দেশের মুক্তিযোদ্ধা তারকারা

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:২৪

আরিফ হাসান, ঢাকা টাইমস

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন বাংলার আপামর জনতা। ডিজিটাল এই যুগে স্বাধীনতার সেই ইতিহাস ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। তার পরও হয়তো অনেকের অজানা যে, সেই আপামর জনতার মধ্যে ছিলেন অভিনয় ও সঙ্গীত জগতের জনপ্রিয় কয়েকজন তারকাও। যারা অস্ত্র হাতে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ছিনিয়ে এনেছিলেন দেশের স্বাধীনতা। 

ফারুক: আসল নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু। চলচ্চিত্রে তাকে সবাই ফারুক নামে চেনেন। ১৯৬৬ সালে তিনি যোগ দেন ছয় দফা আন্দোলনে। পরে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার বছরেই এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ফারুকের অভিনয়ে যাত্রা শুরু হয়।লাঠিয়াল, সুজন সখী, নয়নমনি, সারেং বৌ, গোলাপী এখন ট্রেনে, এবং মিয়া ভাই’সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

জসিম: স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন প্রয়াত অ্যাকশন হিরো জসিম। ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তিনি মারা যান। ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ ছবির মাধ্যমে জসিম অভিনয়ে এসেছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রে অ্যাকশন হিরোদের পথিকৃত তিনি।

সোহেল রানা: শিক্ষা জীবনে ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন নায়ক সোহেল রানা। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন। অভিনয় করেন কাজী আনোয়ার পরিচালিত ‘মাসুদ রানা’ ছবিতে। অ্যাকশন ছবির নায়ক হিসেবে তারও খুব সুনাম রয়েছে। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

জাফর ইকবাল: আশির দশকের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পী জাফর ইকবাল। দেশের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন। অভিনয়ে আসেন তার পরেই। তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম স্টাইলিস্ট হিরো বলা হয়। তার সঙ্গে ববিতার জুটি ছিল দর্শকনন্দিত। ১৫০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। মারা যান ১৯৯২ সালে।

আসাদুজ্জামান নূর: অভিনেতা ও বর্তমান সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। নব্বইয়ের দশকে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘আগুনের পরশমনি’ ছবিতে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকায় অভিনয়ও করেন। পাশাপাশি অভিনয় করেছেন বহু নাটকেও।

সৈয়দ হাসান ইমাম: স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম। ১৯৬০ সাল থেকে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে আসেন টেভির পর্দায়ও। অভিনয় করে যাচ্ছেন এখনও। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর হাসান ইমাম মুজিব নগরের চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

আজম খান: বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সংগীতের সম্রাট বলা হয় তাকে। পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। কিন্তু সঙ্গীত জগতে তিনি আজম খান নামে পরিচিত। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ১৯৭১ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে দেশের জন্য অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। সে সময় ঢাকায় সংঘটিত কয়েকটি গেরিলা অভিযানে তিনি অংশ নেন।

আব্দুল জব্বার: বাংলাদেশের কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী আব্দুল জব্বার। তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও গানের মাধ্যমে সে সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। এ জন্য তাকে কণ্ঠযোদ্ধা বলা হয়। ১৯৭১ সালে তিনি ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ অনেক মুক্তিযুদ্ধের গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন। তার গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

ঢাকা টাইমস/১৬ ডিসেম্বর/এএইচ