সিনেমা দেখে ডাকাতি পেশায়

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

একেএম রানা। বাবার বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হলেও নিজে পড়াশোনার গণ্ডি বেশিদূর পেরোতে পারেননি। ছয় ফুট লম্বা সুঠাম দেহের এই যুবক সব সময় ভারতীয় বাংলা সিনেমা দেখতে পছন্দ করতেন। সিনেমা দেখতে দেখতে নিজেকে নায়কের মতো ভাবতে থাকেন। সিনেমায় নায়কের ব্যাংক লুট বা ছিনতাইয়ের দৃশ্যগুলো তার ভালো লেগে যায়। দশজনকে নিয়ে গড়ে তোলেন একটি বাহিনী। নেমে পড়েন ডাকাতি পেশায়। সিঙ্গাপুর থেকে আনেন ওয়ারলেস সেট, তৈরি করেন ডিবির পোশাক।

ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সোমবার পিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়ে এই বাহিনীর আট সদস্য।
এদের মধ্যে রয়েছে ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) পরিচয়ধারী বাহিনী প্রধান একেএম রানা (৩৮), ওসি পরিচয়ধারী মো. দোলোয়ার হোসেন (৫০) ও মো. সোহাগ খন্দকার (৩১), এসআই পরিচয়ধারী জাভেদ আহমেদ বাবু (৩৭) ও বুলবুল আহমেদ (৩২) এবং কনস্টেবল নাজমুল হোসেন (২৪), মো. আসাদুজ্জামান (৩৫) ও মো. হারুন হিরু (৩২)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় চারটি মোটরসাইকেল, ওয়্যারলেস সেট এবং ছুরি উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
ডিআইজি কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিবি পরিচয়ধারী এই চক্রটি বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে তাদের কাছে থাকা নগদ অর্থ ছিনিয়ে নিত।

গত ২৫ অক্টোবর মালয়েশিয়া প্রবাসী মোস্তাফিজুর রহমান বন্ধুর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পুরানা পল্টন থেকে তিনি সুপ্রভাত নামে একটি বাসে ওঠেন। বাসটি নর্দ্দা নামক এলাকায় পৌঁছালে ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন বাসে উঠে তার কাছে ইয়াবা আছে বাস থেকে নামিয়ে নেয়। পরে একটি মোটরসাইকেলে তুলে গুলশান, বাড্ডা ও হাতিরঝিল হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার বিএসটিআই মোড়ে আনে। ফাঁকা জায়গায় পেয়ে মোস্তাফিজুরের কাছে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এই নিয়ে তাদের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায় তিনি চিৎকার শুরু করেন। স্থানীয়রা এগিয়ে এলে ডিবি পরিচয়ধারী সবাই মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় তাদের বাহিনীর একজনকে ধরে ফেলে জনতা। এই ঘটনায় থানায় একটি মামলা হলে তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।’

ডিআইজি বলেন, ‘মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর সোমবার সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে অভিযান চালিয়ে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় আরও দুইজন পালিয়ে যায়। তাদের কাছ থেকে চারটি মোটরসাইকেল, একজোড়া হ্যান্ডকাফ, দুইটি খেলনা পিস্তল, একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানিয়েছে, তারা রাজধানীর বাবুবাজার, ইসলামপুর, তাঁতীবাজার এলাকায় ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করত। এসব এলাকায় ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের নগদ টাকা নিয়ে কেনাকাটা করতে যায়। আর সেখানেই তাদের সোর্স তৈরি করা আছে। তারাই চক্রকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করত। এজন্য সোর্সকে লুণ্ঠিত টাকার ৪০ ভাগ দিয়ে দিতে হতো। এখনও ওই সব এলাকায় সাতটি চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/এসএস/জেবি)