হিমালয়ের ছায়ায় হুমকিতে নেপালিরা

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:৪৩

ঢাকা টাইমস ডেস্ক

হিমালয়ের হিমবাহ গলে যাবার হার বেড়ে যাওয়ায় পর্বতমালার পাদদেশে ইমজার মতো লেকগুলো আরো এমনভাবে ফুলে ফেঁপে উঠবে যে বন্যায় তলিয়ে যেতে পারে নেপালের একাংশ।  এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
পরিবেশবিদদের ধারণা, এই বন্যায় পানি, কাদা ও পাথরের ঢল নামতে পারে।  সেই ঢল নেপালের দক্ষিণাঞ্চলের জনঅধ্যুষিত সমতল, রাস্তাঘাট, গ্রাম, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে।  পরিবেশবিজ্ঞানী অরুন ভক্ত শ্রেষ্ঠ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘দিন দিন ঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে।  এই ভূখ-ে বাড়ছে মানুষ, বাড়ছে অবকাঠামো।’ 
গত কয়েক দশকে হিমালয়ের বরফ গলা পানিতে শত শত লেক তৈরি হয়েছে।  ২০১৪ সালের এক জরিপ বলছে, ১৯৭৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৪৬৬টি লেক তৈরি হয়েছে।  এর মধ্যে ২১টি বিপজ্জনক। 
নেপালের পানি ও আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের মহাপরিচালক ঋষি রাম শর্মা বলেন, ‘ছোট দেশ হিসেবে হিমবাহ থেকে যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তার খুব অল্পই আমাদের ঠেকানোর সামর্থ্য আছে। ’ 
বিপজ্জনক লেকগুলোর একটি সুর্কে গ্রামের ইমজা।  অদ্ভুত সুন্দর এই লেকটি এক সময় বিপজ্জনক ছিল না।  ১৯৮০ সালে লেকটি অনেক ছোট ছিল।  ২০১৪ সাল নাগাদ এর আয়তন বেড়েছে তিনগুণ।  ৫০১০ মিটার উঁচুর এই লেকটির পানি খুব বেশিদিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে বলে মনে করছেন না পরিবেশবিদরা। 
২০১৫ সালে নেপাল ভূমিকম্পের সময় সুর্কে গ্রামের অধিবাসীরা ধরেই নিয়েচিলেন যে, লেকটি থেকে পানি উপচে পড়বে এবং তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।  গ্রামের অধিবাসী ফুদোমা শেরপা বলেন, ‘আমরা তো ভয়ে দৌঁড়ই দিয়েছিলাম। ’ তবে আশ্চর্যজনকভাবে লেক থেকে পানি গড়ায়নি।  ১২ হাজার মানুষ বেঁচে গেছেন। 
কিন্তু এই ভূমিকম্পে নড়ে চড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ।  এখন খোঁজা হচ্ছে কীভাবে এই সংকট মোকাবেলা করা যায় তার উপায়।  এরই মধ্যে লেকের পানি সরিয়ে নেবার বিশাল যজ্ঞ শুরু করা হয়েছে।  একটি চ্যানেল দিয়ে পঞ্চাশ লাখ কিউবিক মিটার পানি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।  এতে লেকের পানির উচ্চতা কমেছে সাড়ে তিন মিটার। 

তবে এ ধরনের প্রকল্পের খরচ অনেক।  হিসেব করে দেখা গেছে, পানি সরিয়ে নেয়ার এই প্রকল্পের খরচ ৭৪ লাখ মার্কিন ডলার।  গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি নামের একটি আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে প্রকল্পের ৮০ ভাগ খরচ দেয়া হয়েছে।  বাকিটা দিয়েছে ইউএনডিপি। 

তবে শুধু লেক ইনজাই নয়, এমন অসংখ্য লেক নেপালের জন্য বিরাট আকারের পরিবেশ সংকট তৈরি করছে।  এ থেকে বের হবার জন্য নেপালকে আরও বড় আকারে প্রতিরক্ষা ও অভিযোজন প্রকল্প নেওয়া দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।