বড়লোক হতে গৃহশিক্ষক খুন করেন রাকিনকে

প্রকাশ | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:০০ | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় না হওয়ায় গলাটিপে হত্যা করা হয় স্কুলছাত্র সাদমান ইকবাল রাকিনকে। ঘৃণ্য এই কাজটি করেন তারই গৃহশিক্ষক পারভেজ শিকদার ও তার সহযোগী ফয়সাল আহমেদ। হত্যার পর তারা মরদেহ বাঁশ বাগানে পুঁতে রেখেছিলেন। ফ্লেক্সিলোডের একটি নম্বরের সূত্র ধরে এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে র‌্যাব। সোমবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।

গত ৫ ডিসেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের ফাউগানপুরের বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয় ফাউগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদমান ইকবাল রাকিনকে। ওই দিন সন্ধ্যায় রাকিনের বাবা সৈয়দ শামীম ইকবালের কাছে মোবাইল ফোনে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। কিন্তু টাকা দিতে দেরি হওয়ায় তাকে হত্যা করে মরদেহ পাশের বাঁশ বাগানে পুঁতে রাখা হয়।
১১ ডিসেম্বর পুলিশ রাকিনের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পর হত্যার রহস্য উদঘাটনে নামে র‌্যাব-১।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, ‘অপহরণকারী পারভেজ রাকিনের গৃহশিক্ষক ছিলেন। প্রতিবন্ধি বাবা এবং দুই ভাই-বোন ও পরিবারের খরচ যোগাতে তিনি রাকিনকে প্রাইভেট পড়াতো। পারিবারিক অসচ্ছলতা দূর ও দ্রুত বড় লোক হওয়ার আশায় পারভেজ অপহরণটি করেন। কিন্তু অপহরণের টাকা না পাওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়। ঘটনার সঙ্গে তার বন্ধু ফয়সাল আহমেদ জড়িত ছিলেন।’

‘গত দুই বছর ধরে রাকিনকে পারভেজ প্রাইভেট পড়াতেন।  মোটা অঙ্কের টাকার আশায় ছয় মাস আগে রাকিনকে অপহরণ ও মুক্তিপণ চাওয়ার উদ্দেশ্যে ওই বাড়ি থেকে রাকিনের মায়ের মোবাইল চুরি করেন। পারভেজের পরিকল্পনা ছিল, অপহরণের পর ভিকটিমের মায়ের মোবাইল থেকে মুক্তিপণ চাইলে খুব সহজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দেওয়া যাবে। বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ক সিনেমা-নাটক বিশেষত ক্রাইম পেট্রোল দেখে তিনি এই অপহরণের পরিকল্পনা করতে থাকেন। এমনকি মোবাইলের কল ডিটেইলস থেকে ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকায় ছয় মাস আগে থেকে মোবাইল বন্ধ রেখেছিলেন এবং অন্য কোথাও কলও করেননি।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিন বিকালে রাকিনকে পাখি দেখানোর কথা বলে একটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে আটকে রাখা হয়। মুক্তিপণ পেতে দেরি ও জঙ্গলের ভেতরে রাকিনকে বেশিক্ষণ আটকাতে ব্যর্থ হওয়ায় তৎক্ষণিক হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তারা। প্রথমে ফয়সাল ভিকটিমকে মাটিতে ফেলে গলা টিপে ধরেন। পরে পারভেজ তার শরীরের ওপর বসে গলাটিপে হত্যা করেন।


যেভাবে দুজন গ্রেপ্তার
মুক্তিপণ চাইতে ছয় মাস আগে রাকিনের মায়ের যে মোবাইলটি চুরি করেছিলেন পারভেজ, সেটাতে টাকা ছিল না। ঘটনার দিন স্থানীয় একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকান ২০ টাকা ফ্লেক্সিলোড করেন তিনি। পরে ওই দোকানের ডাস্টবিন থেকে নম্বরের একটি চিরকুট পায় র‌্যাব। যেটি স্থানীয়দের হাতের লেখার সঙ্গে মেলাতে সংগ্রহ করা হয়। হত্যাকাণ্ডের স্থানে একটি সিগারেটের প্যাকেটও পাওয়া যায়। যে ব্র্র্যান্ডটি স্থানীয়দের মধ্যে কারা ধূমপান করেন, সেটিও চিহ্নিত করা হয়। পরে র‌্যাব রাকিনের বাবার সঙ্গে কথা বলে ৫-৬ জনের তালিকা তৈরি করে। তালিকা অনুসারে কয়েকজনকে ধরা হলেও ব্যর্থ হয় র‌্যাব। পরে ফয়সালের সঙ্গে চিরকুটের লেখার মিল পাওয়ায় প্রথমে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে পারভেজকে গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব সদস্যরা।

(ঢাকাটাইমস/১৭ডিসেম্বর/এসএস/এআর)