ভিকারুননিসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং

প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:০৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সংকট কাটিয়ে উঠতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বুধবার প্রথম বারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তায় বেইলি রোডে মূল ক্যাম্পাসে দুই ঘন্টা ব্যাপী মানসিক পরামর্শ প্রদান করা হয়।

কাউন্সেলিংয়ের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে মোমবাতি প্রজ্জ্ব¡লন করে সারিবদ্ধ করে দাঁিড়য়ে থাকেন। সিটে বসা শিক্ষকরা উঠে এসে শিক্ষার্থীদের হাতে হাত রেখে পরম ¯েœহ আর মমতার দৃষ্টিতে নতুনভাবে একে অপরকে বরণ করে নেয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক ছাত্রীকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। উভয়ের মধ্যে দূরত্ব গোচাতে এবং মমত¦বোধ বাড়াতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মানসিক শক্তি বাড়াতে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে মনোজগতের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্যাখ্যা করেন বিশেষজ্ঞরা। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার দূরত্ব ঘোঁচাতে প্রতিজ্ঞাবন্ধ হন তারা।  

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি মোশতারি সুলতানা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সম্প্রতি নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যা করার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ, আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরছে বলে মনে করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাউন্সেলিং করানো হয়েছে। এ কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মানসিক শক্তি বাড়বে, শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচবে। ভেতরে জমা বেদনা-দুঃখ ভুলে নতুনভাবে নিজেকে চিনতে শিখবে। নতুন করে শিক্ষক, অভিভাবক, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে।’

জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হাসিনা বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সকল ব্রাঞ্চের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে কাউন্সেলিং করানো হবে। প্রথমে মূল ব্রাঞ্চের স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ৬ জন সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষক কাউন্সিলিং করাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে সকল ব্রাঞ্চে বিশেষজ্ঞ একটি দল গিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। প্রতি মাসে একবার করে কাউন্সেলিং কার্যক্রম করা হবে বলেও জানান অধ্যক্ষ।

অধ্যক্ষ জানান, ‘আমরা আমাদের পরবর্তী গভর্নিং কমিটির বৈঠকে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগের প্রস্তাব তুলবো। দুইজন মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেয়া হবে স্থায়ীভাবে। এটা চূড়ান্ত হলে আমাদের আর সমস্যা হবে না।’

কাউন্সেলিং করে কি শিখলো শিক্ষার্থীরা জানতে চাইলে স্কুল পর্যায়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জানান, আজ নতুন করে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। জীবনে সকল দুঃখ-কষ্ট ও হতাশ কী ভাবে ভুলে এগিয়ে যাওয়া যাও তা শেখানো হয়েছে। আঘাত পেলে উত্তেজিত না হয়ে কিভাবে শান্ত ও স্বাভাবিক থাকা যায় সেটিও আমাদের শেখানো হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে তাদের কাজে আসবে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।

জানতে চাইলে স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীরা। তারা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। আমরা সম্মিলিতভবে এগিয়ে যাবো। কোন বাধা থাকবে না। আমরা মনোবিজ্ঞানী এনেছি। তারা শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং করেছে। এতে শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ^াসী হয়ে উঠেছে।’

জানতে চাইলে অভিভাবক প্রতিনিধি তিন্না খুরশীদ জাহান মালা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জীবনে জয়-পরাজয় থাকবে। সকল বাঁধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়- সেই বিষয়গুলো উঠে এসেছে কাউন্সিলিং এ। ছাত্রীরা বিষয়টি দারুণ উপভোগ করেছে। এটি শিক্ষার্থীদের মনোজগতকে পরিশালিত করবে বলে আমার মনে হয়।’

কাউন্সেলিং কার্যক্রম পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের চারজন শিক্ষক ও ভিকারুননিসা স্কুল এন্ড কলেজের দুই শিক্ষক। তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. মেহজাবীন হকের নেতৃত্বে অধ্যাপক শাহিন ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ফেরদৌসি, প্রভাষক উম্মে কাউসার লতাসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুইজন শিক্ষক রয়েছেন। কাউন্সিলিং অনুষ্ঠানে স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার, স্কুলটির অভিভাবক প্রতিনিধি তিন্না খুরশীদ জাহান মালাসহ কমিটির অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/১২ডিসেম্বর/এমএম/ডিএম