বরগুনা-১: তৃণমূলে শক্ত ঘাঁটি শম্ভুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
 | প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:১৪

বরগুনা ১ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতাকে মনোনয়ন দেয়াকে কেন্দ্র করে সর্বত্র টানটান উত্তেজনা বিরাজ করলেও ভোটের রাজনীতিতে বর্তমান সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন বলে নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও চার বারের নির্বাচিত সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ধারাবাহিকভাবে চারবার নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি অবহেলিত জনপদ বরগুনাকে আধুনিক জনপদে রূপান্তরে মূখ্য ভূমিকা পালন করার কারণে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ তাঁকেই এখানে নৌকার একক প্রার্থী হিসেবে চাইছেন।

সরেজমিনে ঘুরে এবং নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বরগুনা- ১ আসনে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বাইরে অন্য কেউ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন, এমনটিই ভাবতে রাজি নন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এ আসনে সাংসদ শম্ভুর দৃঢ়তা এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে নির্মাণাধীন রয়েছে সুবিশাল জাহাজ নির্মাণ শিল্প, নৌবাহিনীর ঘাঁটি, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বৃহৎ সেতু, একাধিক ইকোনমিক জোনসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার তিনটি আসনের ভেতর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত বরগুনা- ১ আসন থেকে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ এর নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্বও সফলভাবে পালন করেন শম্ভু। পরবর্তীতে ২০০১ এর বিতর্কিত নির্বাচনে এখান থেকে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ এর বিদ্রোহী প্রার্থী, বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন। জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী অভিযোগ করেন, এন্টি আওয়ামী সেন্টিমেন্ট এবং ভোটকে পুঁজি করে সে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন দেলোয়ার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, আমতলী এবং তালতলী নিয়ে গঠিত তৎকালীন বরগুনা- ৩ আসন থেকে সেবার প্রার্থী হয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যঙ্গ করতে এবং বিএনপি জামায়াতের সমর্থকদের সন্তুষ্ট করতে ওই সময় দেলোয়ার সমর্থকদের প্রিয় শ্লোগান ছিলো, "ওই হাসিনা দেইখা যা, দেলোয়ার ভাই এর জনতা"। যা ওই সময়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয় বলে নেতাকর্মীরা দাবী করেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এ জেলার তিনটি আসন ভেঙে দুইটি করা হয়। নবগঠিত বরগুনা-১ আসন থেকে ২০০৮ এবং ২০১৪ এর নির্বাচনে পুনরায় পরপর দুইবার সাংসদ নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি আওয়ামী লীগ এর বিদ্রোহী প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন টানা দুই মেয়াদে।

আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে চাইলে, জেলা আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জানান, এবার এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ৫২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা থাকলেও তৃণমূলে সাংসদ শম্ভুর অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ় হওয়ায় ৩০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী তাঁকে সমর্থন দিয়ে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। অপরদিকে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নেতা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবির ভোটের রাজনীতিতে নাজুক অবস্থায় রয়েছেন বলে তারা বলছেন।

এ প্রতিবেদককে তারা আরও জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর কবির দীর্ঘদিন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেও ভোটের মাঠে তার অবস্থান কখনোই সন্তোষজনক ছিলো না। তারা বলছেন, প্রত্যক্ষ নির্বাচনে জাহাঙ্গীর কখনো জয় উপহার দিতে পারেন নি আওয়ামী লীগকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এবং নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে আরও জানা গেছে, আশির দশকে বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীর কাছে হেরে জামানত হারানোর রেকর্ড যেমন জাহাঙ্গীরের রয়েছে তেমনি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেও, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা এ প্রতিবেদককে জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবির, ২০০৯ এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী লে. কর্ণেল (অব:) আবদুল খালেক এর কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেন। সে নির্বাচনে তিনি তৃতীয় হয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন মন্টুর কাছেও শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। সে নির্বাচনে ২১২ ভোট পেয়ে তিনি জামানত হারান। পাশাপাশি নেতাকর্মীরা আরও জানান, ১৯৭৩ সালে বরগুনা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে ভিপি পদের নির্বাচনেও জাহাঙ্গীর পরাজয় বরণ করেন।

(ঢাকাটাইমস/ ১ ডিসেম্বর/ এইচএফ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় নির্বাচন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা