পাঁচ আসনে বিএনপির প্রার্থী শূন্য

প্রকাশ | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:৪৪ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:৫৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশন বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া বিএনপির ছয় জন নেতার ভোট আটকে গেল উচ্চ আদালতের আদেশে। এদের মধ্যে একটি আসনে বিএনপির একজনকে অবৈধ ঘোষণা করে অন্য একজনকে প্রতীক দিতে বলা হয়েছে। বাকি পাঁচ আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থীই নেই।

এরা হলেন ঢাকা-১ আসনের খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা-২০ আসনের তমিজ উদ্দিন, মানিকগঞ্জ-৩ আসনের আফরোজা খান রিতা, বগুড়া-৩ আসনের আব্দুল মোহিত তালুকদার, বগুড়া-৭ আসনের মোরশেদ মিল্টন এবং রাজশাহী-৫ আসনের নাদিম মোস্তফা।

 প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে বিএনপির তিন প্রার্থী তমিজ উদ্দিন, মুহিত তালুকদার ও আফরোজা খান রিতার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও প্রবীর নিয়োগী। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সানজিদ সিদ্দিকী।

সানজিদ সিদ্দিক বলেন, আপিল বিভাগের আদেশের ফলে বিএনপি মনোনীত এ তিন প্রার্থী আর নির্বাচন করতে পারছেন না।

আবু আশফাক

 

নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাকের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার আগেই তিনি ঢাকা-১ আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করলেও আপিলে ফিরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন।

 

তবে কমিশনের সিদ্ধান্তÍ চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন বিকল্প ধারার জালাল উদ্দিন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন শামীম আহমেদ মেহেদী ও আব্দুল কাইয়ুম।

আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছিল। নির্বাচন কমিশনের ওই সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট স্থগিত করে দিয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত হওয়ায় আশফাক আপাতত আর নির্বাচন করতে পারছেন না।’

তজিম উদ্দিন

ঢাকা-২০ আসনে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণায় নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেনজির আহমেদ। শুনানি শেষে ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তমিজ উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণায় ইসির সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। এ কারণে আটকে যায় তমিজ উদ্দিনের নির্বাচনে অংশ নেওয়া।

এই আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করেন তমিজ উদ্দিন। চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন। ফলে তমিজ উদ্দিনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ খুলে যায়। তবে গতকাল শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ চেম্বার বিচারপতির দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে তমিজের উদ্দিনের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের পথ আবার আটকে যায়।

আফরোজা খান

মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঋণ খেলাপী হওয়ার পরও তার মনোনয়নপত্র গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেয় নির্বাচন কমিশন। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে সোনালী ব্যাংক। হাইকোর্ট রিতার মনোনয়নপত্র স্থগিত করে। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে গতকাল আপিল বিভাগ কোনো আদেশ (নো অর্ডার) দেননি। ফলে আগামী নির্বাচনে রিতাও অংশ নিতে পারছেন না।

মুহিত তালুকদার

বগুড়া-৩ আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আবদুল মুহিত তালুকদার হাইকোর্টে রিট করেন। এরপর গত ৯ ডিসেম্বর তার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে ইসিকে নির্দেশ আসে। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে ইসি আবেদন করে আপিল বিভাগে। শুনানি নিয়ে ১১ ডিসেম্বর চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। শুনানি নিয়ে গতকাল আপিল বিভাগ চেম্বার বিচারপতির দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রাখে।

মোরশেদ মিল্টন

 

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে বিএনপির এই প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করেছে হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।

 

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। তার সঙ্গে ছিলেন সেলিনা আক্তার।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন মিলটন। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ না করায় তার মনোনয়ন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছিন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পান নির্বাচন কমিশন থেকে।

তবে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ সঠিকভাবে হয়নি দাবি তুলে রিট করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস আরা খান।

নাদিম মোস্তফা

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে বিএনপির ‘চূড়ান্ত’ মনোনয়ন পেয়েছিলেন দুই জন। প্রথমে নজরুল ইসলাম ম-ল এবং সবার শেষে নাদিম মোস্তফা।

শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে নজরুল সরে দাঁড়ালেও তিনি নাদিমের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন।

গতকাল শুনানি শেষে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ নাদিম মোস্তফার প্রার্থিতা বাতিল করে নজরুলকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়।