বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই!

প্রভাষ আমিন
 | প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৫৮

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি গালাগালের। প্রতিপক্ষকে যিনি যত বেশি নোংরা ভাষায় গালি দিতে পারবেন, দলে তিনি ততই গুরুত্বপূর্ণ। মাঠের এই গালাগালের প্রবণতা আমরা টেনে নিয়ে গেছি সংসদেও। কার্যকর বিরোধী দল ছিল না বলে দশম সংসদ অনেক পরিচ্ছন্ন ছিল। কিন্তু আগের বেশ কয়েকটি সংসদ কলঙ্কিত হয়েছে পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়িতে। আমাদের রাজনীতিবিদদের লেখালেখির অভ্যাস কম। বড় নেতাদের নিয়েও লেখালেখি খুব বেশি হয়নি। সম্প্রতি দুটি চমৎকার ঘটনা ঘটেছে। গত ১৬ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছে শেখ হাসিনাকে নিয়ে নির্মিত ডকুফিকশন ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’। আর তার দুদিন পর ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছে খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা বই ‘বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ, হার স্টোরি’।

শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া বাংলাদেশের দুটি রাজনৈতিক ধারার নেতৃত্ব দেন। স্বৈরাচার এরশাদকে হটাতে দুজনই সমান্তরালভাবে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। ৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ধ্বংস হতে বসেছিল আওয়ামী লীগ। শত অত্যাচার-নির্যাতনেও আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা টিকিয়ে রেখেছিলেন দল। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা হাল ধরলে নৌকার পালে হাওয়া লাগে। তারপর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি চলে দল পুনর্গঠনের পালাও। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সারা বিশ্বেই প্রশংসিত এক নেত্রী।

১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ধ্বংসের মুখে পড়েছিল বিএনপিও। গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে নেমে খালেদা জিয়া শক্ত হাতে বিএনপির নিয়ন্ত্রণ নেন। প্রথমে তিনি বিএনপি ঐক্যবদ্ধ করেন, তারপর ভাবমূর্তি বদলে দেন। ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেয়া বিএনপি বেগম জিয়ার নেতৃত্বে আপসহীনভাবে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে। ফলও পায় হাতেনাতে। এরশাদের পতনের পর ৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সবাইকে অবাক করে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। পরে আরো দুবার প্রধানমন্ত্রীর হলেও খালেদা জিয়া এখন দুটি দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের দ- নিয়ে কারাগারে আছেন।

কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস লিখতে গেলে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুজনের জন্য আলাদা আলাদা অধ্যায় লিখতে হবে।

পিপলু খানের বানানো ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’-এ অবশ্য অন্য এক শেখ হাসিনাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। ৭০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে রাজনীতি আছে সামান্যই। শেখ হাসিনাকে নিয়ে বানানো ডকুফিকশনটি দেখেছি, ভালো লেগেছে। বেগম জিয়াকে নিয়ে লেখা বইটিও পড়তে চাই। কিন্তু সমস্যা হলো সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর লেখা বইটির দাম ২ হাজার টাকা। টাকাও না হয় জোগাড় করা গেল। কিন্তু সাধারণ মানুষ কি ৭১৮ পৃষ্ঠার ইংরেজি বই পড়তে পারবে? তাহলে বইটি কাদের জন্য লিখলেন শ্রদ্ধেয় সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ? হয়তো ভবিষ্যতে বইটি বাংলায় অনুবাদ হবে। কিন্তু বইটি আগে বাংলায় লিখলেই ভালো হতো।

একটা প্রশ্ন দিয়ে শেষ করছি, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মনে করেন, শেখ হাসিনাকে বানানো তথ্যচিত্র প্রদর্শন নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন। শেখ হাসিনাকে নিয়ে বানানো তথ্যচিত্র যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়, তাহলে খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা বই কেন আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে না জনাব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ?

আমি মনে করি, কোনোটিই আচরণবিধির লঙ্ঘন নয়। শেখ হাসিনাকে নিয়ে তথ্যচিত্র আর বেগম জিয়াকে নিয়ে লেখা বই; অবশ্যই আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হবে। পাল্টাপাল্টি গালাগাল থেকে লড়াইটা হোক বুদ্ধিবৃত্তিক।

প্রভাষ আমিন: বার্তাপ্রধান, এটিএন নিউজ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :