আনিসুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা

শেখ আদনান ফাহাদ
 | প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৩৮

আজ জননন্দিত নগরপিতা আনিসুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গেল বছর এই দিনে সবাইকে কাঁদিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক না ফেরার দেশে চলে যান। সশরীরে আনিসুল হক আর ফিরবেন না, কিন্তু আনিসুল হক তার কর্ম দিয়ে বারবার ফিরে আসেন নগর-সচেতন মানুষের মনে ও মগজে।

গেল বছর আনিসুল হক এর প্রয়াণ দিবসের পরের দিন এক সিএনজি অটোরিকশা চালকের সাথে কথা হচ্ছিল। এ নিয়ে একটা লেখাও সেদিন লিখেছিলাম। সেই চালক ভাই খুব আফসোস করেছিলেন আনিসুল হকের জন্য। এক বছর আগের সে লেখা থেকে চালক নূর ইসলামের একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করছি। নূর ইসলাম বলেছিলেন, ‘জীবনে মানুষ দেখলাম দুইডা, শেখ হাসিনা আর আনিসুল হক। বয়স তো খুব বেশী না। কত হইব? ৪০ এর বেশি না! এই জীবনে সবাইরে দেখলাম বাটপারি করতে। কয় একটা, করে আরেকটা। কিন্তু এই শেখ হাসিনা আর আনিসুল হক পুরাই উল্টা। এখন শেখ হাসিনা কেমনে কী করে, সেটাই দেখবার বিষয়। ইমুন একটা মেয়র কই পাইব উনি’?

নূর ইসলাম আমাকে জানিয়েছিলেন, আনিসুল হক উত্তরা ও মিরপুরের রাস্তাগুলো বড় করেছেন, খোলা ডাস্টবিন গুলো সরিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ঘর করে সেখানে ময়লা রাখার ব্যবস্থা করেছেন। নূর ইসলাম বলেছিলেন, ‘আগে যহন ডাস্টবিনের সামনে গাড়ি থামাইতাম, মনে হইত এক্ষনি বমি হইয়া যাইব’।

আনিসুল হকের মৃত্যুর পর উত্তরায় গিয়ে তাঁকে খুঁজেছি। রাস্তায়, ফুটপাতে আনিসুল হককে খুঁজলাম। অনেক জায়গায় আনিসুল হকের কাজের সাক্ষর দেখেছি। ঘুরতে ঘুরতে উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরে ধলিপাড়া নামের জায়গায় গেলাম। আগে এখানে মানুষ পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করত। বিশাল বড় এক ডাস্টবিন ছিল এখানে। গন্ধে টেকা দায় ছিল। আর এখন দেখলাম, একদম পরিষ্কার। এমন একাধিক জায়গায় গিয়ে স্বচক্ষে পরিবর্তনের সাক্ষী হতে পারলাম। মৃত্যুর আগেই উত্তরার প্রায় ৮০ ভাগ রাস্তা ঠিক করে ফেলতে পেরেছিলেন আনিসুল হক। হাঁটতে হাঁটতে সেদিন এক পর্যায়ে রিকশা নিয়েছিলাম। পুরনো লেখা থেকে সেদিনের রিকশা চালকের কথাগুলো আবার পড়লাম।

সেদিনের উত্তরা ভ্রমণের সঙ্গী, দিনাজপুর থেকে ঢাকায় আসা রিকশাচালক আলমগীর হোসেনও আনিসুল হকের কর্মে মুগ্ধ ছিল। আলমগীর বলেছিল, আগের চেয়ে অনেক আরামে রিকশা চালানো যাচ্ছে উত্তরায়। আনিসুল হক রাস্তা বড় করেছেন, মসৃণ করেছেন।

