বাড়তি সতর্কতা

তাবলিগের দ্বন্দ্বে নাশকতার শঙ্কা

ইফতেখার রায়হান, টঙ্গী (গাজীপুর)
 | প্রকাশিত : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:০৪

তাবলিগ জামাতে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে গত শনিবার। অরাজনৈতিক ও অহিংস এই প্লাটফর্মের কর্মীরা সেদিন টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে লিপ্ত হন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো কাটেনি সেই সংঘর্ষের জের। এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে প্রায় সারাদেশেই। তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষই রয়েছে মুখোমুখি অবস্থানে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আবারও ঘটতে পারে এ ধরনের ঘটনা।

এই দ্বন্দ্ব প্রশাসনিকভাবে মীমাংসা করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তারা এবার আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে কোনো মহল। তাদের কাছে এ ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্যও আছে। তবে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিনই বিচ্ছিন্নভাবে সড়ক-মহাসড়ক বন্ধ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করছেন তাবলিগের মুসল্লিরা। বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠকও করেছেন তারা। পরস্পরকে ঘায়েল করতে নাশকতার পরিকল্পনাও আছে তাদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্দেহভাজন ওই তাবলিগ অনুসারীদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে।

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গত শনিবার তাবলিগের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে ইসমাঈল ম-ল নামে এক মুসল্লি নিহত হন। আহত হন তিন শতাধিক। এর আগেও তাবলিগের দ্বন্দ্বে ইজতেমা ময়দানে একজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।

গোয়েন্দা বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল বিশৃঙ্খলার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকতে বলেছে সরকার।

গত শনিবারের সংঘর্ষের পর দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে তাবলিগের উভয়পক্ষ। ওই ঘটনার জন্য দুই পক্ষই একে অপরকে দায়ী করছে। আজ (শুক্রবার) বাদ জুমা টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বাইরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন টঙ্গীর উলামা মাশায়েখ ও তাবলিগের অনুসারীরা। তারা এখানে লক্ষাধিক মুসল্লির সমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

শনিবারের সংঘর্ষের পর তাবলিগের দুই পক্ষকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ র‌্যাব-পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে বসে বিষয়টি আপাতত সামাল দেন। দুই পক্ষের সম্মতিতে ইজতেমা ময়দান প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। নির্বাচন পর্যন্ত পুরো ইজতেমা ময়দান পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে ওই মীমাংসার পরেও ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন মুসল্লিরা। ময়দানের দখল নিতে উভয়পক্ষই গোপন বৈঠকে কৌশল নির্ধারণ করছেন বলে গোয়েন্দারা খবর পেয়েছেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন (জিএমপির) টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমদাদুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, শুক্রবারের বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেদিকে পুলিশের বিশেষ নজরদারি রয়েছে। তিনি জানান, তাবলিগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে। নিহত ইসমাঈল ম-লের স্বজনদের পক্ষ থেকে আরও একটি মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তাবলিগের দুই পক্ষকে নিয়ে একাধিকবার বসে মিলেমিশে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। তারপরও যদি কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :