‘সিজারের অডিট রিপোর্ট সরকারকে দিতে হবে’

প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:২১ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার বাংলাদেশে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (এমসিএইচ সার্ভিসেস) ও লাইন ডাইরেক্টর (এমসি-আরএএইচ) ডা. মোহাম্মদ শরীফ। এটাকে ভয়াবহ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে তৃতীয় জাতীয় যুব সম্মেলনে  এ কথা বলেন ডা. মোহাম্মদ শরীফ।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি সিজারের অডিট রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দিতে হবে।  আমরা দেখতে চাই কেন এটা বাড়ছে। যেখানে সরকারি হাসপাতালে ৩৫ শতাংশ সিজার করা হচ্ছে। সেখানে বেসরকারি ক্লিনেকে সেটা দাড়িয়েছে ৮৫ শতাংশে।’

সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রাইভেট ক্লিনিকে গেলেই সিজার করে ফেলে এটা একটা ভয়াবহ ব্যপার। এখানে সিজারিয়ান বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার ৮৫ শতাংশ। আমাদের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র আছে, মাননীয় প্রধামমন্ত্রী কমিউনিটিক ক্লিনিক করেছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকে আরও দুইটা রুম বাড়িয়ে সেখানে যারা স্বাস্থ্যসেবা নিয়মিত দেবেন তাদেরও আরও ভালো ট্রেনিং দিতে হবে।’

সবাইকে নরমাল ডেলিভারির  জন্য পদক্ষেপ নিতে উল্লেখ করে তিনি বলেন বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার ঠিক আছে। নরমাল ডেলিভারির রুম আছে কিনা সেটা না থাকলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের গবেষণা করতে হবে। আমাদের দেখতে হবে কেন সিজার করা হয়।  আমরা  এ ব্যাপারে কাজ করছি।’

প্রাইভেট সেক্টর খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন ‘প্রাইভেট ক্লিনিকের সব কিছু খারাপ বললেই হবে না । আজ স্বাস্থ্য সেক্টরের এত উন্নতি হয়েছে প্রাইভেট সেক্টর একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, অনেক সময় দেখা যায় অনেকে ডেলিভারির পেইন (ব্যথা) সহ্য করতে পারে না। ডাক্তার হয়তো বলছেন যে রাতে পেইন সহ্য করতে পারলে সকালে নরমাল ডেলিভারি হবে। কিন্তু দেখা যায় রোগীর অভিভাবক সিজার করানোর জন্য ডাক্তারকে অনুরোধ করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, একটি দেশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হার ১০-১৫ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিত৷

পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে সচেতনতা ও কর্মকাণ্ডের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী  তৃতীয় জাতীয় সম্মেলন যুব সম্মেলন -২০১৮ আয়োজন করে সিরাক-বাংলাদেশ ও ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যালাইয়েন্স ফর ফেমিলি প্লানিং (আইওয়াইএএফপি)।

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে মঙ্গলবার সকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

সারাদেশ থেকে আগত প্রায় তিন শতাধিক অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে সালেহ উদ্দিন বলেন, পরিবার পরিকল্পনা ইস্যুতে তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণ খুব জরুরি।পরিবার পরিকল্পনা বলতে শুধুমাত্র জন্মনিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনাকেই বুঝায় না। বরং পরিবারের পরিকল্পনা এবং সমাজের পরিকল্পনাকেও অন্তর্ভূক্ত করে।

দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তরুণদের জন্য আমাদেরকে বিনিয়োগ করতে হবে বলে মত দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম নুরুন নবী। তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে কথা বলতে আমরা লজ্জাবোধ করি। অথচ পরিবারের সকল ব্যবস্থাপনা হলো পরিবার পরিকল্পনার অংশ। তরুণদেরকে আওয়াজ তুলতে হবে তাদের অধিকারের জন্য। সকল সুবিধাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।’

এই সম্মেলন তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করেন নেদারল্যান্ড দূতাবাসের ‘এসআরএইচআর-জেন্ডার’বিষয়ক ফার্স্ট সেক্রেটারি ড. অ্যানি ভেস্টজেন্স। তার মতে তরুণদের জন্য তথ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে যৌন ও প্রজনন বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে। তাহলে তারা তাদের অধিকার বিষয়ে জানতে পারবে এবং এগিয়ে যেতে সহজ হবে।

ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ ড. এএসএম হাসান বলেন,‘বাংলাদেশে যুবকদের নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্মেলন এটা তৃতীয়।  ইউএনএফপিএর গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো যুবকদের নিয়ে কাজ করা। সিরাক-বাংলাদেশও এ বিষয়ে কাজ করছে। এই কনফারেন্সের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মকাণ্ডে যুবকদের অংশগ্রহণ বহুঅংশে বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সম্মেলনে সিরাক-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এসএম সৈকতের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুব বক্তা হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন তাসনিয়া আহমেদ। এছাড়াও কনফারেন্সের পার্টনার ইউকে এইড, আইওয়াইএএফপি, আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল, আরএইচআরএন এবং জেপাইগোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন। দিনব্যাপী এ সম্মেলনের শেষ  একটি  সেশনে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা অধিদপ্তরের  পরিচালক (এমসিএইচ সার্ভিসেস) ডা. মোহাম্মদ শরীফ। আজ বুধবার  এ সম্মেলন শেষ হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৪নভেম্বর/জেআর/ওআর)