যুদ্ধাপরাধ মামলার দুই আসামি বিএনপির প্রার্থী

সিরাজুম সালেকীন
 | প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৩৮

বিএনপির চিঠি পেয়ে ভোটে দাঁড়াতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি দুই নেতা। এদের একজন দাঁড়িয়েছেন বগুড়া থেকে, অন্যজন কুষ্টিয়া থেকে।

বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনে বিএনপি নেতা আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তার মেয়ে নাছিমা আক্তার লাকি। বিএনপির এই নেতা বিদেশে পলাতক।

অন্যদিকে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হতে চাইছেন নুরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিক।

গত বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা তো বলেছি কোনো যুদ্ধাপরাধীকে আমাদের প্রতীক দেব না। কেউ যুদ্ধাপরাধ না কইরা থাকলে তাকে দিতে অসুবিধা কী?’

আনছার প্রামাণিকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

কুষ্টিয়া-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয় ২০০৯ সালের ১০ জুন। খোকসা থানায় করা ওই মামলা ২০১৫ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থান্তান্তর হয়। এই মামলায় আনছার চার নম্বর আসামি।

২০০৯ ও ২০১০ সালে কুষ্টিয়া শহর এবং কুমারখালীতে বাসস্ট্যান্ডে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে যে রাজাকারের তালিকা করা হয়, সেখানে নাম আছে আনছারের। ওই তালিকায় জিয়াউর রহমানের আমলে প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান, এরশাদ সরকারের সাবেক খাদ্য প্রতিমন্ত্রী কোরবান আলীর পরেই আনছারের নাম আছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএনপির নেতা আনছার। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা দেখে প্রতিপক্ষ এসব গুজব ছড়াচ্ছে। আর আমি আওয়ামী পরিবারের ছেলে।’

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় আনছার প্রামাণিক কুমারখালী উপজেলায় রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। রাজাকাররা সে সময় কুমারখালী বাজারে কালীদাস, কালাদত্ত ও চিত্তশার দোকান লুট করে। এ ছাড়া যদুবয়রা গোবিন্দপুর গ্রামে গৌড় ঠাকুরের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

কুমারখালী উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বিএনপির এই প্রার্থী অনেক বাড়িতে লুটপাট করেছে। বিশেষ করে, হিন্দুদের ওপর তার পরিবার বেশি নির্যাতন করত। কুমারখালী-খোকসার মাঝামাঝি বেশ কয়েকটি গ্রামে সে লুটপাট চালিয়েছিল।’

কুমারখালী মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতির সভাপতি এটিএন আবুল মনছুর মজনু জানান, ‘যুদ্ধ চলাকালীন হেলালপুর গ্রামের বীরেন্দ্র নাথ ও ধীরেন্দ্র নাথ নামে দুই ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের ছোট ভাই হরেন্দ্র নাথ আন্তর্জাতিক বিচার ট্রাইবুনালে একটি মামলা করে। সেটা এখনো তদন্তাধীন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যুদ্ধের সময় আমি মেট্রিক পাস করি। বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পর আমি রাস্তায় ছিলাম; প্রতিবাদ করেছি। পরে চারবার মেয়র হয়েছি। যেবারই সংসদ নির্বাচন করতে গেছি, সেবারই প্রতিপক্ষ আমাকে দমাতে চেয়েছে। আবার আওয়ামী লীগে আমার মূল্যায়ন হয়নি। পরে বিএনপিতে যোগদান করি। এর পর থেকেই আমার নাম আঁতাত করে ও টাকা-পয়সা দিয়ে রাজাকারের তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।’

যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করারও দাবি করেন আনছার। বলেন, ‘জেনারেল ওসমানী স্বাক্ষরিত একটি সার্টিফিকেট আমার কাছে আছে।’

মুক্তিযোদ্ধারাই তো আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেনÑএমন মন্তব্যের জবাবে বিএনপির প্রার্থী বলেন, ‘যারা অভিযোগ করেছে, তারাই তো আসল মুক্তিযোদ্ধা নয়।’

মোমিনের বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ

আদমদীঘি উপজেলার কায়েতপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ সুবেদ আলী ২০১১ সালের মার্চে বগুড়ায় আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকার বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

মামলায় বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর আদমদীঘি বাজারের পশ্চিমে খারির ব্রিজের উত্তর শ্মশানঘাটে আব্দুল মোমিন তালুকদার গুলি করে মনসুরুল হক তালুকদার টুলু, আব্দুস ছাত্তার, আব্দুল জলিল, আলতাফ হোসেনসহ আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন।

মোমিনের বাবা আব্দুল মজিদ তালুকদার (বর্তমানে মৃত) মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। বাবা-ছেলে দুজনই সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচনের চার মাস আগেই সভা-সেমিনার করে সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান করেছি তারা যেন এই ধরনের লোককে মনোনয়ন না দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, মনোনয়ন দাখিলে পরে দেখলাম জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন এবং তার বাইরেও অনেক চিহ্নিত রাজাকারকে নমিনেশন দিয়েছে বিএনপি।’

‘রাজাকার যারা মনোনয়ন পেয়েছে আমরা তাদের প্রতিহত করব। যেসব আসনে এই রকম কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, সেসব আসনে আমরা পোস্টার করে জনগণকে ভোট দিতে নিষেধ করব।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :