দুই ভাইসহ তিন শহীদের আত্মত্যাগের দিন আজ

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১১:০৯

মোখলেছুর রহমান, মাগুরা

মাগুরার মহম্মদপুর যুদ্ধ দিবস আজ। স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯ নভেম্বরের এই দিনটি ঐতিহাসিক। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদিন পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মহম্মদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে দুই ভাই আহম্মদ হোসেন ও মহম্মদ হোসেন এবং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈনিক মহম্মদ আলী পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন। শহীদ মহম্মদ ও আহম্মদ হোসেন উপজেলার নাগড়িপাড়া গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে।

অক্টোবরের প্রথম দিকে পাকিস্তানি সেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় টিটিডিসি ভবনে (বর্তমান উপজেলা পরিষদ) ক্যাম্প করে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে লুটপাট ও নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। ওই ভবনেই তারা শক্তিশালী পর্যবেক্ষক চৌকি তৈরি করে। এই ক্যাম্প দখলের লক্ষ্যে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন মহম্মদপুরের মুক্তিযোদ্ধারা।

১৮ নভেম্বর আনুমানিক রাত একটায় উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে সাত কিলোমিটার দুরে ঝামা বাজারে সমবেত হন মুক্তিযোদ্ধারা। পরিকল্পনা অনুসারে কমান্ডার কমল সিদ্দিকি বীর উত্তম ও তার বাহিনীর ৫০ জন মক্তিযোদ্ধা টিটিডিসি ভবনের দক্ষিণ কোণে, আবুল খায়ের ও নুর মোস্তফার যৌথ বাহিনীর ৫৫ জন মুক্তিযোদ্ধা উত্তর দিকে, গোলাম ইয়াকুব মিয়া বীর প্রতীকের নেতৃত্বে ২০৫ জন মুক্তিযোদ্ধা দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং আহম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থান নেন।

সিদ্ধান্ত ছিল কমল সিদ্দিকির বাহিনী ও ইয়াকুব হোসেনের বাহিনী আক্রমণ করবে এবং অপর বাহিনী সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। কিন্তু ঝামা বাজার থেকে মহম্মদপুরে আসতে বেশি দেরি হয়ে যাওয়া এবং পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে না পারায় ফজরের আজানের মাত্র আধা ঘণ্টা আগে পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালায়। দীর্ঘক্ষণ দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়।

হানাদার বাহিনীর ব্যাপক গোলাবর্ষণের মুখে একসময় মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় হানাদারদের একটি গুলি আহম্মদ হোসেনের মাথায় বিদ্ধ হয়। বড় ভাই মহম্মদ হোসেন ছোট ভাইকে বাঁচাতে ছুটে গেলে তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। দুই ভাই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে গড়াতে গড়াতে পুকুরের পানিতে পড়ে যান এবং সেখানেই শহীদ হন। অল্প সময়ের মধ্যে শহীদ হন ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈনিক মহম্মদ আলী।

তিন শহীদকে উপজেলার নাগড়িপাড়া গ্রামে পাশাপাশি দাফন করা হয়।

তিন শহীদের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী নানা আয়োজনে আজ পালিত হচ্ছে। মহম্মদপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হাই বলেন, ‘মহান দিনটিতে সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় নিজেরাই যথাযোগ্যভাবে পালন করে থাকি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাসিফুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন বা শহীদ পরিবারের কেউ এ বিষয়ে আমাকে অবহিত করেননি। তবে এমন মহান বীরদের স্মরণে আমি সব সময় সার্বিক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।’