আশাহত হতে হচ্ছে শরিকদের

এম গোলাম মোস্তফা
 | প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:২৬

বিএনপির সঙ্গে আসন বণ্টনের আলোচনায় বসতে যাওয়া ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা যত আসন চাইছে আর বিএনপি যত দিতে চাইছে তার মধ্যে বিস্তর ফারাক। ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে কেবল গণফোরামই চেয়েছে ১৬০টি আসন। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে ধরেই এই কয়টি আসন চেয়েছে তারা। মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এরই মধ্যে ৩৫টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। আ স ম আবদুর রবের জেএসডি চেয়েছে ২০টি আসন। আর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আলোচনার আগে আসন সংখ্যা জানাতে রাজি নয়।

তবে বিএনপির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত বলছে, ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০টি আসনে তারা ছাড় দেবে। এর মধ্যে যেমন ২০ দলের শরিক আছে, তেমনি আছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

২০ দলের শরিকদের বিএনপি ২০০৮ সালেও ৫০টির কাছাকাছি আসনে ছাড় দিয়েছিল। তখন জামায়াত পেয়েছিল ৩৫টি। তবে এবার দলটিকে ২০ থেকে ২৫টি আসন দিতে চাইছে বিএনপি। আর ২০ দলে অন্য শরিকরা পেতে পারে বড়জোড় ১০টি। বাকিগুলো পাবে ঐক্যফ্রন্ট।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন, তারা কমপক্ষে ১০০টি আসন পাচ্ছেন ধরে নিয়েই বিএনপির সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে যাচ্ছেন। আর এই আসনগুলোতে জয়ের মতো প্রার্থী তাদের আছে বলেই দাবি সুব্রতর।

আগামী ৩০ ডিসেম্বরের ভোটকে সামনে রেখে দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের প্রার্থী বাছাই করতেই হিমশিম খাচ্ছে। এর মধ্যে আবার তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকদের জন্যও রাখতে হচ্ছে আসন। কিন্তু স্থানীয় পর্যায় থেকে চাপ আছে সেখানে দলীয় প্রার্থী দেয়ার।

এর মধ্যে ভোটের হিসাবে প্রায় গুরুত্বহীন দলগুলোও আকাশচুম্বউ চাহিদাপত্র দিচ্ছে বড় দলগুলোকে। আর এ কারণে দুই দলই আছে ঝামেলায়। এর মধ্যে বিএনপিতে আবার সমস্যা বেশি। সেখানে ২০ দলের পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের দাবিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।

আসন বণ্টন নিয়ে শরিকদের সঙ্গে এখনো বৈঠক হয়নি বিএনপির। যদিও তারা কোনটা চায়, সেটি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এখানেই বেধেছে গোল। কারণ শরিক দলগুলো যেসব আসন চেয়েছে তার মধ্যে একাধিক আসনে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও একাধিকবারের সংসদ সদস্যও আছেন।

ঢাকা-২ ও ৩ আসন থেকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু নির্বাচন করতে চান। এই আসন দুটিতে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে। একটিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান এবং অন্যটিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম-১৪ থেকে নির্বাচন করতে চান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সেখানে প্রার্থী আছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির অলি আহমেদ।

জানতে চাইলে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা গণফোরাম থেকে ১৬০ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করেছি। তবে একটি আসন নিয়েও আমরা কোনো ঝুঁকিতে যাব না। অন্য শরিক দলের চেয়ে যদি আমাদের প্রার্থী যোগ্য হয়, জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বেশি হয়, আমরা সেটা নিয়ে কথা বলব। আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু চূড়ান্ত করা হবে।’ ‘আমরা ইউনেবল ক্যান্ডিডেট চাই, সেটা যে দলেরই হোক। কোনো অবস্থাতেই আমরা রিজেক্ট হতে চাই না। আমরা জেতা প্রার্থী দেব। এ বিষয়ে আমাদের সবার ঐক্যমত্য থাকবে।’

আপনারা এত বেশি আসন চাইছেন কেন- জানতে চাইলে সুব্রত বলেন, ‘এভাবে বলতে পারি আমাদের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের ১০০টির মতো আসন ছাড়তে পারে বিএনপি।’

গণফোরাম বা ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিক দলগুলো ভোটের রাজনীতিতে একেবারেই দুর্বল। অতীতের নানা নির্বাচনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে এত বেশি আসন দাবি করা কতটা যৌক্তিক- এই প্রশ্ন করলে সুব্রত বলেন, ‘আগের পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি কী এক? আমরা যে কয়টা প্রার্থী দেব, জেতার মতোই দেব।’

নাগরিক ঐক্য আবার যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তাদের মধ্যে একজন ফেনী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান। আর নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আইন নোটিশও পাঠিয়েছেন ওই নেতা।

মান্না বলেন, ‘আমরা পুরো শক্তি নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। সারাদেশে আমাদের সংগঠনটি গুছিয়ে নেয়ার কাজটিও করতে চাই।’ জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, ‘আমাদের চাওয়া ২০টি আসন। তবে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে কতটিতে আমরা নির্বাচন করব।’

যেসব আসনে বিএনপি এবং শরিকদের হেভিওয়েট প্রার্থী আছে, কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা নির্বাচন করতে চায় সেখানে কীভাবে সমাধান হবে? এমন প্রশ্নে আব্দুল মালেক রতন বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যা সমাধান হবে। তবে এ ক্ষেত্রে অন্য পলিসি নির্ধারণ হবে। আমরা সবাই বসে সেটা সিদ্ধান্ত হবে, সেটাই হবে।’

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী মনে করেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, ‘আসন নিয়ে যেখানে বলার দরকার সেখানে না বলে, আগেই কত আসন চাই সেটা বলতে চাই না। এট আমার নীতিতে যায় না।’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যস্থতাকারী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির বাইরে যে কয়টি দল আছে তাদের যে কয়জন ভালো প্রার্থী আছে তাদের সবাই মনোনয়ন পাবে।’

যেসব আসনে বিএনপি ও অন্য শরিকদের হেভিওয়েট প্রার্থী আছে, সেখানে কীভাবে বিরোধের মীমাংসা হবে কি না- জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘কোথায় আছে এমন?’

চট্টগ্রাম-১৪ আসনের বিষয়টি জানালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপদেষ্টা বলেন, ‘ওই আসনে কর্নেল অলি আছে, ঠিকই। সেখানে তাকে (সুব্রত চৌধুরীকে) বলতে হবে যে অলির চেয়ে বেশি ভোটে জিতে আসবে। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের সমস্যা হবে না।’

বিএনপি কী ভাবছে?

শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রত্যেক দল ও জোটের সঙ্গে বসতে হবে। আলোচনার পরে আমরা ঠিক করব। শরিক দলগুলো এখন নিজেরা গোছাচ্ছে। বিএনপিও নিজেদের মধ্যে বসে প্রার্থী বাছাই করবে। যে কোনো দলই যোগ্য বা জেতার মতো প্রার্থী পেলে তাকে মনোনয়ন দিতে চাইবে।’

২০দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকা টাইমসকে, ‘বিএনপির সঙ্গে দুটি জোট আছে। এসব দলে অনেক যোগ্য প্রার্থীও আছেন। আমাদেরও অনেক আগ্রহী প্রার্থী আছে। আমরা আসন বণ্টন নিয়েই কাজ করছি। শিগগিরই সব জানতে পারবেন।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :