গাজীপুর-২

রাসেলের সামনে টানা চতুর্থ জয়ের হাতছানি

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:১৪

ইফতেখার রায়হান, গাজীপুর

রাজধানীর লাগোয়া আসন গাজীপুর-২। বরাবরই এই আসনের উত্তাপ ছড়ায় জাতীয় রাজনীতিতে। এই আসনে বড় দলগুলোর বিশেষ নজর থাকে। আগামী নির্বাচনে এই আসনে নৌকাকে বিজয়ী করে মর্যাদা রক্ষার লড়াই আওয়ামী লীগের সামনে। অন্যদিকে বিএনপি আসনটি নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া চেষ্টা করবে।

এই আসনে শেষ তিনবারের এমপি প্রয়াত সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারের বড় ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল। এই আসনে তার বড় কোনো প্রতিপক্ষ নেই। অপরদিকে বিএনপির রয়েছেন একাধিক প্রার্থী।

২০০৪ সালের ৭ মে সন্ত্রাসীদের গুলিতে শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে তার বড় ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন। সেই থেকে আসনটি রাসেলের দখলে। আগামী নির্বাচনেও তিনিই এই আসনে নৌকার হাল ধরছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। তার সামনে এখন টানা চতুর্থ জয়ের হাতছানি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৫টি ওয়ার্ড, কাউলতিয়া ইউনিয়ন ও গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত গাজীপুর-২ । জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার এই আসনে। সাত লাখের অধিক ভোটারের আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রাথী জাহিদ আহসান রাসেল দুই লাখ ৬২ হাজার ৯৬৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার পেয়েছিলেন এক লাখ ৩৮ হাজার ৭৯ ভোট।

তরুণ নেতা রাসেল এমপি হওয়ার পর থেকে এলাকায় আওয়ামী লীগকে আরও সংগঠিত করেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রাসেলে উজ্জীবিত। বিভিন্ন এলাকায় তারা নির্বাচনী সভা, সেমিনার ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।

এমপি রাসেল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার বাবা মানুষকে ভালোবাসতেন। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও জনগণের সেবা করাই ছিল তার স্বপ্ন। বাবার মৃত্যুর পর আপনাদের দোয়া ও সমর্থনে উপনির্বাচন থেকে টানা তিনবার এই এলাকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। এই এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করেছি। বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনেও দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী। মনোনয়ন পেলে রেকর্ডসংখ্যক ভোটে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনাকে আসনটি উপহার দেব ইনশাআল্লাহ।’

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেল। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে পুনরায় বিজয়ী করবে।’

রাসেল ছাড়াও আসনটিতে আওয়ামী লীগের আরও তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। তারা হলেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আজমত উল্লাহ খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলীম উদ্দিন ও আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য মোস্তফা হুমায়ুন হিমু।  
বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন সাবেক সংসদ সদস্য ও গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি হাসান উদ্দিন সরকার। চলতি বছর অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন তিনি।

বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাজহারুল আলম, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন, সহসভাপতি হালিমুজ্জামান, মহানগর যুবদলের সভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক জসিম ভাট, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরিফ হাওলাদার, গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সরাফত হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হান্নান মিয়া। তবে এদের অধিকাংশই নাশকতার বিভিন্ন মামলায় পলাতক রয়েছেন। আসনটিতে বিএনপির কোনো নেতার দৃশ্যমান প্রচারণা দেখা যায়নি এখনও।

হাসান উদ্দিন সরকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছি। সে হিসেবে আমিও একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে দল যাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে নির্বাচিত করবো।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরা প্রচারণা করছেন অথচ বিএনপি নেতারা ঘর থেকে বের হলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে।’

জাতীয় পার্টি থেকে এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক স্বাস্থ্য সচিব ও এরশাদের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এম এম নিয়াজ উদ্দিন, মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আর্মি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহবুব আলম। তবে জাতীয় পার্টি মহাজোটের হয়ে নির্বাচন করলে দলটি আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দেবে বলে জানা গেছে।