ভোটে আগ্রহী আ.লীগ নেতাদের যেসব স্বজন

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১১:১৪ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:০৮

তানিম আহমেদ

বরাবরের মতো এবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্যের স্বজনেরা নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। কোনো কোনো আসনে নেতারা দাঁড়াতে পারবেন না বলে অন্যদের সামনে আনছেন। কোথাও কোথাও নেতাদের উত্তরাধিকারীরা আছেন মনোনয়নের লড়াইয়ে।

কিশোরগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৯৬ সাল থেকেই নির্বাচন করে আসছেন। এবারও তার মনোনয়ন নিয়ে কোনো সংশয় থাকত না, যদি না তিনি গুরুতর অসুস্থ থাকতেন।

ব্যাংককে চিকিৎসাধীন এই নেতার তিনজন স্বজন একই আসন থেকে ফরম কিনেছেন। এরা হলেন দুই আপন ভাই সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম, সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম এবং চাচাতো ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটো।

আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হয় তার ছেলে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিফকে। দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ী রেজওয়ান এবারও মনোনয়ন পাবেন ধরেই এলাকায় তৎপর।

রাষ্ট্রপতির আরেক ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন আশরাফের আসন কিশোরগঞ্জ-১ থেকে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ফরিদপুর-২ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। এবারও তিনি এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। পাশাপাশি ফরম নিয়েছেন তার ছেলে আয়মান আকবর চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোশাররফ হোসেনের পাশাপাশি ফরম তুলেছেন ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলও।

সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদের বড় ছেলে আজিজুস সামাদ ডন।
নওগাঁ-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন জলিল জন এবার এই আসন থেকে প্রার্থী হতে চাইছেন।

নরসিংদী-৫ আসন থেকে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজুর পাশাপাশি নৌকা প্রতীক পেতে ফরম তুলেছেন ছেলে রাজিব আহমেদ পার্থও।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি চট্টগ্রাম-৮ ও ৯ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এ দুই আসন থেকেই ফরম তুলেছেন তার ছেলে মুজিবুর রহমান।

২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন নুরুল ইসলাম। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নির্বাচন করেননি। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়। পরে ২০১৫ সালে টেকনোক্র্যাট কোটায় তাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী করা হয়।

চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর। তার পিতা প্রয়াত আসাদুজ্জামান এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য। এ আসনে তিনি এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। একই আসন থেকে তার ছেলে তানভীর শাকিল জয়ও ফরম কিনেছেন।

তানভীর শাকিল জয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করে জিতেছিলেন। আইনি জটিলতায় তখন ভোটে দাঁড়াতে পারেননি নাসিম। আর দশম সংসদ নির্বাচনে নাসিম প্রার্থী হওয়ার পর জয় আর ভোট করেননি।

বাগেরহাট-১ আসন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাতিজা শেখ হেলাল উদ্দিন আবার মনোনয়ন পাচ্ছেন, এটা নিশ্চিত প্রায়। তার ছেলে শেখ সারহাম নাসের তন্ময়ের জন্য মনোনয়ন ফরম কেনা হয়েছে বাগেরহাট-২ আসন থেকে।

খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে হেলাল উদ্দিনের ভাই শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলকে। এই আসনে তিনি আসার পর আর কেউ ফরম তোলেননি।

মাদারীপুর-১ আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের নুরে আলম চৌধুরী লিটন। তার ছোট ভাই ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য। ২০১৪ সালে তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও ভোটের প্রস্তুতি রয়েছে তার।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়ের ছেলে মানবেন্দ্র রায় ফরম নিয়েছেন দিনাজপুর-২ আসনের জন্য। এই এলাকায় একাধিকবার নির্বাচিত সতীশ গত দুই নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। গত ১০ বছর ধরে আসনটির প্রতিনিধিত্ব করছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

গাজীপুর-৩ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার রহমত আলী। প্রবীণ এই নেতার নির্বাচন করার মতো শারীরিক সামর্থ্য আছে কি না, এ নিয়ে সংশয় আছে। আর পিতার বিকল্প হিসেবে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ছেলে জামিল আহসান দুর্জয়ও।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য। তার ছেলে সাজেদুল হোসেন দীপু চৌধুরীও একই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

নাটোর-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস। একই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তার মেয়ে যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি।

ঢাকা-৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে চাইছেন গতবার স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ী হাজী সেলিম। একই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তার ছেলে সোলাইমান সেলিম।

ঠাকুরগাঁও-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলাম। এ আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছেন এমপিপুত্র মাজহারুল ইসলাম সুজনও। দবিরুল ইসলাম এই আসন থেকে ছয়বারের সংসদ সদস্য।

কুমিল্লা-৬ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খান। একই আসন থেকে তার দুই সন্তানও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা যিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। আফজল খানের ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরানও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক নির্বাচন করতে পারবেন না। তার নির্বাচনী আসন বাগেরহাট-৩ এ বর্তমান সংসদ সদস্য স্ত্রী হাবিবুন নাহার।

২০০৮ সালে খালেক খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর একই বছরের জাতীয় নির্বাচনে রামপাল আসনে প্রার্থী হন হাবিবুন নাহার। ২০১৩ সালে খুলনায় খালেক হেরে তার এলাকায় ফেরেন। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনে খালেকই পান মনোনয়ন। গত মে মাসে খালেক সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে খুলনা সিটি নির্বাচনে অংশ নিলে ফাঁকা হওয়া আসনে আবার প্রার্থী করা হয় তার স্ত্রীকে।

আওয়ামী লীগের নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মারা যাওয়ার পর ২০১৭ সালের মার্চের উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হয় তার স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তকে। এবারও তিনি নৌকার প্রার্থী হতে ফরম তুলেছেন।

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলী ২০১৫ সালের শেষ দিকে মারা গেলে ফাঁকা হওয়া মৌলভীবাজার-৩ আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হয় তার স্ত্রী সায়রা মহসিনকে। এবারও তিনি মনোনয়ন ফরম তুলেছেন।