যেভাবে ডাইনোসরের সমাধি পেয়েছিলেন মেষপালক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:০৭ | প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:০৩

এই গল্পটি এক মেষপালকের। এতে আরও আছেন একজন ভূগোল শিক্ষক এবং পেনশনের টাকায় নিজের খরচা চালানো আরেকজন প্রৌঢ়। মেষ পালকের নাম ডুমাঙ্গে তৈয়বেকা। মূলত তিনিই সন্ধান দিয়েছেন ২০০ মিলিয়ন বা দুই হাজার বছরের পুরনো সেই ডাইনোসরের কঙ্কালের। দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের ক্ষেমেগা গ্রামে ঘটেছে এই ঘটনা। ডাইনোসরের সমাধি আবিষ্কারের পর থেকে নিজের লোকালয়ে রীতিমতো নায়ক বনে গেছেন ৫৪ বছর বয়সী তৈয়বেকা। ডাইনোসরের সমাধি খুঁজে পাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার বংশের পূর্ব পুরুষ অর্থাৎ আমার দাদার বাবা ও মায়ের কবর ছিল এখানটায়। আর আমার ওপরে ছিল সেগুলো দেখভাল করার ভার। একদিন কবর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার সময় হঠাৎ নজরে এলো বিরাটকার একটা হাড়। এরকম হাড় আমি জীবনের দেখিনি।’

এ আবিষ্কারের আরেক নায়ক জেমস রেলেন বলেন, ‘শৈশবে আমরা ডাইনোসরের গল্প শুনেছি। কিন্তু তখন আমরা জানতাম যে, ডাইনোসরের গল্প হচ্ছে এক ধরনের রূপকথা। তবে ১৯৮২ সালে কিছু বই পড়ার পর আমার মনে হল, ডাইনোসর আসলে কল্পকাহিনী নয়, এটি বাস্তব। সেই থেকেই ডাইনোসরের অস্তিত্বের সন্ধান করেছি আমি। এই আবিষ্কারের অংশ হতে পেরে আমার যে কী আনন্দ হয়েছে তা আর বলে বোঝানো যাবে না। এই ক্ষুদ্র গ্রাম নিয়ে একদিন বই লেখা হবে। আর সারা দুনিয়া তখন জানবে আমাদের।’

এমনকি এখানকার স্থানীয় উন্নয়নেও এটি বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন জেমস রেলেন। ডাইনোসরের ফসিল বা জীবাশ্ম খুঁজে বের করা তিনজনের আরেকজন হলেন থেম্বা জিকাজিকা। তিনি পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূগোল শিক্ষক। জিকাজিকা বলেন, ‘কঙ্কালটা পেয়ে তারা সেটি আমার কাছে নিয়ে আসে। তখন সেটিকে আমি জানাই যে, এটি একটি ফসিল।’

২০১৮ এর শুরুর দিকে এই গ্রামে এক দল প্রতœ-জীবাশ্মবিদ কয়েক সপ্তাহ ধরে ডাইনোসরের সমাধিতে খনন কাজে অংশ নিয়েছে। এই দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক জোনাহ কোইনিয়ের। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন প্রথম ওই জায়গাটা দেখতে যাই, সেটি ছিল দারুণ ব্যাপার। মনে হচ্ছিল সবখানেই ছড়ানো ছিল ডাইনোসর।’

সামনের বছর আবার তারা এই গ্রামে আসবেন এবং এই কঙ্কাল ও হাড়গুলোকে জোহানসবার্গে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করবেন বলেও জানান তিনি। যেখানে এই কঙ্কাল মিলেছে সেই জায়গাটি একেবারে পতিত ভূমি। কোনও গাছপালা কিছুই নেই সেখানকার প্রায় ১২ মাইলের মধ্যে। ধারণা করা হচ্ছে যে, শতশত প্রতœ-জীবাশ্ম সেখানে রয়েছে। আর এগুলো এসেছে অন্তত ১২ জাতের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদখেকো সরোপোডোমর্ফ ডাইনোসর থেকে। যে হাড়টা পাওয়া গেছে তা দেখে অনুমান করা হচ্ছে যে, প্রাণীটি অন্তত ২৬ ফিট লম্বা আর এক টন ওজন ছিল।

আজ থেকে প্রায় ১,৪৫০ বছর থেকে ২,০০০ বছর আগে জুরাসিক যুগে লম্বা গলার, দীর্ঘ শরীরের এই ডাইনোসরগুলো পাওয়া যেত। গবেষণায় এই জায়গা থেকে আরও দারুণ তথ্য আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে গবেষণা সম্পন্ন করতে সময় লাগতে পারে বছরের পর বছর।

ইতোমধ্যেই এই প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত নবীন গবেষক চেবিসা ম্ডেকাজি। নদীর শুকনো রেখা ধরে হাঁটতে হাঁটতে তিনজন স্থানীয় পুরুষ বলছিল, এই জায়গাটিকে ঘিরে তাদের বিরাট স্বপ্নের কথা। তারা চায় এই স্থানটিকে ইউনেস্কোর ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হোক। যদি তা করা হয় তাহলে গবেষক ও পর্যটকেরা এখানে আসবে। এর ফলে চাঙ্গা হয়ে উঠবে এখানকার স্থানীয় অর্থনীতি।

আর মেষপালক তৈয়বেকা মনে করেন, এই স্থান এখানকার তরুণ প্রজন্মের জীবনটাই পাল্টে দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমার কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। কিন্তু এই ডাইনোসরগুলো পাওয়ায় আমাদের সন্তানেরা বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান পড়ায় আগ্রহী হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৭/ডিসেম্বর/একে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতায় চরম বিশৃঙ্খলা, যাত্রীদের দুর্বিষহ অবস্থা

ইসরায়েলি হামলায় গাজা একটি ‘মানবিক নরকে’ পরিণত হয়েছে: গুতেরেস

ইরানের ওপর ফের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা

যে কারণে ৩০ এপ্রিলের আগে ইরানে হামলা চালাবে না ইসরায়েল

ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ২৮ কর্মীকে বরখাস্ত করলো গুগল

আমিরাতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত, দুবাই বিমানবন্দরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা

ভারতে প্রথম দফায় লোকসভা নির্বাচন শুরু শুক্রবার

ইরানের হাতে রাশিয়ার এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা!

নেসলের বেবিফুডে অতিরিক্ত চিনি  

ইসরায়েল আত্মরক্ষার জন্য সবকিছু করবে: নেতানিয়াহু 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :