৪ ডিসেম্বর ১৯৭১

হানাদারদের ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ

প্রকাশ | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:৫৪

বিশেষ প্রতিবেদক
১৯৭১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক বগুড়ার দিকে রওনা হয়। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের আজকের দিনে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশের সকল রণক্ষেত্রে হানাদার বাহিনী পিছু হটছিল। মুক্তিবাহিনীর একের পর এক হামলায় পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ক্রমশ পঙ্গু হয়ে পড়ছিল।

এদিন সীমান্ত শহর দর্শনা সম্মিলিত বাহিনীর দখলে চলে আসে। ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী বাংলাদেশে দখলদার বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। চতুর্দিক থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী এগিয়ে আসে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের আকাশে চলে জোর বিমান যুদ্ধ।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য এদিনটি ছিল অস্থির আর উদ্বেগের। পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করেন। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দাবি করে যে, ‘এ মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তান নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে।’

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাশ করানো জন্য যুক্তরাষ্ট্র তখন বৈঠকের পর বৈঠক করছে। এরই মধ্যে খুশির সংবাদ এল- সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো প্রধানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে ভেস্তে গেল। পোল্যান্ডও এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট হেরে গেল। এখন পাকিস্তানের পরাজয় সময়ের ব্যাপার। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের মুখে বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গা থেকে পালানোর পথ খুঁজতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

উৎকণ্ঠাময় এই অবস্থার মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ লিখিতপত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানান।

এদিন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি জামায়াতে ইসলামীর আমীর আবুল আলা মওদুদী ‘প্রতিটি দেশপ্রেমিক মুসলমান প্রেসিডেন্টের সাথে রয়েছে’ বলে ইয়াহিয়া খানকে জানান।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে লক্ষীপুর হানাদার মুক্ত হয়। যুদ্ধের পুরোটা সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আশ-শামস বাহিনীর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষনের ঘটনায় লক্ষীপুর ছিল বিপর্যস্ত। ৩ নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা সিলেটের শমশেরনগর বিমানবন্দর এবং আখাউড়া রেল স্টেশন দখল করেন। ৮ নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা দখল করেন মেহেরপুর। এছাড়া ১১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে কামালপুর নিজেদের আয়ত্তে আনেন।

ঢাকাটাইমস/০৪ডিসেম্বর/ডিএম