থিতা জমা দেওয়ার সুযোগ আছে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত।

এ ক্ষেত্রে তবে কী হবেÑজানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এহসানুর রহমান বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত না হলেও চেম্বার আদালতে রায় স্থগিতাদেশ চেয়ে (সিএমপি) আবেদন করা হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম শাহজাহান কবির ঢাকা টাইমসকে জানান, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে অনুলিপি লাগে। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অনুলিপি প্রকাশিত না হলেও জরুরি অবস্থায় চেম্বার আদালতে (সিএমপি) আবেদন করা যায়।’

জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুই দুর্নীতি মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘রায়ের সার্টিফাইড কপি বের হওয়ার আগে যেকোনো সময় সিএমপি ফাইল করতে পারে।’
তবে আইনজীবীরা জানান, এই আবেদন করা মানেই দণ্ড স্থগিত নয়। এর ওপর শুনানি হবে, বিচারক আদেশ দেবেন। আবার আবেদনটি তিনি খারিজও করে দিতে পারেন অথবা সেটি আপিল বিভাগেও পাঠিয়ে দিতে পারেন।

আইনে যা-ই থাক, প্রার্থিতা জমা দেবে বিএনপি

বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসন থেকে দলের মনোনয়ন ফরম নেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়ার জন্য। তার পাশাপাশি তিনটি আসনেই বিএনপির একাধিক নেতা জমা দিয়েছেন মনোনয়নপত্র।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, ২৮ নভেম্বরের মধ্যে আপিল করে যদি তার দণ্ড স্থগিত করার আদেশ আনতে পারেন, তাহলে বিএনপির নেত্রীর ভোটে অংশ নেওয়ায় বাধা থাকবে না। আর এর মধ্যে আদেশ আনতে না পারলেও প্রার্থিতা জমা দেওয়া হবে।

আইন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তা কারও প্রার্থিতা বাতিল করলে নির্বাচন কমিশনে আপিলের সুযোগ আছে। সেখানেও বাতিল হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। আর নানা সময় দেখা গেছে, ভোটের আগে আগেও উচ্চ আদালত থেকে আদেশ নিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ফলে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে আরও সময় পাওয়া যাবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বললেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কখনো বলেননি খালেদা জিয়া ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। তিনি সব সময় বলে আসছেন, বিষয়টি আদালত দেখবে।

তবে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ মনে করছেন, চেয়ারপারসনকে বাদ দিয়েই ভোটে যেতে হবে বিএনপিকে। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের অল্প দিন বাকি আছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যে সময় আছে, তাতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে তার (খালেদা জিয়া) নির্বাচনে অংশগ্রহণ হয়তো সম্ভব হবে না।’

আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘নির্বাচন করার জন্য আইনগত পরিস্থিতি হয়নি খালেদা জিয়ার। যদি হয়, তখন দেখা যাবে।’

নির্বাচন কমিশনের যে নির্দেশনা

গত মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যে ব্রিফ করা হয়, সেখানেও দণ্ডিত ব্যক্তিদের প্রার্থিতার বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ সময় কমিশনের আইন শাখার পক্ষ থেকে বলা হয়, বিচারিক আদালতের সাজা উচ্চ আদালতে স্থগিত না হলে প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আপিল চলমান থাকলেও তা আমলে নেওয়ার সুযোগ নেই।

রিটার্নিং কর্মকর্তার এক প্রশ্নে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, এ ধরনের বিষয় থাকলে রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রার্থিতা বাতিল করে দেবেন। পরে কমিশন বিষয়টি দেখবে। আর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষ থেকে কমিশনে আপিলের সুযোগ রয়েছে। একইভাবে কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রার্থীর উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ারও সুযোগ রয়েছে।

ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/এমবি/ইএস