এমন মেয়র কি আগে কখনো পেয়েছিল যাদুর শহর ঢাকা? হ্যা, আনিসুল হক আমাদের কষ্টের শহর ঢাকায় সব সমস্যার সমাধান করে যেতে পারেন নি। কয়েক যুগ ধরে জমা হওয়া জঞ্জাল ২/৩ বছরে সাফ করা কোনো মানব সন্তানের পক্ষে সম্ভব না। আনিসুল হকের মত দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনও অনেক কাজ করার চেষ্টা করছেন। তবে আমার মনে হয়, আনিসুল হক বেশি সফল ছিলেন। আমিনবাজার, গাবতলি বাস স্ট্যান্ড আর তেজগাঁও এর কুখ্যাত ট্রাক স্ট্যান্ড সাফ করে আনিসুল হক যেন যাদু দেখিয়েছেন।

উত্তরা, গুলশান, বারিধারা, বনানীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ঢাকা। দক্ষিণের ঢাকায় সমস্যা বেশী, তাই এদিকের মেয়র সাঈদ খোকন তুলনামূলক কম সফল। তাছাড়া আনিসুল হকের আশপাশে রাজনৈতিক টাউটদের আনাগোনা ছিল না। সাঈদ খোকনও অনেক কাজ করে চলেছেন।

রাজধানী শহরকে ভালোবেসে এর আমূল পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম উদ্যোগ হিসেবে সিটি কর্পোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। আমরা অনেকেই না বুঝে সে সময় ক্ষুব্ধ হয়েছি। সিটি কর্পোরেশন ভেঙ্গে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্ত যে কতবড় আশীর্বাদ হয়ে এসেছে, সেটি এখন নিশ্চয় নিন্দুকরা স্বীকার করবেন। আনিসুল হকের প্রথমদিককার নানা সাক্ষাৎকার দেখে আমাদের কাছে বাগাড়ম্বর মনে হত। মনে হত জনপ্রতিনিধিরা কত কথা বলেন, আবার ভুলে যান। লোভনীয় মেয়র পদের জন্য প্রার্থীর অভাব ছিল না। কিন্তু শেখ হাসিনা কী করলেন! আনিসুল হককে খুঁজে পেলেন। আনিসুল হক! একসময়ের টেলিভিশন উপস্থাপক, পরবর্তীতে সফল ব্যবসায়ী। তিনি হবেন জনপ্রতিনিধি! আমারা অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলাম। ব্যবসায়ী তো মুনাফা বুঝবেন, সাধারণ মানুষের কষ্ট কী বুঝবেন? অথচ দেখেন, আনিসুল হক আমাদের সকলের আশংকা মিথ্যা প্রমাণিত করলেন।

আনিসুল হকের উপর অনেক ভরসা করেছিলেন মানবতার জননী-খ্যাত শেখ হাসিনা। সে ভরসার দাম দিতে দিনরাত পরিশ্রম করে ঢাকা মহানগরীর মোটা চামড়ায় বেশ ভালোই চিমটি কাটতে পেরেছিলেন আনিসুল হক। কাজ করতে করতে উপারেই চলে গেলেন। মানুষের মাঝে দিয়ে গেলেন আশা-আকাংখার বিশাল এক বেলুন। এখন এই বেলুন সামলানোর গুরুদায়িত্ব পালন করবেন কে? বেলুন যেন ফুটো হয়ে না যায়। আরেকজন আনিসুল হক খুঁজে বের করতে হবে এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে। শেষ পর্যন্ত মেয়র নির্বাচন আর হয়নি। আদালতের একটি নির্দেশে মেয়র নির্বাচন স্থগিত আছে।

দেখতে দেখতে একাদশ জাতীয় নির্বাচন চলে এসেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসতে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দেশের অগ্রগতিকে চলমান রাখার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন অতীব জরুরী। আনিসুল হককে রাজনীতিতে এনেছিলেন শেখ হাসিনা। এবার যেমন আনলেন বাংলদেশের প্রাণ মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। শেখ হাসিনা নিজে পরিচ্ছন্ন মানুষ, পরিচ্ছন্ন মানুষ তিনি পছন্দ করেন। বাংলাদেশের ভালো করা যায় কীভাবে এ নিয়েই শেখ হাসিনার সব চিন্তা। আনিসুল হককে ভালোবেসে, মাশরাফিকে ভালোবেসে তাই উন্নয়নবিরোধী শক্তিকে রুখে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :