ভোটের লড়াইয়ে ‘অসফল’ ড. কামাল

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৩৭

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ

জীবনে একবারই সংসদ সদস্য হয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। সেটি ১৯৭৩ সালে। জাসদের প্রার্থী শাহজাহান সিরাজকে হারিয়ে তখনকার ঢাকা-১৪ আসন থেকে জিতেছিলেন তিনি।

এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনে একাধিকবার হেরেছেন ড. কামাল। একেকবার দাঁড়িয়েছেন একেকটি আসন থেকে, কিন্তু জয় আসেনি।

আওয়ামী লীগ থেকে যখন নির্বাচন করেছেন, প্রতিবার দ্বিতীয় হয়েছেন। আর নিজের দল গণফোরামের প্রার্থী হয়ে নগণ্য সংখ্যক ভোট পান।

১৯৯৬ সালে তার গড়া গণফোরাম থেকে ১০৪ জনকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। ড. কামালসহ সব প্রার্থী হারান জামানত। ২০০১ সালে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর আসন থেকে শেষ ভোটে লড়ছেন প্রবীণ এই আইনজীবী।

সেবারও জামানতের শেষ রক্ষা হয়নি। ছয় হাজার ১৮৭ ভোট পেয়ে হারার পর জনতার মন জয়ের লড়াইয়ে ক্ষ্যান্ত দেন ড. কামাল। তারপর আর ভোটে নামেননি।

এরপর সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরেই ছিলেন বর্তমানে ঐক্যফ্রন্ট নেতা। তবে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি আবার সরব হন। তখন তার ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’র তত্ত্বটি তত্ত্বাধায়কের তিন মাসের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টি ছাড়িয়ে যেতে ভূমিকা রাখে।

সাংবিধানিক গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেও ছদ্ম সেনা শাসনের একটি সরকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ব্যাখ্যা কখনো দেননি ড. কামাল। আর ওই আমলে তিনি কালো টাকা জরিমানা দিয়ে সাদা করেছেন বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় এলে রাজনীতিতে কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিলেন ড. কামাল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার তৎপরতা চোখে পড়েনি।

তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন বাহাত্তরের সংবিধান প্রণেতাদের একজন ড. কামাল হোসেন। গড়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর অন্যতম শরিক বিএনপি।

এবারের নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন না, জানিয়েছেন ড. কামাল। যদিও তার দল ধানের শীষ নিয়ে লড়বেÑএটা জানিয়েছেন। আবার ঐক্যফ্রন্ট জিতলে তাকে প্রধানমন্ত্রী করা হবেÑএমন আলোচনাও রয়েছে।

যুবক বয়সেই আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন কামাল হোসেন। নজরে আসেন বঙ্গবন্ধুর। বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন, তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য সম্পদ হবেন। সেই ভাবনা থেকে স্বাধীন দেশে ঠাঁই দেন মন্ত্রিসভায়। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

১৯৭২ সালে প্রণীত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে ছিলেন। ১৯৭৩ সালে নির্বাচনের পর তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন বঙ্গবন্ধু। পরের বছর দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের।

১৯৭৫ সাল পরবর্তী রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান নেই ড. কামালের। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে চারজনকে সরাসরি হত্যা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কারাগারে, কাউকে কাউকে বন্দুকের নলের ভয়ভীতি দেখিয়ে রাখা হয়েছে নিষ্ক্রিয়। তবে ড. কামাল হোসেন চাপে পড়েননি।

১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের হয়ে কামাল হোসেন ভোট পান সবে ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে বিজয়ী বিএনপির আবদুস সাত্তারের বাক্সে পড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট।

১৯৯১ সালে ঢাকার মিরপুর আসনে কামাল হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েন। ১৯৯২ সালে নিজেই রাজনৈতিক দল গণফোরাম গঠন করেন।

নির্বাচনের প্রতীক হয় উদীয়মান সূর্য। এই প্রতীক নিয়ে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় গণফোরাম। ১০৪টি আসনে (৭ম সর্বোচ্চ) প্রার্থী দেয় দলটি। প্রতিটি আসনেই ভরাডুবি হয়।

গণফোরামের প্রার্থীরা বরিশাল বিভাগে মোট ভোট পেয়েছিলেন এক হাজার ৮২৯টি, চট্টগ্রাম বিভাগে আট হাজার ৬৪০টি, ঢাকা বিভাগে ২২ হাজার ৬২৩টি, খুলনা বিভাগে এক হাজার ৫৬৫টি, রাজশাহী বিভাগে ১২ হাজার ১৭টি এবং সিলেট বিভাগে ভোট পেয়েছিলেন সাত হাজার ৫৭৬টি।

গণফোরামের পক্ষে তখন সর্বমোট ভোট পড়েছিল ৫৪ হাজার ২৫০টি। এসব আসনে মোট ভোটারের বিপরীতে দশমিক শূন্য নয় পাঁচ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছিল কামাল হোসেনের দল।

২০০৬ সালের শেষ দিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনের সময় আওয়ামী লীগ যে মহাজোট গড়ে তুলেছিল, সেখানে কামাল হোসেনও যোগ দিয়েছিলেন পল্টন ময়দানের জনসভায়। তবে জরুরি অবস্থা জারির পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে তার দৌড়ঝাঁপের পর মহাজোটে আর তাকে রাখেনি আওয়ামী লীগ।