বাছাইয়ে বাদ ৭৮৬ প্রার্থী, ২০ দলের ৮০

বোরহান উদ্দিন ও এম গোলাম মোস্তফা
| আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:১৯ | প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৪৪

আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে জমা দেয়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়ে গেছেন প্রতি চারজন প্রার্থীর একজন। বাদ পড়ে যাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপি এবং তার ২০ দলীয় জোটের অন্তত ৮০ জন প্রার্থী আছেন।

শুরুতে বিএনপিতে শঙ্কা ছিল মামলা-সংক্রান্ত জটিলতা এবং দণ্ড নিয়ে। তবে সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছেন খেলাপি ঋণের কারণে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের পদ না ছাড়া বা ছাড়লেও পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় বাতিল হয়েছে একাধিক নেতার মনোনয়ন।

তবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী বাদ পড়েছেন অসম্পূর্ণ মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায়। একটি জেলায় একজন প্রার্থী বাদ পড়েছেন মনোনয়নপত্রে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই না মেলায়।

এবার ২৯৫টি আসনে বিএনপির ৬৯৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন, যদিও বিএনপি মনোনয়নের চিঠি দিয়েছিল আট শতাধিক নেতাকে।

এসব আসনের মধ্যে আড়াইশরও বেশি আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী ছিল। আইনি জটিলতায় কেউ বাদ পড়ে যেতে পারেন, এই আশঙ্কা থেকেই বিকল্প রাখা হয় এসব আসনে। তারপরও সব মিলিয়ে পাঁচটি আসনে বিএনপির সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ফলে এখন ২৯০টি আসনে প্রার্থী আছে তাদের।

অবশ্য বাদ পড়ে যাওয়া প্রার্থীদের পক্ষে এখনো সুযোগ আছে। বুধবার পর্যন্ত তারা প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। সেখানেও সন্তুষ্ট না হলে যেতে পারবেন উচ্চ আদালতে।

যারা বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান ও মীর নাছির হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।

মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ দলটির চারজন বর্তমান সংসদ সদস্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবদুল কাদের সিদ্দিকী, তৃণমূল বিএনপির নাজমুল হুদাও।

গণফোরামে যোগ দেয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ আ স ম কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়ার মনোনয়নও বাতিল হয়েছে খেলাপি ঋণের কারণে। তিনি ক্রেডিট কার্ডের খেলাপি। দলটির আরও বেশ কয়েকজনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে একই কারণে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া সবা প্রার্থীই বৈধ ঘোষিত হয়েছেন। তবে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানো বহু নেতার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেছে। যাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে, তাদের সিংহভাগই স্বতন্ত্র এবং তারা বাদ হয়েছেন মূলত একটি কারণে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের এক শতাংশের সই জমা দিতে হয় মনোনয়নপত্রের সঙ্গে। কিন্তু প্রায় সবার ক্ষেত্রেই জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে।

গতকাল দিনভর যাচাই-বাছাই শেষে সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে দুই হাজার ২৭৯টি।’

এবার নির্বাচনে লড়াই করতে ৩০০ আসনে তিন হাজার ৫৬ জন মনোনয়ন দাখিল করেন। এদের মধ্যে বৈধ ঘোষিত হয়েছেন দুই ২৭৯ জন। বাদ পড়াদের মধ্যে কোন দলের কতজন তা জানায়নি নির্বাচন কমিশন। তবে ২০ দলের নেতা অলি আহমেদ জানিয়েছেন, তাদের জোটের ৮০ জনই বাদ পড়েছেন।

দণ্ড ও মামলা জটিলতায় বাদ যারা

দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদ- পাওয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল শুরু থেকেই। তারপরও ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে তার নামে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়। কিন্তু দ- স্থগিত করাতে না পারায় বাতিল হয়েছে তিনটি মনোনয়নপত্রই।

ঢাকা-২ আসনে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডের কারণে। তবে এই আসনে তার ছেলে ইরফান ইবনে আমান অমিতের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম-৫ আসনে সাবেক মীর মো. নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে মীর মো. হেলাল উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে মামলার কারণে।

রাজশাহী-১ আমিনুল হকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে মামলা-সংক্রান্ত সার্টিফাইড কপি না থাকায়। এই আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের মনোনয়নও বাতিল হয়েছে। এখানে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী আভা হকের মনোনয়ন বৈধ ঘোষিত হয়েছে।

রাজশাহী-৫ আসনে নাদিম মোস্তফার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ১০টি মামলার তথ্য গোপন ও ঋণখেলাপি হওয়ায়।

নাটোর-২ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাশকতা ও ঋণখেলাপির মামলায় সাজা হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এখানে বিএনপি নেতার স্ত্রী সাবিনা ইসলাম ছবি।

সাজা হওয়ায় খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনের বিএনপির প্রার্থী ওয়াদুদ ভূঁইয়ার মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সিংহভাগই বাদ খেলাপি ঋণের কারণে

ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী সেলিম ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম-১ আসনে বিএনপির শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-২ আসনে গিয়াস কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৪ আসনে কারাবন্দি আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৬ আসনে গিয়াস কাদের চৌধুরীর ছেলে সামির কাদের চৌধুরী, টাঙ্গাইল-১ আসনে মাহবুব আনাম স্বপন, টাঙ্গাইল-৬ আসনে নূর মোহাম্মাদ খান, ঢাকা-৬ আসনে ইশরাক হোসেন, ঢাকা-৭ আসনে নাসিমা আক্তার কল্পনা, ঢাকা-৯ আসনে আফরোজা আব্বাস, ঢাকা-১৯ আসনের কফিল উদ্দিন, ঢাকা-২০ আসনের সুলতানা আহমেদ, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের আখতারুজ্জামান রঞ্জন, ফেনী-৩ আসনের আবদুল লতিফ জনি, ভোলা-১ আসনে গোলাম নবী আলমগীর, শেরপুর-১ আসনে হযরত আলী, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের আবদুল খালেক।

টাঙ্গাইল-৪ ও ৮ আসনে বিএনপির শরিক ঐক্যফ্রন্টের শরিক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবদুল কাদের সিদ্দিকী, হবিগঞ্জ-১ আসনে গণফোরামের রেজা কিবরিয়া এবং ঢাকা-১০ আসনে গণফোরামের খন্দকার ফরিদুল আলমের প্রার্থিতাও বাতিল হয়েছে খেলাপি ঋণের কারণে।

খুলনা-৬ আসনে বিএনপির শফিকুল আলম মনার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ায়।

চট্টগ্রাম-৩ আসনের মোস্তফা কামাল পাশা এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনে এম মোরশেদ খানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায়। শরীয়তপুর-১ আসনে বিএনপির নাছির উদ্দিন কালুর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ৩০ বছর ধরে টেলিফোন বিল বকেয়া থাকায়।

অসম্পূর্ণ আবেদন

পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী গোলাম মওলা রনির প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে হলফনামায় সই না করায়।

কুমিল্লা-৩ আসনে কে এম মজিবুল হকের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে আয়কর সনদ না থাকায়।

মানিকগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির মঈনুল ইসলাম খান শান্ত ও সিংগাইর উপজেলা চেয়ারম্যান আবিদুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষরে অমিল পাওয়ায়।

ময়মনসিংহ-৮ আসনে রুহুল আমিনের দলীয় কাগজ ছিল না মনোনয়নপত্রের সঙ্গে।

শেরপুর-১ আসনে শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং ফজলুল কাদেরের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে দলীয় মনোনয়নের চিঠি সংযুক্ত না করায়।

পঞ্চগড়-২ আসনে বিএনপির ফরহাদ হোসেন আজাদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ মনোনয়নের কারণে। একই কারণে বাদ পড়েছেন গোপালগঞ্জ-৩ আসনের এস এম জিলানী।

নওগাঁ-৫ আসনে নজমুল হক সনি বাদ পড়েছেন মনোনয়নপত্রে ভুল ও অসম্পূর্ণ থাকায়।

দিনাজপুর-১ আসনের মোহাম্মদ হানিফ বাদ পড়েছেন আয়করের কাগজপত্র না দেয়ায়।

স্থানীয় সরকারের পদ-সংক্রান্ত জটিলতা

ঢাকা-১ আসনে বিএনপির আবু আশফাক এবং ফাহিমা হোসেন জুবলীর মনোনয়ন বাতিলের কারণ স্থানীয় সরকারে তাদের পদ। নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে আবু আশফাক পদত্যাগ করলেও নির্বাচন কমিশন বলছে, পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। অন্যদিকে দোহার উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ না ছেড়েই মনোনয়নপত্র জমা দেন ফাহিমা হোসেন জুবলী। এই আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই।

ঢাকা-২০ আসনে ধামরাই উপজেলার চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন, মানিকগঞ্জ-১ আসনে তোজাম্মেল হক (দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান), মানিকগঞ্জ-৩ আসনে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় তারা বাদ পড়েছেন।

জামালপুর-৪ আসনে ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম বাদ পড়ে গেছেন সরিষাবাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে যথাযথভাবে পদত্যাগ না করায়। ময়মনসিংহ-১ আসনের আবুল বাশার আকন্দের মনোনয়নও একই কারণে বাতিল হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ না ছেড়েই ময়মনসিংহ-৩ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন আহাম্মেদ তাইয়েবুর রহমান হিরন, ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনের কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ ওয়ালিদ, ময়মনসিংহ-৭ আসনের জয়নাল আবেদীন, দিনাজপুর-১ আসনে মামুনুর রশিদ চৌধুরী।

পঞ্চগড়-১ আসনের তৌহিদুল ইসলামের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব না ছেড়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায়।

লালমনিরহাট-২ আসনের জাহাঙ্গীর আলম বাদ পড়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ না ছাড়ায়। দিনাজপুর-৩ আসনে বিএনপির সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বাদ পড়েছেন পৌর মেয়রের দায়িত্ব না ছাড়ায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের

বিএনপি নেতারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে: ওবায়দুল কাদের

প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ‘এমপিরাজ’ তৈরি হয়েছে: রিজভী

উপজেলা ভোটের মাঠে বিএনপির তৃণমূল নেতারা

উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ: বিএনপির ৬৪ নেতাকে শোকজ

ভোটের মাঠ থেকে স্বজনদের সরাতে পারেননি আ.লীগের মন্ত্রী-এমপিরা

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে: বিএনপির আরও ৫ নেতা বহিষ্কার

সরকারকে পরাজয় বরণ করতেই হবে: মির্জা ফখরুল

এমপি-মন্ত্রীর স্বজন কারা, সংজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশায় আ.লীগ

মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :