কাঁটাতারের বেড়া: ছুঁয়ে দেখার বাসনা স্বজনদের

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:১১ | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:১৬

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার পাথরকালী পূজা উপলক্ষে চাঁপাসা ও কোচল সীমান্তে বসেছিল দুই বাংলার মিলন মেলা। 

শুক্রবার সকাল থেকে হাজারো নারী-পুরুষ-শিশু ঠাকুরগাঁও জেলার কোঁচল ও চাঁপাসার এবং ভারতের নাড়গাঁও ও মাকারহাট সীমান্তে ছুটে আসেন প্রিয়জনের রক্তের টানে। শেষ পর্যন্ত আলাপচারিতার সুযোগ পেলেও পরস্পরে ধরে বা ছুঁয়ে দেখা প্রত্যাশা পূরণ হয়নি অনেকের।

বর্ষপুঞ্জিকা অনুযায়ী হিন্দু সম্প্রদায় প্রতি বছর শ্রী-শ্রী জামর কালির জিউ (পাথরকালী) পূজা ও মেলা উদযাপন করে থাকেন। আর এ পূজা উপলক্ষে প্রতি বছরে এই দিনে দূরদুরান্ত থেকে দুই দেশের স্বজনরা ভিড় জমায় ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা চাপাসার ও রানীশংকৈল উপজেলার কোচল সীমান্তের ৩৪৫ ও ৩৪৬ নং পিলার এলাকায়।

সকাল থেকে হাজারো মানুষ তারকাটার দুই পাশে সমবেত হলেও প্রথমে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী অনুমতি দেয়নি। কিন্তু দুপুর ১২টা নাগাদ মানুষের ঢল বেড়ে গেলে সীমান্ত রক্ষীরা আর সামলাতে পারেননি। হাজার মানুষ তাদের স্বজনদের টানে ছুটে যায় তার কাটার বেড়ার কাছে। তারকাটার গেট না খুললেও তারকাটার এপারে-ওপারে দাঁড়িয়ে স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের সাথে করে আলাপচারিতা ও ভাববিনিময়।  দীর্ঘদিন পর প্রিয়জনকে এক নজর দেখতে পেয়ে আগতরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। মনের ভেতর জমিয়ে রাখা হাজারো সুখ-দুঃখের কথা বিনিময় করলেও কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরতে পারেনি তারকাটার বেড়ার কারণে। তারপরও তারকাটার উপর দিয়ে প্রিয়জনকে উপহার সামগ্রী ছুড়ে দেন আগতরা। পরস্পরের মাঝে  আদান-প্রদান হয় নানা রকমের খাদ্য ও উপহার  সামগ্রী।

নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে এসেছিলেন মরিয়ম বেগম তার ছোট বোন সেফালীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। শেফালী ভারতের মালদা জেলার চানমুনী গ্রামে বসবাস করে তার স্বামী-সন্তান নিয়ে। ১৬ বছর পূর্বে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর এই প্রথম বোন ও বোনের স্বামীর দেখা পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মরিয়ম বেগম। শেষে  বোন ও বোনের ছেলে-মেয়ে ও স্বামীকে কাপড় এবং উপহার দেন। 

দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার প্রতীমা রাণী এসেছিলেন, ২০ বছর আগে আমার ছোট মেয়ে তার ছোট মেয়ে কমলারাণীর সঙ্গে দেখা করতে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে  ভারতের গোয়ালপুকুর থানার পাঁচঘরিয়া গ্রামে। বিয়ের পর দীর্ঘদিন আলাপচারিতা হয়নি। মেয়ের সাথে তারকাটার এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে  অনেকক্ষণ কথা বলেন। কিন্তু তার প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তিনি কান্না সজল চোখে বলেন, যদি একবার  মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের ছুঁয়ে দেখতে পারতাম।

এ ব্যাপারে শ্রী-শ্রী জামর কালির জিউ (পাথরকালী) পূজা কমিটির সভাপতি নগেন কুমার পাল বলেন, এবার স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি ও বিএসএফর পক্ষ থেকে সীমান্তে কঠোর নজরদারি থাকা সত্ত্বে¡ও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দু-দেশের স্বজনরা সহজেই তারকাটার এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে আলাপচারিতার সুযোগ পেয়েছেন। 

হরিপুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান বলেন,  কড়া প্রহরা সত্ত্বেও অনেকে তারকাটার এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে কথা বলেছেন ও খাদ্য বিনিময় করেছেন।

হরিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘হরিপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পাকিস্তাান-ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধীনে ছিল। এ কারণে দেশ বিভাগের পর আত্মীয় স্বজনেরা দুই দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সারাবছর এদের সঙ্গে দেখা করতে পারে না। অপেক্ষায় থাকে এই দিনের জন্য।

(ঢাকাটাইমস/৭ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)