আসন বণ্টন নিয়ে ঐক্যফ্রন্টে ধোঁয়াশা

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:২৭ | প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:২০

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হতে যাওয়া মহাজোটের মতোই আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতায় নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটেও। এ ক্ষেত্রে পুরনো জোট ২০ দলে মোটামুটি এক ধরনের সিদ্ধান্তে আসা গেলেও নতুন জোট ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না বিএনপি।

১৯৯৯ সালে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে জোট করে দুটি নির্বাচন করেছে বিএনপি। প্রথমবার ২০০১ সালে তিনটি এবং পরে ২০০৮ সালে চারটি আসন নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি বিএনপি ও জামায়াত। তখন এসব আসন উন্মুক্ত রাখা হয়।

এবার জামায়াতকে ২০০৮ সালের চেয়ে কম আসন দিয়েছে বিএনপি। এতে খুব বেশি আপত্তি নেই স্বাধীনতাবিরোধী দলটির। বরং বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। যদিও ছেড়ে দেয়া ২৫টির বাইরে আরও পাঁচ-ছয়টি আসনে ছাড় পাওয়ার আশা করছে জামায়াত।

এর বাইরে ২০ দলের শরিক এলডিপিকে চারটি আসনে ছাড় দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের দুই অংশকে চারটি, কল্যাণ পার্টি, মাইনোরিটি জনতা পার্টি ও এনপিপিকে একটি করে আসন ছাড় দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত। খেলাফত মজলিসের দুই অংশ এখনো নিশ্চিত করে আসন পায়নি, যদিও তারা একটি করে আসন চাইছে। এর বাইরে জোটের অন্য কাউকে আসন দেয়া হচ্ছে না।

সমস্যা তৈরি হয়েছে ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে। এই জোটের শরিক গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের দাবি নিয়ে বিএনপিতে আছে নানা প্রতিক্রিয়া। দলটি মনে করে, যতগুলো আসন তারা চাইছে, সেগুলো জেতার মতো সক্ষমতা নেই তাদের। কিন্তু বেশ কিছু আসনে কোনো পক্ষ ছাড় দিতে চাইছে না।

জোটের সবগুলো দল আলাদাভাবে প্রার্থিতা জমা দিয়েছে। এর মধ্যে গণফোরাম ৫৭, জেএসডি ৫০, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩১ এবং নাগরিক ঐক্য নয়টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা দুই জোটকে মোট ৬০টি আসনে ছাড় দেবেন। ইতিমধ্যে ২০ দলের শরিক দলগুলোকে ৩৬টি আসনের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আরও চারটি আসনের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এই হিসাবে ঐক্যফ্রন্টের জন্য বাকি থাকে বড়জোর ২০টি আসন।

কিন্তু ড. কামাল হোসেন আশা করছেন তারা (গণফোরাম) ৩০ থেকে ৪০টি পাবেন। এর বাইরে রয়েছে জেএসডি, জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্য।

শুক্রবার গুলশানে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে আসন নিয়ে আলোচনা হয়, কিন্তু কোনো সমঝোতা হয়নি। তবে সেই আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। গতকাল ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হলেও এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেয়া হয়নি। ড. কামাল কেবল বলেছেন, নির্ধারিত সময়ে সব আসনে একজন করে প্রার্থী নিশ্চিত করা হবে জোটের পক্ষ থেকে।

এর আগে ২৭ নভেম্বর ঐক্যফ্রন্টের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। সেখানেও আসন বণ্টনের আলোচনা আগায়নি। আর সমঝোতা না হওয়ায় ইশতেহার ঘোষণাও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে, যদিও এরই মধ্যে ইশতেহারের ঘোষণা দিয়ে দেয়ার কথা ছিল।

ফ্রন্টের নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী ইশতেহার বিএনপি নাকি ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে প্রকাশ হবে, এ নিয়েও সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়নি।

জানতে চাইলে ইশতেহার কমিটির সদস্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ইশতেহার আগামীকাল নাগাদ শেষ হবে, এর পরে আপনাদের জানিয়ে দেয়া হবে। সরকার আমাদের যেভাবে হয়রানি করছে! ঐক্যফ্রন্ট করার কারণে বিভিন্ন ধরনের আজগুবি মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। এসব কারণে আমাদের সবকিছুতে দেরি হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেএসডির একজন নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আশা করেছিলাম বিএনপি আমাদের সম্মানজনক আসন দেবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবে। কিন্তু বিএনপি যত আসনের কথা বলছে, তা আমাদের জন্য অসম্মানজনক। আসন ভাগাভাগি নিয়ে যদি সমঝোতা না হয় তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হয়তো ভাঙনের মুখে পড়বে।’

জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন শুক্রবার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আসন বণ্টন নিয়ে এখনো কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। বুঝতে পারছি না কী হবে। আজ (গতকাল) একটি বৈঠক আছে, দেখা যাক কী হয়।’

তবে শনিবার এই আলোচনা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়েই এখন ব্যস্ত সময় পার করছি। মনোনয়ন জমা দেয়া এবং নির্বাচন কমিশনের সাথে মিটিং করতেই সময় পার হয়ে যাচ্ছে।’

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আসন বণ্টন নিয়ে আমাদের এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। সমঝোতা কোনো বিষয় না, আমাদের সমঝোতা হবেই।’

(ঢাকাটাইমস/০৩ডিসেম্বর/জিএম/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :