সংসদে শক্তিশালী বিরোধীদলের ভূমিকা রাখবে ঐক্যফ্রন্ট

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু
| আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:১১ | প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:০৮

টানা ১০ বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ পরিচালনা করে আসছে। এই দীর্ঘ সময় বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে বিএনপি কত বড় ভুল করেছে তা তারা এখন হাড়ে হাড়ে অনুধাবন করছে। বিএনপির বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। বেগম খালেদা জিয়া জেলে ও তারেক রহমান লন্ডনে থাকার কারণে দলটির বাহিরে ও ভেতরে চলছে নেতৃত্বের লড়াই। এমতাঅবস্থায় আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তারা এককভাবে অংশগ্রহণ না করে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ডক্টর কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছে। দলকে টিকিয়ে রাখার জন্য এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। সম্ভবত লন্ডন থেকে তারেক রহমানও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী যারা একদিন বিএনপিতে ছিলেন তারা আওয়ামী লীগ বিরোধী একটি নুতন স্তম্ভের সন্ধানে ছিলেন। বিএনপির উপর তারা আর ততটা আস্থা রাখতে পারছিলেন না। মোটকথা সরকারবিরোধীরা নতুন আরেকজন নেতার সন্ধানে ছিলেন। কারণ অসুস্থতার জন্য বেগম খালেদা জিয়া এখন দিন দিন অচল হয়ে পড়ছেন। এছাড়া তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরে আসবেন তার কোনো গ্যারান্টি নেই। সুতরাং এভাবে বসে না থেকে আগামী নির্বাচনের পূর্বে নতুন একটি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোট তৈরি করতে হবে। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা ও সরকারবিরোধীরা আবিষ্কার করলো ডক্টর কামাল হোসেন। অনেকের মতে আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে নিয়ে ডক্টর কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ঐক্যফ্রন্টের বেশ কয়েকজন বিজয়ী হয়ে আগামী সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা রাখবে। কারণ ঐক্যফ্রন্ট ইতোমধ্যে কিছুটা হলেও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টে এমন অনেক প্রার্থী আছেন যাদের বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা আছে।

বাংলাদেশের জনগণ অনেকদিন থেকেই জাতীয় সংসদ ও রাজনীতির মাঠে এমনি একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাব অনুভব করে আসছে। দলীয় কোন্দল, দুর্নীতি মামলা ও দুর্বল নেতৃত্বের কারণে এই অভাব পূরণ করতে বিএনপি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাই দলটি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অবর্তমানে ঐক্যফ্রন্টের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। যদিও সূত্র বলছে অন্য কথা। লন্ডন থেকে তারেক রহমানের নির্দেশেই মূলত হচ্ছে সবকিছু। সেখান থেকেই সকল কলকাঠি নাড়াচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে লন্ডন থেকে স্কাইপে প্রার্থী নির্ধারণের সাক্ষাৎ নেওয়ার বিষয়টি তারই প্রমাণ করছে। তবে হঠাৎ করে তারেক রহমানের এই ভূমিকা অনেককেই অবাক করেছে। ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এখন কি করবেন তা সম্ভবত শিগগিরই জানা যাবে।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পূর্বে ঐক্যফ্রন্টে কিছু একটা হয়তো ঘটে যেতে পারে। কিন্তু বাস্তব হয়তো সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পেছনে সম্ভবত অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু কি সেই লক্ষ্য? রাজনীতির এই কৌশলগত খেলা দেখার জন্য নির্বাচনের ফলাফল ও পরবর্তী সময়গুলো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে যেখানে নৌকা সেখানে ধানের শীষ থাকার কথা নয়। জয় বাংলা, জিন্দাবাদ, বাঙালি আর বাংলাদেশি আজ একই মঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে তিনটি শর্ত দিয়েছেন। তার মতে যারা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে তাদের এই তিনটি শর্ত মানতে হবে। শর্তগুলো হলো, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে শহীদ জিয়া বলতে হবে। জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে স্বীকার করতে হবে ও শেষ শর্ত মনোনয়নপত্র দাখিলের সঙ্গে সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে হবে। আওয়ামী লীগ অথবা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের রাজনীতি থেকে যারা ঐক্যফ্রন্টে আছেন তাদের পক্ষে কোনো শর্তই মানা সম্ভব নয়। কারণ ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি প্রতিষ্ঠিত জোট নয়। বিএনপি এখানে এসে যোগদান করেছে। বিএনপির জোট হলো ২০ দলীয় জোট যার অস্ত্বিতে এখন ভাঙন ধরেছে। সুতরাং গয়েশ্বর রায় চৌধুরীর এ ধরনের দাবির কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং বিএনপির প্রতীককে ঐক্যফ্রন্ট নিজেদের প্রতীক নিয়েছে বলে তাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।

গয়েশ্বর রায় চৌধুরী আরও বলেন, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে আর কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কথা বলবে- এমন চলবে না। এ ধরনের লোকদের ধানের শীষ প্রতীক নেওয়ার কোনো অধিকার নেই। এখানেই বিএনপির আভ্যন্তরীণ কোন্দল পরিষ্কারভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে। শুরুতেই বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের বিরোধীতা করেন। কিন্তু সিনিয়ার নেতারা দলের সাম্প্রতিক দুর্বলতা ও কোন্দল তুলে ধরে তারেক রহমানের সম্মতি আদায় করেন। যদিও তারেক দলের সিনিয়র নেতাদের সরিয়ে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির পক্ষে তবুও বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। এক সময়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এখন চরম অবস্থার মধ্যে দিন পার করছে। ইতোমধ্যেই দলের দুরবস্থা দেখে অনেকেই কেটে পড়েছেন। আরও অনেকে সরে পড়ার চিন্তাভাবনা করছেন। দলটির অবস্থা দিন দিন এখন অনেকটা এরশাদের জাতীয় পার্টির মত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেনাবাহিনী সমর্থিত ফখরুদ্দিন আহমেদ সরকারের দুই বত্সর ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ১০ বত্সর মোট ১২ বত্সর ক্ষমতার বাহিরে থাকাতে দলটিকে এখন একত্রিত রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। পুনরায় পাঁচ বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসলে তাদের রাজনীতির মাঠে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে বলে দলের অনেক নেতা মনে করছেন।

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে প্রাক্তন আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করেন এমন লোকের সংখ্যা কম নয়। ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন একজন প্রাক্তন আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী জোটের প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে হেরে যান। মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর কথা না হয় বাদই দিলাম। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মাহমুদুর রহমান মান্নাও প্রাক্তন আওয়ামী লীগার। এছাড়াও অনেকে আছেন যারা বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে হলেও তারা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। সুতরাং এসব নেতারা গয়েশ্বর রায় চৌধুরীর শর্তগুলো হয়তো মানবেন না। পরিস্থিতির কারণে তারেক রহমানের বিএনপি এ ধরনের রাজনীতিবিদদের আগলে ধরে রাখতে বাধ্য বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। আর তা না হলে খুব শিগগিরই হ য ব র ল নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের পূর্বেই হয়তো বিভক্ত হয়ে যাবে। বাংলাদেশের জনগণের আশা করছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ঐক্যফ্রন্ট আগামী সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধীদলের ভূমিকা রাখতে পারব। উচ্চ শিক্ষিত ও যোগ্যতাসম্পন্ন বেশ কয়েকজন প্রার্থী ঐক্যফ্রন্টের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। সূত্রমতে সরকারও সম্ভবত তাই চাইছেন। কারণ আওয়ামী লীগের বিকল্প শক্তি হলো বিএনপি। এই দলটিকে দুর্বল করতে হলে এ পথেই হাটতে হবে। বিভিন্ন দলের সংমিশ্রণে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচিত হলে বিশ্বে সরকারের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে এবং তা হবে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য সবচেয়ে বড় সফলতা।

লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :