নক্ষত্রের শুভ জন্মদিন

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:১৪

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র তারেক মাসুদ। একাধারে তিনি ছিলেন পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক ও গীতিকার। ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া এই বহু প্রতিভাধর মানুষটি সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে পড়েন ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। 

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মশিউর রহমান মাসুদ এবং মা নুরুন নাহার মাসুদ।

তারেক মাসুদের শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল ফরিদপুরের ভাঙ্গা ঈদগাহ মাদ্রাসা থেকে। ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুরের মশিউর রহমান মাসুদ ও নুরুন নাহার দম্পতির ছেলে মাসুদ এরপর ভর্তি হন ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসায়। সেখান থেকে মৌলানা পাস করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসাশিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। পরে ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন তারেক মাসুদ। প্রায় ২০ বছর তিনি এ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরপর শুরু ছবি নির্মাণের যাত্রা। ২০০২ সালে তার নির্মিত প্রথম ছবি ‘মাটির ময়না’ মুক্তি পায়। ছবিটি তার শৈশবের মাদ্রাসাজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত হয়। ওই বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় ছবিটি।

এরপর তিনি ‘আদম সুরত’, ‘মুক্তির গান’, ‘অন্তর্যাত্রা’, ‘রানওয়ে’সহ বেশ কয়েকটি ছবি নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার ও চ্যানেল আই চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া ফিল্ম সাউথ এশিয়া, কান চলচ্চিত্র উৎসব, মারাকেচ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, থ্রি কন্টিনেন্টন উৎসব, ভারতীয় আন্তর্জাতিক ভিডিও উৎসব, কারা চলচ্চিত্র উৎসব, ডিরেক্টরস গিল্ড অব গ্রেট ব্রিটেন, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব বাংলাদেশে পুরস্কৃত হন।

তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ একজন মার্কিন নাগরিক। এই দম্পতির বিংহাম পুত্রা মাসুদ নিশাদ নামের এক ছেলে রয়েছে। ক্যাথরিন ও তারেক মাসুদ মিলে ঢাকায় অডিওভিশন নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়াও তারেক মাসুদের লোকসংগীত ও লোকজ ধারায় বেশ আগ্রহ ছিল।

যেভাবে মারা যান তারেক মাসুদ

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট। ‘কাগজের ফুল’ নামের একটি ছবির শুটিংয়ের লোকেশন দেখতে তারেক মাসুদ তার সহকর্মীদের নিয়ে পাবনার ইছামতী নদীর তীরে যান। লোকেশন নির্বাচন শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে তিনি গাড়িবহর নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঘিওর এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাস তারেক মাসুদের মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়। গাড়িতে তারেক মাসুদের সঙ্গে ছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী সাংবাদিক ও বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর। দুর্ঘটনায় দুজনই মারা যান।

তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর ২০১২ সালে বিভিন্ন সময়ে লেখা তার চলচ্চিত্র সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলো একত্র করে একটি বই প্রকাশিত হয়। নাম ‘চলচ্চিত্র যাত্রা’। বইটিতে ভূমিকা লিখেছেন তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ। লেখক হওয়ার একটা টান সব সময়ই তারেক মাসুদের মাঝে ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘চলচ্চিত্রকার না হলে লেখক হওয়ার চেষ্টা করতাম।’

ঢাকা টাইমস/০৬ ডিসেম্বর/এএইচ