ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরছে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:৩৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষকদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষোভ স্থগিত করে ক্লাস ও পরীক্ষায় ফিরছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দেয় তারা।

শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র আনুশকা রায় সাংবাদিকদের বলে, ‘শিক্ষকেরা আমাদের সব দাবি পর্যায়ক্রমে মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা এখন ক্লাসে ফিরে যাব। আর যেগুলো আইনি বিষয়, সেগুলো আইনের মাধ্যমে সমাধান হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।’
অরিত্রীর আত্মহত্যা ঘটনার পর টানা তিন দিনের আন্দোলন করে ভিকারুননিসার ছাত্রীরা। গতকাল সকালে গভর্নিং বডির পদত্যাগ এবং অরিত্রীর মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার শর্ত দেয় আন্দোলনকারীরা।

দুপুর দেড়টার দিকে স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার সাংবাদিকদের মাধ্যমে অরিত্রীর বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখায় আড়াইটার দিকে কয়েকজন শিক্ষক এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় শিক্ষকদের কয়েকজনকেও ছাত্রীদের সঙ্গে কাঁদতে দেখা যায়।

একপর্যায়ে প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভেতরে নিয়ে যেতে সক্ষম হন তারা। শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে এসে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।

দাবি আদায়ের বিষয়ে আনুশকা বলে, ‘আমাদের ছয় দফা দাবি লিখিত আকারে মন্ত্রণালয়ে (শিক্ষা) দিয়েছি। যেগুলো বাস্তবায়ন করা যায় শিক্ষকেরা সেগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমাদের ১ ও ৫ নং দাবি মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট। এগুলো শিক্ষকদের আওতার বাইরে। আমরা মন্ত্রণালয়ে লিখিত দিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’

ক্ষমা চাইলেন গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান

অরিত্রীর বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার। শিক্ষার্থীদের ৬ নং দাবিটি ছিল গভর্নিং বডির সব সদস্যকে অপসারণ। এ বিষয়ে গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থে প্রয়োজনে পদত্যাগ করতেও রাজি আছেন। এ ছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

আশরাফ তালুকদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শর্ত ছিল যে গভর্নিং বডির সব সদস্যকে পদত্যাগ করতে হবে। এখন গভর্নিং বডির সব সদস্য পদত্যাগ করবেন কি না, সে বিষয়ে আমি গভর্নিং বডির সভায় এ প্রস্তাব করব যে শিক্ষার্থীদের এ অভিমত আছে। এখানে গভর্নিং বডি ভেঙে দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। সে ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করে, এই উদ্ভূত পরিস্থিতিকে পরিহার করে, সবাই মিলে আমরা আবার আমাদের পাঠ্য কার্যক্রমে চলে আসি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন সুষ্ঠুভাবে চলে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।’

গভর্নিং বডির সবাই পদত্যাগ করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগের বিষয়টি আমরা গভর্নিং বডির সভায় তুলব। এটা সদস্যদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, তারা পদত্যাগ করবেন কি না।’

শ্রেণিশিক্ষক হেনা কারাগারে

অরিত্রী অধিকারীর শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে সিএমএম কোর্ট। গতকাল সিএমএম কোর্টে হাজির করে জামিন করা হলে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আবু সাঈদ শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গত বুধবার রাতে ওই শিক্ষককে উত্তরার একটি আবাসিক হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতি শাখার প্রধান জিন্নাত আরা ও শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনার বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে র‌্যাব ও পুলিশকেও চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অরিত্রীর শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনাকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হেনার মুক্তির দাবিতে আরেকদল ছাত্রীর বিক্ষোভ

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা আসার পর শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনাকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে তার মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ করে আরেকদল শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ‘হাসনা হেনা আপা নির্দোষ’, ‘হাসনা হেনা আপার নিঃশর্ত মুক্তি চাই’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করে।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরিন হক ঢাকা টাইমসকে জানায়, ‘অরিত্রীর হত্যার প্ররোচনাকারী দোষীদের শাস্তি চাই। আমাদের শিক্ষিকা হাসনা হেনা সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমরা হাসনা হেনা আপার মুক্তি চাই।’

গত সোমবার দুপুরে অরিত্রীর আত্মহত্যার পর মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল তার সহপাঠীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতি শাখার প্রধান জিন্নাত আরা ও শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনাকে বরখাস্তের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই ঘটনায় অরিত্রীর বাবার দায়ের করা মামলায় গত বুধবার রাতে শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনাকে গ্রেপ্তার করা হয়।