ভারতীয় ছবি ঘন ঘন মুক্তি নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:২০ | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৩

বিনোদন প্রতিবেদক

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সাফটার আওতায় গত সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ভারতের চলচ্চিত্র ‘ভিলেন’। এটি মুক্তির এক সপ্তাহের মাথায় আজ মুক্তি পেয়েছে কলকাতার আরও এক সিনেমা ‘গার্লফ্রেন্ড’। ‘ভিলেন’ মুক্তি পেয়েছিল এন ইউ আহমেদ ট্রেডার্সের ব্যানারে আর ‘গার্লফ্রেন্ড’ আমদানি করেছে তিতাস কথাচিত্র।

ভারতীয় পুরনো ছবি মুক্তি দেয়ার কারণে প্রেক্ষাগৃহ আটকে থাকার অভিযোগ তুলেছেন দেশের কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। তারা বলছেন, এসব ছবি দর্শক টানতে পারে না। যার কারণে হলমালিকরা লোকসানে পড়ছেন। অন্যদিকে হল না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় চলচ্চিত্র। আরও অভিযোগ উঠেছে, ‘দেশের ছবি সেন্সর করতে বিলম্ব হলেও আমদানি করা ছবি সেন্সর হয়ে যায় দ্রুত। ’

পরিচালক সমিতির সভাপতি ও সেন্সর বোর্ডের সদস্য মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘আমাদের সিনেমা সেন্সর হওয়ার পর সপ্তাহ পার হলেও মুক্তি পায় না। অন্যদিকে ভারতীয় সিনেমা দুই দিনের মাথায় মুক্তি পেয়ে যায়। সাফটা চুক্তি নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি হচ্ছে ঘন ঘন বিদেশি সিনেমা মুক্তি দেয়া নিয়ে। পরপর দুই সপ্তাহে দুটি ভারতীয় সিনেমা মুক্তি দেয়া কোনো যুক্তিতে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব।’

পরপর দুই সপ্তাহে দুটি কলকাতার সিনেমা কেন দেশের প্রেক্ষাগৃহে, জানতে চাইলে সেন্সর বোর্ডের সভাপতি নাসিরুদ্দিন দিলু বলেন, ‘দেশের সিনেমা হল বাঁচিয়ে রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা যে সিনেমা বানাচ্ছি, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দর্শক। বাধ্য হয়েই আমাদের কলকাতার সিনেমা মুক্তি দিতে হচ্ছে।’

কিন্তু কলকাতার সিনেমাও মানুষ দেখছে না। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গত সপ্তাহে যেসব হলে ভারতীয় ‘ভিলেন’ চলেছে তার বেশির ভাগ আসন ফাঁকা। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নাসিরুদ্দিন দিলু বলেন, ‘যে সিনেমাটা হলে মুক্তি পেয়েছে ওটা বহু আগে মানুষ ইউটিউবে দেখে ফেলেছে। ইউটিউবে দেখা সিনেমা কেন মানুষ হলে গিয়ে দেখবে?’

সিনেমা মুক্তিতে সেন্সর বোর্ডের কোনো হাত নেই উল্লেখ করে দিলু বলেন, ‘সেন্সর বোর্ডের দায়িত্ব সব নিয়ম ঠিকঠাক আছে কি না, সিনেমার দৃশ্য নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না এসব দেখা। এসব ঠিক থাকলে আমাদের সেন্সর দিতে কোনো বাধা নেই। এখন যদি পরিবেশক পুরনো সিনেমা আনেন সেটা তার বিষয়।’

তথ্যসচিব আবদুল মালেক বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শুধু সম্পর্ক সেন্সরকেন্দ্রিক। সেন্সর দেয়া ও যাচাই-বাছাই করা ছাড়া আমাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই সাফটা চুক্তির সঙ্গে। সেন্সর বোর্ড থেকে শুধু নিয়ম মেনে সেন্সর দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের এখান থেকে কোনো গলদ নেই।’

পুরনো ছবি কেন সেন্সর দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মালেক বলেন, ‘এটা পরিবেশকের ওপর নির্ভর করে। তারা যদি পুরনো সিনেমা নিয়ে আসে, তাহলে আমাদের সেটাই সেন্সর দিতে হবে। এখন ছবিটি সিনেমা হলে চলবে কি চলবে না সেটা সম্পূর্ণ পরিবেশকের ব্যাপার।’

তবে চলচ্চিত্র আমদানিকারকরা দাবি করছেন, তারা নতুন ছবির জন্য আমদানি প্রক্রিয়া শুরু করেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ছবিটি দেশে এনে সেন্সরের পর মুক্তি দিতে দিতে পুরনো হয়ে যায়।

‘গার্লফ্রেন্ড’ চলচ্চিত্রের আমদানিকারক তিতাস কথাচিত্রের কর্ণধার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার শিকার। সাফটার নিয়ম হলো আমি একটা সিনেমা ওদের দেব, ওরাও একটা সিনেমা আমাদের দেবে। একটা সিনেমা রপ্তানির জন্য সব কাগজপত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য চলে যায় দেড় মাসের মতো সময়। কখনো তারও বেশি। এ রকম অবস্থায় আমাদের পুরনো সিনেমা আদান-প্রদান করতে হয়। তাতে আমাদের লাভ কিছুই হচ্ছে না। এই জটিলতা কাটিয়ে যদি একটা সিনেমা দুই দেশে একসঙ্গে মুক্তি পায় তাহলে হয়তো আমরা লাভবান হব।’