ভালো নেই বাংলা গান
সাবিনা ইয়াসমিন। বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি। অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের এই গায়িকা এবার আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন কলকাতার ‘বাংলা উৎসব’-এ। আসছে বছরের ৪ জানুয়ারি শুরু হয়ে এ উৎসব শেষ হবে ৬ জানুয়ারি। এর আগে ২ জানুয়ারি কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন দুই বাংলার প্রিয় এই গায়িকা। বাংলা উৎসব সম্মাননা সামনে রেখে ঢাকা টাইমস মুখোমুখি হয়েছিল সাবিনা ইয়াসমিনের। তিনি জানালেন গান নিয়ে তার ভাবনা ও আক্ষেপের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুদ্র রুদ্রাক্ষ।
ওপার বাংলায় আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন, কেমন লাগছে?
যেকোনো অর্জনই তো আনন্দের। ভালো কাজের মূল্যায়ন হলে মানুষের আগ্রহ বাড়ে। পরবর্তী কাজ আরও ভালো করার একটা তাড়না তৈরি হয়।
বর্তমান সময়ের বাংলা গানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
তেমন একটা শুনি না।
কেন? অভিমান থেকে বলছেন এ কথা?
অবশ্যই, আমি একজন গানের মানুষ। একজন গানের মানুষ যখন বলেন যে, তিনি গান শোনেন না তখন বুঝে নিতে হয় ভালো নেই বাংলা গান।
বিষয়টা নির্দিষ্ট করে যদি বলতেন...
দেখুন আগে আমরা যেসব গান শুনতাম তা দিনের পর দিন গেঁথে থাকত আমাদের মনের মধ্যে। অনেক পুরনো গান আমি এখনো গুনগুন করে গাই। কিন্তু বর্তমান সময়ের গান ‘এই শুনলাম এই ভুলে গেলাম’ অবস্থা। আমার তো মনেই নেই শেষ কোনো বাংলা গানের সুর বা কথা আমাকে আন্দোলিত করেছিল। এটা একটা দেশের গানের দৈন্যের প্রতিফলন।
যে দেশে সাবিনা ইয়াসমিনরা জন্মেছেন, সেই দেশের গানের এই দশার কারণ কী বলে মনে হয় আপনার?
দেখানোর প্রবণতা। এখন চারদিকে অজস্র টেলিভিশন চ্যানেল। আমাদের তরুণরা ডাক পেলেই চলে যাচ্ছে গান করতে। টিভিতে দেখা যাচ্ছে তাকে- এই হলো তার আনন্দ। অথচ গান শিখতে হয় দিনের পর দিন। গান একটা সাধনা। এটা আমাদের তরুণদের মাথায় ঢোকাতে ব্যর্থ হয়েছি।
এই অবস্থা পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা কি রাখবেন?
চেষ্টা তো করে যাচ্ছি। সামনে যাকে পাচ্ছি, তাকেই বোঝাচ্ছি। ‘গানটা শেখ বাবা। গান আর অভিনয় এক জিনিস না। যদি টিভিতে নিজেকে দেখানোর এতই আগ্রহ থাকে তাহলে গানের পাশাপাশি অভিনয়টা কর; কিন্তু পরিপূর্ণভাবে গান না শিখে টেলিভিশন চ্যানেলে যেও না।’ এ রকমটা বলি আমি অনেককেই। কেউ শোনে, কেউ শোনে না।
গান নিয়ে আপনার এখনকার ব্যস্ততাটা শুনতে চাই?
আমি আলতাফ মাহমুদ ভাইয়ের কিছু গান নিয়ে কাজ করছি। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ সেগুলো আসবে।
ব্যান্ডের গান প্রজন্মকে আধুনিক গানবিমুখ করেছে- এ রকম অভিযোগ ওঠে মাঝে মাঝে। এটা কীভাবে দেখেন?
ব্যান্ডের গানও তো বাংলা গান। আমি এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন মনে করি। এর আগেও বেশ কয়েক জায়গায় এ রকম কথা শুনেছি; কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এ রকম বাহাস অবান্তর। আমাদের এখানে অনেক ব্যান্ডের গান হয়েছে, যা আমি গুনগুন করে গাই।
দেশের প্রিয় তিন ব্যান্ডশিল্পীর নাম বলতে বললে কাদের নাম বলবেন?
জেমস, আইয়ুব বাচ্চু আর আজম খান। এই তিনজন শুধু ব্যান্ডশিল্পীই না, যোদ্ধা। এরা রীতিমতো যুদ্ধ করে আজকের ব্যান্ডসংগীতকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন।
ফোক গানের ক্ষেত্রে কাদের নাম প্রথমে নেবেন?
আব্দুল আলীম ও নীনা হামিদ।
নিজের প্রিয় গানের তালিকায় কোনগুলো সবার আগে রাখবেন?
মায়ের কাছে তো সব সন্তানই প্রিয়। বড় থেকে ছোট সন্তান- এ রকম ক্রমে সাজাতে বললে বলব, ‘কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিল না’, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’ ইত্যাদি।